ভারতের মাটিতে হাজির হয়েছিল অন্তত ১ কোটি শরণার্থী, ৭১-এর যুদ্ধে কী ভূমিকা ছিল ভারতের
Bangladesh: ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় উল্লেখ করেন, আর পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, ক্রমশ ভারতের সমস্যা হয়ে উঠছে এটি। ভারতের পক্ষে যে আর চোখ বন্ধ করে থাকা সম্ভব নয়, সেটাও জানিয়ে দেন তিনি। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীর চাপ জটিলতা বাড়ায়।
নয়া দিল্লি: গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে শুধুই রক্তমাখা ছবি সামনে আসছে। দিকে দিকে স্লোগান। প্রতিবাদে মুখ রাজধানী থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা। সেনা নামিয়েও পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত সোমবার পতন হয়েছে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলেছেন হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বারবার বলেছেন, ১৯৭১-এর সময় কীভাবে ভারত তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। মাত্র ১৩ দিনের যুদ্ধে ভারতের কাছে হার স্বীকার করেছিল পাকিস্তান। সেই যুদ্ধে ভারত শুধু অস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল তাই নয়, বহু শরণার্থীকে সেই সময় আশ্রয়ও দিয়েছিল ভারত।
দিল্লিতে তখন ইন্দিরা গান্ধীর সরকার। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে ঢাকায় শুরু হয় গণহত্যা। মৃত্যু হয় বহু মানুষের। এরপরই পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে শুরু করেন শরণার্থীরা। সেই পরিস্থিতিতেই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে ভারত। বিভিন্ন দেশে সফর শুরু করেন ইন্দিরা গান্ধী। কার্যত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আকার নেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনা আত্মসমর্পণ করার পর নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় উল্লেখ করেন, আর পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, ক্রমশ ভারতের সমস্যা হয়ে উঠছে এটি। ভারতের পক্ষে যে আর চোখ বন্ধ করে থাকা সম্ভব নয়, সেটাও জানিয়ে দেন তিনি। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীর চাপ জটিলতা বাড়ায়। ভারতের মাটিতে শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন দেশে সফর করে বোঝাতে শুরু করেন পরিস্থিতি। এরই মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ভারত-রাশিয়া চুক্তি।
ভারতের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে যখন আক্রমণ চালায় পাকিস্তান। তারপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। সেই যুদ্ধে ৯৩,০০০ পাকিস্তানিকে যুদ্ধবন্দি করে ভারতীয় সেনা।
১৯৭১-এ অন্তত এক কোটি বাংলাদেশি ভারতে এসে আশ্রয় নেন। সীমান্ত খুলে দেয় ভারত সরকার। শরণার্থীদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ত্রিপুরায়। ভারতের অর্থনীতির ওপরেও চাপ বাড়তে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ইন্দিরা গান্ধী জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পূর্ণ সমর্থন জানাবেন তিনি। এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধানকে ভারত সরকার নির্দেশ দেয় পূর্ব পাকিস্তানে যেতে হবে। এরপর ভারতের মাটিতেই তৈরি হয় মুক্তিবাহিনী।
এরপর আর পাকিস্তানকে রেয়াত করেনি ভারত। বিভিন্নভাবে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়। সেই সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরানো হয় কলকাতায়। বাংলাদেশের খবর, বাংলাদেশি শিল্পীদের গান-কবিতা প্রকাশ করা হয় ওই রেডিও-তে।