করোনার জেরে উপেক্ষিত শিশুদের স্বাস্থ্য, ডিটিপি-১ টিকাকরণে শেষের তালিকায় ‘প্রথম’ ভারত

DTP Vaccination in India: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছে, মাঝারি আয়যুক্ত দেশগুলিতেই টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্য়া সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান কারণ হল অর্থাভাব ও ভুল তথ্যের প্রচার।

করোনার জেরে উপেক্ষিত শিশুদের স্বাস্থ্য, ডিটিপি-১ টিকাকরণে শেষের তালিকায় 'প্রথম' ভারত
অবশেষে মিলল শিশুদের ভ্যাকসিনের অনুমতি (ফাইল চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 18, 2021 | 3:49 PM

নয়া দিল্লি: করোনার প্রভাব স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কতটা পড়েছে, তা আরও একবার উঠে এল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(World Health Organization)-র তথ্যে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানানো হয়, ২০২০ সালে ভারতে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি শিশু ডিটিপি-১ (DTP-1) টিকা পায়নি। বিশ্বের হিসাবে প্রায় ২ কোটিরও বেশি শিশু এই প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় পাননি।

ডিপথেরিয়া-টিটেনাস-পার্টুয়েসিসের ভ্যাকসিনকেই একযোগে ডিটিপি-১ ভ্যাকসিন বলা হয়। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৬০টি দেশের টিকাকরণের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, অধিকাংশ দেশই শিশুদের টিকাকরণ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে। শিশুদের মূলত যে ১৩টি রোগের জন্য টিকা দেওয়া হয়, তা নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্যাম্পের মাধ্যমে দেওয়া হত। করোনা সংক্রমণের প্রভাবে প্রায় ২ কোটিরও বেশি শিশু সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে, যেখানে গিয়ে টিকাকরণ করানোও কার্যত অসম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসিস (Tedros Adhanom Ghebreyesus) জানান, বিশ্বের নানা দেশে করোনা টিকাকরণ শুরু হলেও বাকি প্রয়োজনীয় টিকাকরণগুলির ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। এরফলে পোলিও, হাম, মেনিনজাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “করোনাকালে এই পরিস্থিতিতে যদি একাধিক রোগের সংক্রমণ শুরু হয়, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সেই কারণেই দেশগুলিকে দ্রুত শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচিগুলি পুনরায় শুরু করতে হবে।”

জানা গিয়েছে, বর্তমানে ৬৬টি দেশে ৫৫ ধরনের গণটিকাকরণ কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে করোনা সংক্রমণের কারণে। এরফলে পোলিও, হলুদ জ্বরের মতো রোগ বিশ্বে আরও প্রভাব ফেলবে। বিগত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে যেমন ৩৫ লক্ষ শিশু ডিটিপি-১ ভ্যাকসিন পায়নি, তেমনই ৩০ লক্ষেরও বেশি শিশু হামের টিকা পায়নি। ইউনিসেফ(UNICEF)-র এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর হেনরিয়েটা ফোরে বলেন, “করোনা সংক্রমণ ও তারফলে আমাদের স্বাভাবিক জনজীবন যেভাবে ব্যাহত হয়েছে, তাতে আমাদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। পরিস্থিতি আগেই খারাপ ছিল, করোনার ফলে তা আরও খারাপ হয়েছে।”

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ডিটিপি-১ ভ্যাকসিন না পাওয়া শিশুর সংখ্যাবৃদ্ধির হারের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে ভারত। ভারতের পরেই রয়েছে পাকিস্তান, যেখানে এক বছরে টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার থেকে বেড়ে ৯ লক্ষ ৬৮ হাজারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গিয়েছে, মাঝারি আয়যুক্ত দেশগুলিতেই টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্য়া সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান কারণ হল অর্থাভাব, ভুল তথ্য। ডিটিপি-৩ পাওয়ার হারও ৯১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে। হামের টিকার হার ৭১ শতাংশ থেকে কমে গিয়েছে ৭০ শতাংশে, যেখানে হাম দূরীকরণে প্রয়োজন ৯৫ শতাংশ টিকাকরণ।

যদিও এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পরই ভারত সরকারের তরফে বিরোধিতা করা হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সার্বিক টিকাকরণ কর্মসূচিও চালু রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ২০২১-এর প্রথম ত্রৈমাসিকেই ডিটিপি-৩ ভ্য়াকসিন দেওয়ার  লক্ষ্যমাত্রা পিৃ্রায় ৯৯ শতাংশ পূরণ হয়েছে। যদিও সরকারের তরফে এই দাবির সত্যতা প্রমাণে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। আরও পড়ুন: অক্সিজেন কনসানট্রেটরে বিস্ফোরণ, মৃত্যু মহিলার, আশঙ্কাজনক স্বামী