BNS Section 69: ভারতীয় পুরুষদের নয়া আতঙ্ক ধারা ৬৯?

Bharatiya Nyaya Sanhita: এই ধারাটি নিয়ে অনেকের মনেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধীরাও। এই ধারায় ঠিক কী বলা হয়েছে? কেন ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে?

BNS Section 69: ভারতীয় পুরুষদের নয়া আতঙ্ক ধারা ৬৯?
প্রতীকী ছবি (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি)Image Credit source: Meta AI
Follow Us:
| Updated on: Jul 03, 2024 | 9:44 PM

নয়া দিল্লি: প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে এতদিন শুধুমাত্র কারও হৃদয়ই ভাঙত। কিন্তু, এখন যদি কোনও পুরুষ কোনও মহিলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাহলে তার জেল হতে পারে। ভারতের নতুন ফৌজদারি আইনে এমনই একটি বিধান রয়েছে। ঔপনিবেশিক যুগের ভারতীয় দণ্ডবিধি-র বদলে, চলতি মাসের প্রথমদিন থেকে চালু হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। এর ৬৯ নম্বর ধারাতেই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক ভেঙে দিলে, শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। এই ধারাটি নয়ে অনেকের মনেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধীরাও। এই ধারায় ঠিক কী বলা হয়েছে? কেন ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে? আসুন এই নিবন্ধে তা জেনে নেওয়া যাক –

ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ৬৯

এই ধারাটি রয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার পঞ্চম অধ্যায়ে। এই অধ্যায়ে ‘মহিলা ও শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর বিভিন্ন দিক ও সেগুলির শাস্তির কথা বলা আছে। ৬৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি প্রতারণামূলক উপায়ে বা পূরণ করার কোনও অভিপ্রায় ছাড়াই বিয়ে করার প্রতিশ্রতি দিয়ে কোনও মহিলার সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলা যাবে না, তবে ওই পুরুষকে কারাদণ্ড দেওয়া হবে। আরও বলা হয়েছে, এই অপরাধে কোনও ব্যক্তির দশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে এবং সঙ্গে দিতে হতে পরে জরিমানাও। বিধানটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘প্রতারণামূলক উপায়’-এর মধ্যে রয়েছে ‘চাকরি দেওয়া বা পদোন্নতির মিথ্যা প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতি, বা পরিচয় গোপন রেখে বিয়ে করা।’

নির্দিষ্ট বিধান ছিল না

এর আগে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে প্রতারণামূলক উপায়ে যৌন মিলনের জন্য শাস্তির কোনও নির্দিষ্ট বিধান ছিল না। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৯০ নম্বর ধারায় ভুল তথ্য দিয়ে যৌন মিলনের সম্মতি গ্রহণকে অবৈধ বলা হত। এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে এই আইনের সঙ্গে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা যোগ করা হত। এই ধারাটি ছিল ধর্ষণের।

কেন ধারা ৬৯ বিতর্কিত?

সমালোচকদের মতে, এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে। সম্মতিপূর্ণ যৌন সম্পর্কের পরও কোনও পুরুষকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে। যদি তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিয়ে না হয়, তাহলে কোনও মহিলা তাঁর পুরুষ সঙ্গীর বিরুদ্ধে এই আইনের ধারায় মামলা করতে পারেন। কাজেই, শুধুমাত্র কোনও মহিলার মুখের কথায় এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পরই গ্রেফতার করা যাবে কোনও পুরুষকে । ‘লাইভল’ পোর্টালে ভিএম সালগাওকার কলেজ অফ ল-এর সহকারী অধ্যাপক, ড. সন্ধ্যা রাম লিখেছেন, এই ধারার মধ্য দিয়ে এমন একটি আখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, যে শুধুমাত্র মহিলাদের সুরক্ষার প্রয়োজন। যা তাঁর মতে মহিলা বিদ্বেষী। শুধু তাই নয়, মহিলাদের সতীত্বকেও আইনগতভাবে একটি গুণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতারণামূলক উপায়ের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায়, সেই বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর যুক্তি, এই আইনে ধরেই নেওয়া হয়েছে, চাকরি বা পদোন্নতির বিনিময়ে যৌনতায় সম্মতি দেন মহিলারা। বিরোধীদের দাবি, পরিচয় গোপন করে বিয়ে করার জন্য শাস্তি দেওয়া এই আইন আসলে “লাভ জিহাদ”-এর আখ্যানকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

আইনি সমস্যা

সমালোচকদের এই সকল যুক্তির পাশাপাশি, এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু আইনি সমস্যাও রয়েছে। বড় প্রশ্ন হল, আদালত কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবে যে বিয়ের অভিপ্রায় ছিল না বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল? যদি শেষ পর্যন্ত বিয়ে না হয়, তাহলে কেউ কীভাবে প্রমাণ করবে যে তার সত্যি সত্য়িই বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল? কারণ, বিয়ে করার ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন কারণেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যেতে পারে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মধ্যে কীভাবে প্রভেদ করা হবে? কেউ কেউ বলছেন, প্রমাণ হিসেবে মোবাইল ফোনে আসা মেসেজ, কল রেকর্ড এবং ছবি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিয়ে নিয়ে সেখানে কোনও আলোচনা হয়ে থাকলে তা প্রমাণ হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। তারপরও, কোনও যৌন সম্পর্ক শুধুমাত্র বিয়ে হবে সেই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে হয়েছিল কিনা, তা জানার কোনও উপায় নেই। কাজেই, কোনও সম্পর্ক ভেঙে গেলে পুরুষদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক তৈরি হতে পারে।