Climate Change : অতীত ভুললে চলবে না, জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে অর্থনৈতিক ভাবে কতটা তৈরি বিশ্ব?
Climate Change : করোনা আমাদের শিখিয়েছে যে আমাদের বিশ্বকে বাঁচাতে একত্রিত হতেই হবে। তবে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি যে বৈশ্বিক বিপর্যয় রুখতে অক্ষম তা ফুটে উঠেছে করোনাকালে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে সব দেশকেই নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিভিন্ন দেশের। তবে এই বিশ্ব উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে অর্থনৈতিক কাঠামোতে আনতে হবে বদল। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন নীতিগত পরিবর্তন। এই আবহে করোনা ভাইরাস যেন সাপে বর হয়ে এসেছে। বিশ্বের দেশগুলি এই আবহে একত্রিত হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আলোচনা করার জন্য। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এক সঙ্গে মিলে একটি পথ নির্ধারণ করছে দেশগুলি। তবে এর জন্য প্রয়োজন নীতিগত পরিবর্তন। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর এর চাপ অনেক বেশি পড়তে চলেছে। পাশাপাশি কার্বন নির্গমন কমাতে যে ‘কার্বন কর’-এর কথা ভাবা হচ্ছে, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। এই কর কাদের ঘাড়ে চাপবে? যারা উৎপাদন করছে নাকি যারা সেগুলি ব্যবহার করছে?
যদি ব্যবহারকারীদের উপর কর চাপানো হয়, তাহলে উন্নত দেশগুলিকে এর বোঝা বইতে হবে। তবে যদি উৎপাদনকারীদের উপর কর ধার্য করার কথা ওঠে, তাহলে ভুগতে হবে ভারত, বাংলাদেশ, চিনের মতো দ্বিতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে। কারণ এই দেশগুলির অর্থনীতি উৎপাদন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। সেই উৎপাদন ভোগ করে প্রথম বিশ্বের দেশগুলি। তাই, নীতিগত প্রশ্ন উঠবেই… বিশ্বের কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী কারা? তাই এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন যে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই করের বন্টন কোন প্রথাতে হবে। এই বিষয়ে আরও বেশি আলোচনা করা উচিত। এবং এই নিয়ে বিশ্বের সব দেশের মধ্যেই একটি ঐক্যমত্য তৈরি হওয়া খুবই প্রয়োজন।
এদিকে কার্বন নির্গমন নিয়ে বর্তমান পরিসংখ্যান দেখলে আমাদের বোকা বনতে হবে। কারণ বিশ্বের এই হাল এক, দুই বা দশ বছরে হয়নি, হয়েছে বিগত দুই শতাব্দীতে। সেই সময় যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে যে হারে শিল্প গজিয়ে উঠেছিল এবং কয়লা থেকে যে ধোঁয়ার উৎপত্তি হয়েছিল, তা থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের সূচনা। তাই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সেই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না এই উন্নত দেশগুলি। তাই বর্তমান পরিস্থিতির উপর নজর দিতে হলেও আমাদের সার্বিকভাবে কার্বন নির্গমন নিয়ে ভাবতে হবে। তাই এমন পরিকল্পনা প্রয়োজন, যা বর্তমান এবং অতীত সমেয়র ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তবে এটা না হলে বর্তমান পরিস্থিতির কোনও অর্থপূর্ণ সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে না।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কার্বন নির্গমন এবং এর থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর উপায় খোঁজা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বিগত বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব। যে হারে তাপপ্রবাহ বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে, তা ভাবিয়ে তুলেছে পরিবেশবিদ থেকে রাজনীতিকদের। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে। এবং এই সমস্যার সমাধান না হলে ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট। কিন্তু তাই বলে কার্বন নির্গমনের দায় উন্নত দেশগুলি পুরোপুরি ভারত বা চিনের মতো দেশগুলির উপর চাপাতে পারে না। সেখানেই এই প্রশ্নটি উঠতে শুরু করে, কার্বন নির্গমনের নেপথ্যে আসল কারণ কী? উৎপাদন নাকি সেই পণ্য ব্যবহার?
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে কৃষিক্ষেত্র যেভাবে প্রভাবিত হবে, তার জেরে অর্থনীতির উপরও প্রভাব পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝটকা থেকে বিশ্বকে বাঁচতে প্রয়োজন নয়া অর্থনৈতিক কাঠামো। প্রথাগত অর্থনীতি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল, তাই এটি বর্তমান সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপারগ। আর তাই প্রশ্ন উঠবে? আমরা কি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত? এই প্রশ্ন ঘুরছে সবার মনেই। এবং এই কারণেই ধীরে ধীরে পেট্রল চালিত গাড়ির বদলে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি ব্যবহারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বা সরকারের তরফে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।
করোনা আমাদের শিখিয়েছে যে আমাদের বিশ্বকে বাঁচাতে একত্রিত হতেই হবে। তবে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি যে বৈশ্বিক বিপর্যয় রুখতে অক্ষম তা ফুটে উঠেছে করোনা কালে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে সব দেশকেই নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধুমাত্র কারোর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। ভারতের মতো দেশ পুনর্ব্যবহারোগ্য শক্তির উপর জোর দিচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে ভারত অর্থৈতিক ভাবেও স্বনির্ভর হতে পারবে। কারণ তাহলে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি কমাতে পারবে ভারত। আর তাতে সার্বিক ভাবে বৈশ্বিক পরিবেশও উপকৃত হবে। তবে ভারতের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলিকেও নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।