‘ই-স্নানেই’ পুণ্য অর্জন, করোনা আবহেও অব্যাহত গঙ্গাসাগর মেলা
জেলা প্রশাসনের তরফে গঙ্গাসাগর উপলক্ষ্যে একটি নতুন ওয়েবসাইট চালু করা হবে। এই ওয়েবসাইট থেকেই পুণ্যার্থীরা গঙ্গার জল বা প্রসাদ যেকোনো কিছু অর্ডার করলেই তা সরাসরি চলে আসবে বাড়িতে।
গঙ্গাসাগর : কথায় আছে, ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’। কোভিড(COVID-19) অতিমারীতে গঙ্গাস্নানে পুণ্য অর্জন বিষম অন্তরায়। নিউ নর্মালে তাই নতুন নিয়মে প্রস্তুত হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা।
সাগরদ্বীপে কপিলমুনি আশ্রম চত্বরে জোরকদমে চলছে কাজ। মেলাপ্রাঙ্গণে থাকছে পানীয় জলের জন্য পাইপলাইন। থাকছে সুপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাও। আলোর পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য অস্থায়ী শেডের ব্যবস্থাও করছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা(South 24 Pargana) জেলা প্রশাসন। মেলা প্রাঙ্গণেই গড়ে তোলা হবে সিসিইউ পরিষেবা যুক্ত একটি অস্থায়ী হাসপাতাল। যে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদেরকে অস্থায়ী হাসপাতালে পৌছে দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স ও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হবে।
আরও পড়ুন : দেশে এক কোটি ছাড়াল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তবে স্বস্তি দিচ্ছে সুস্থতার হার
কোভিড বিধি মেনেই এবার স্বাস্থ্যবিধিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা(South 24 Paragana) জেলা প্রশাসন। পরিবহন থেকে শুরু করে যাত্রীদের থাকা-স্নান সবেতেই কড়া নজর প্রশাসনের। গঙ্গাসাগর উপলক্ষ্যে বাড়ানো হয়েছে বাসের সংখ্যা। বাসে ওঠার আগে তীর্থযাত্রীদের মেডিক্যাল স্ক্যানার ও থার্মাল গানের মাধ্যমে দেহের উষ্ণতা মাপা হবে। গঙ্গাসাগরে যাতায়াতে যে জেটিগুলি ব্যবহৃত হয়, প্রত্যেকটি জায়গাতেই লাগানো হবে স্যানিটাইজার টানেল। মেলার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেও বসবে টানেল। বিনামূল্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি ব্যবস্থা তো থাকছেই। মেলার মধ্যে থাকবে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট, এমনকি আরটিপিসিআর টেস্টের সুব্যবস্থাও।
আরও পড়ুন : পিছু পিছু বনশ্রী, শুভেন্দু যেন ‘হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা’
সূত্রের খবর, করোনামুক্তির পরই জেলাশাসক পি উলগানাথন নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের আধিকারীক সহ এসডিও, বিডিও, গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারীক এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মেলা নিয়ে বৈঠক করেছেন। গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনির্বাহী অফিসার শম্ভুদীপ সরকার বলেন, ‘কোভিড গাইডলাইন্স মেনে মেলাপ্রাঙ্গণে পুরোদমে কাজ চলছে। আরও কিছু ছোট ছোট কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন : শাহর সভায় শুভেন্দু! গণযোগদানের তালিকায় নাম সাংসদ, বিধায়ক সহ কমপক্ষে ৪০ নেতানেত্রীর
মেলা নিয়ে নবান্নের নির্দেশ পাওয়ার পরই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, পূর্ত দপ্তর, সেচ দপ্তর, বিদ্যুৎ দপ্তর এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে জোর কদমে বৈঠক চলছে জেলা প্রশাসনের আধিকারীকদের। পুণ্যার্থীদের জন্য এবার ই-স্নানের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
কী এই ই-স্নান ?
শোনা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসনের তরফে গঙ্গাসাগর উপলক্ষ্যে একটি নতুন ওয়েবসাইট চালু করা হবে। এই ওয়েবসাইট থেকেই পুণ্যার্থীরা গঙ্গার জল বা প্রসাদ যেকোনো কিছু অর্ডার করলেই তা সরাসরি চলে আসবে বাড়িতে। ই-স্নান বা ই-প্রসাদের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রদর্শনীতেই লাইভ দেখা যাবে গঙ্গাসাগর মেলা। ঘরে বসেই মেলায় অংশ নিতে পারবেন তীর্থযাত্রীরা।
আরও পড়ুন : ‘সম্প্রীতিতেই’ ‘সমঝোতা’ দেখছে ভারত-বাংলাদেশ, মোদী-হাসিনা বৈঠকে পারস্পরিক ‘কৃতজ্ঞতার’ সুর বিদ্যমান
ই-স্নান ছাড়াও মেলাপ্রাঙ্গণে উপস্থিত তীর্থযাত্রীদের কথা ভেবে কাকদ্বীপেও একটি অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৭টি সেফহোম তৈরীরও পরিকল্পনা রয়েছে। মেলা চালাকালীন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বাঙুড় হাসপাতালে নির্দিষ্ট কোভিড বেড রাখা হবে। মেলাতে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি কাজ করবে র্যাপিড রেসপন্স টিম এবং কুইক রেসপন্স টিম।
আরও পড়ুন : বাংলায় ইনিংস শুরু শীতের, আজই মরসুমের শীতলতম দিন
মেলা চলাকালীন ডিউটিরত পুলিশ প্রশাসনের কর্মী, আধিকারিক থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবক ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে, তাদের জন্য পৃথক একটি সেফহোমে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হবে। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় জানান, ‘মেলার শুরু থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কোথাও কোনরকম ফাঁকফোকর যাতে না থাকে সেদিকটা আমরা কড়া নজরে রাখবো।’
আরও পড়ুন : ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে ‘ছেলে ডাকার’ অভিযোগ, ঘেরাও-বিক্ষোভ জেইউ-তে
শোনা যাচ্ছে প্রতিবছরের মত এবছরও গঙ্গাসাগর উপলক্ষ্যে বালের পাশাপাশি রেল পরিষেবা পেতে সাউথ-ইস্টার্ন রেলওয়ের কাছে আবেদন করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসন। আগামী জানুয়ারিতেই শুরু হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা।