ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন একের পর এক চিকিৎসক, কী রণকৌশল সরকারের?

Doctors: দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই সময়ে যেসব চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগেরই মৃদু উপসর্গ রয়েছে।

ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন একের পর এক চিকিৎসক, কী রণকৌশল সরকারের?
স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে সংক্রমণ। ফাইল ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 05, 2022 | 6:03 PM

পঙ্কজ কুমার: দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এর মাঝেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে করোনার নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন একের পর এক চিকিৎসক। শুধুমাত্র রাজধানী দিল্লিতেই ৫০ জনের বেশি চিকিৎসক ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন। বিহারের নালন্দা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতালের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানে ১৫৩ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। পটনা এইমসে্ও ৪ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে এই সময় সবথকে বেশি প্রয়োজন চিকিৎসকদের। তারাই যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন তবে এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।

দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই সময়ে যেসব চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগেরই মৃদু উপসর্গ রয়েছে। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য তাদের নমুনা পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই জানা যাবে করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকদের দেহে ওমিক্রন বাসা বেঁধেছে কিনা। স্বাস্থ্য দফতরের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, আক্রান্ত চিকিৎসকরা কোভিড বিধি মেনে নিভৃতবাসে রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই বাড়িতে চিকিৎসা চলছে।

এইমস-এর চিকিৎসকদের পরামর্শ

এইমসের চিকিৎসক ডাঃ যুদ্ধবীর সিং জানিয়েছেন, ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কম। অবস্থা যদি এইরকমই থাকে তবে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি জানিয়েছেন, সেন্টার ফর ডিজিজি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী যেসব চিকিৎসকের সংক্রমণ মৃদু, তারা আক্রান্ত হওয়ার ৫ দিন পর থেকে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। এইরকমভাবে চললে হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব হবে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় হাসপাতাল গুলির যে অবস্থা হয়েছিল, সেই অবস্থা হওয়ার সম্ভবনা এবার নেই।

দিল্লির মূলচন্দ হাসপাতালের পালমনোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ভগবান মন্ত্রী দজানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসকরা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। যদি একদল চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়, তবে অপর আরেকদল চিকিৎসক চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছে বেশিরভাগ ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে খুব কমজনকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। একইরকম ভাবে আক্রান্ত চিকিৎসকদের উপসর্গও খুব সীমিত এবং তাদের সংক্রমণও মৃদু। এই সময়ে টেলিমেডিসিনের ওপরই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অনলাইনে তারা রোগীদের চিকিৎসা করছেন। তাই আক্রান্ত চিকিৎসকরা বাড়ি থেকে রোগীদের টেলিমেডিসিন পরিষেবা দিতে পারবেন।

করোনা সংক্রমণের বিস্ফোরণ

সোমবার দিল্লিতে ৪ হাজার ৯৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতবছর জুন থেকে এই সংখ্যাটা সর্বাধিক। জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮১ শতাংশের মধ্যেই ওমিক্রন পাওয়া গিয়েছে। দিল্লিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৯৮৬ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এর পাশাপাশি দিল্লিতে পজিটিভিটি রেট ৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। শুধুমাত্র দিল্লি নয়, মহারাষ্ট্রেও একইরকমভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে ১২ হাজার ১৬০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর সঙ্গে মহারাষ্ট্রে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৭৪ জন হয়েছে। হরিয়ানা, পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, কেরলেও পাল্লা দিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইতিমধ্যে দাবি করছেন দেশে করোনা তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষণায় স্বস্তির নিঃশ্বাস

দক্ষিণ আফ্রিকায় সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানা গিয়েছে, ওমিক্রন আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তির ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও কমেছে বলে ওই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের যদি একই রকমভাবে মৃদু উপসর্গ থাকে তবে করোনার নতুন এই রূপ নিয়ে বিপদ কমবে। একইসঙ্গে আশঙ্কাজনক কোভিড রোগীর সংখ্যা কমবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

আমেরিকার নামজাদা চিকিৎসক আফসিন ইমরানি জানিয়েছেন, মোট জনসংখ্যা ৮০ শতাংশই ওমিক্রন আক্রান্ত হবেন। যার অর্থ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আণুপাতিক হারে এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হবেন। কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখছে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো সম্ভব নয়। ডাঃ ইমরানি জানিয়েছেন, ওমিক্রন সাধারণ জ্বর, সর্দির মতোই। যদি হাসপাতালের কর্মীরা এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন তবে তারাও মাস্ক পরে রোগীর সেবা শুশ্রুষা করতে পারবেন।

করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতে গিয়ে বিশাল সংখ্যায় চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হত। তাদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে ৫০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও অবধি দেশে ১ হাজার ৮০০ জন রোগীর দেহে ওমিক্রন ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে ৭৬৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আক্রান্ত বেশিরভাগেরই মৃদু উপসর্গ ছিল। এখন সরকারের ওপর সকলের নজর থাকবে আগামী দিনে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম করতে তারা কোন সিদ্ধান্তের পথে হাঁটে।

আরও পড়ুন J&K Encounter: বছরের প্রথম সপ্তাহেই একের পর এক সাফল্য জঙ্গি দমন অভিযানে, পুলওয়ামায় খতম ৩ জইশ জঙ্গি

আরও পড়ুন Bipin Rawat’s Chopper Crash: ঘন মেঘের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল কপ্টারটি! প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বিপিন রাওয়াতের দুর্ঘটনার রিপোর্ট দেবে তদন্তকারী দল