Opposition Alliance : সোনিয়া-প্রশ্নে কেন মেজাজ হারাচ্ছেন মমতা?

Mamata Banerjee: মমতা বা অভিষেক কংগ্রেসকে বিঁধছেন বটে, কিন্তু কংগ্রেস তাঁদের বন্ধু নয়, এমন কথা কিন্তু কোথাও বলছেন না। আবার সোনিয়া-রাহুলরাও সযত্নে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোথাও স্পষ্ট করে বলছেন না মমতা তাঁদের বন্ধু নন।

Opposition Alliance : সোনিয়া-প্রশ্নে কেন মেজাজ হারাচ্ছেন মমতা?
সোনিয়া গান্ধীদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ছবি - PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2021 | 11:48 PM

নয়া দিল্লি : এ তো কয়েকদিন আগের কথা। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়েছেন। চারিদিকে সাংবাদিকদের ভিড়। কথা বলতে বলতে হঠাৎই মেজাজ হারালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌজন্যে, সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রশ্ন। এই নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি বিগত কয়েক দিনে। কিন্তু কেন সোনিয়া-প্রশ্নে মেজাজ হারাচ্ছেন মমতা?

১০ জনপথ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উভয় পক্ষের সঙ্গে সমান ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, এমন একাধিক সূত্র জানিয়েছে মমতা-সোনিয়াকে নিয়ে এই দুশ্চিন্তা সম্ভবত খুব বেশিদিন টিকবে না। একটি রাজনৈতিক পুনর্মিলনের জোর সম্ভাবনার ইঙ্গিত রয়েছে। গোয়া, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর এবং উত্তর প্রদেশ – এই পাঁচটি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করতে চলেছে। ওয়াকিবহাল সূত্র মারফত খবর, মমতা-সোনিয়া সম্পর্কের কোনও ভাঙনই হয়নি এবং কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী যদি দায়িত্ব নেন, তা এখন হোক বা পরে, তাহলে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ইস্যুগুলি নিয়ে বিতর্কের জন্ম নিয়েছে, সেগুলির একটি সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, দুই পক্ষের কেউই তাদের চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেনি। মমতা বা অভিষেক কংগ্রেসকে বিঁধছেন বটে, কিন্তু কংগ্রেস তাঁদের বন্ধু নয়, এমন কথা কিন্তু কোথাও বলছেন না। আবার সোনিয়া-রাহুলরাও সযত্নে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোথাও স্পষ্ট করে বলছেন না মমতা তাঁদের বন্ধু নন।

ওয়াকিবহাল সূত্রের খবর, ২৮ জুলাই 10 জনপথে সোনিয়ার সঙ্গে মমতার বৈঠকের সময় অনেকগুলি বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে মনে করা হয়েছিল যে এই বৈঠকে থাকবেন কেবল মমতা এবং সোনিয়া। দুই মহিলা নেত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকের আশা করছিল তৃণমূল। কিন্তু, রাহুল গান্ধীও সেখানে হাজির ছিলেন, আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে রাহুলের ‘আদর্শবাদী’ এবং ‘অবাস্তব বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির’ কারণে এমন বেশ কিছু ইস্যু রয়ে গিয়েছে, যা মমতা আলোচনার পরিকল্পনা করে গিয়েছিলেন, কিন্ত শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। সূত্রের খবর, সেই বাদ পড়ে যাওয়া আলোচনায় ইউপিএর পুনরুজ্জীবন বা একটি রাজনৈতিক ফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তার মতো জটিল প্রসঙ্গও ছিল।

এদিকে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক আজকের নয়। বেশ কয়েক দশকের সম্পর্ক। প্রথমবারের মতো সাংসদ হিসেবে, তাঁকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক মন্ত্রী করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মমতা নিজের দল গঠনের পরেও, সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার সম্পর্ক একইরকম ছিল। মজার ব্যাপার হল একটা সময় মমতা বারবার বলতেন, সোনিয়া দলের দায়িত্ব নিলে তিনি কংগ্রেসে ফিরবেন।

মমতার প্রতিও সোনিয়ার বেশ নরম মনোভাব রয়েছে। ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে যখন মমতা এনডিএ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছিলেন, তখনও সোনিয়া এবং মমতার একে অন্যকে আলিঙ্গন করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু রাহুলের ক্ষেত্রে মমতা আবার এতটা ‘মমতাময়ী’ নন। ২০১১ সালে মমতার ঐতিহাসিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও দেখা মেলেনি রাহুলের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, তখন থেকেই রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কটা ঈষৎ শীতল হয়েছিল মমতার। আর এটি আরও বেশি আঘাত করে থাকতে পারে, কারণ রাহুল শ্রীনগরে ওমর আবদুল্লাহর শপথ গ্রহণে উপস্থিত ছিলেন। অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

তৃণমূলের দলের অন্দরেও অনেকে মনে করেন যে মমতার বিরুদ্ধে কথায় কথায় আক্রমণ শানানো প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর উপরেও রাহুল গান্ধীর সমর্থন রয়েছে৷ অধীর চৌধুরী সম্প্রতি মমতাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইনফর্মার বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। সংবাদ সংস্থা এনএনআইতে অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, “২০ শতাংশ ভোট কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে। আর টিএমসির মাত্র ৪ শতাংশ ভোট রয়েছে৷ এই ২০ শতাংশ ভোট ছাড়া মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন? তিনি মোদীর ইনফর্মার হয়ে কংগ্রেস ও বিরোধীদের ভাঙন ধরাতে ও দুর্বল করতে চান।”

ওয়াকিবহাল সূত্রের খবর রাহুল এবং অধীর চৌধুরী ছাড়াও মমতার আরও একটি অভিযোগ রয়েছে। ইউপিএকে আবার চাঙ্গা করতে নাকি সোনিয়ার গান্ধীর বেশ অনীহা রয়েছে, আর এটিই একেবারে পছন্দ নয় মমতার। চলতি বছরের মে মাসে মমতা যখন তৃতীয়বার বাংলার তখতে বসেন, তখন কমল নাথের মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা তাঁকে ভোপাল এবং রায়পুরে সমাবেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিজেপিকে হারানোর শক্তি হিসেবে তাঁকে দেখাতে চেয়েছিলেন কমল নাথ। কিন্তু সেই সমাবেশ শেষ পর্যন্ত হয়নি। শোনা যায়, শরদ পাওয়ার সহ বেশ কয়েকজন নেতা ইউপিএর আহ্বায়ক হিসেবে মমতার নাম উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের থেকে নাকি সেভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের ঠিক আগে মমতা যখন দিল্লিতে এসেছিলেন এবং সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা না করেই চলে যান, তখন দুই দলের তিক্ততা আরও বেড়ে যায়। আবারও, সমন্বয়ের অভাব। শোনা যায়, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ২৮ জুলাই নাকি আবার মমতার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছিলেন সোনিয়া। আলোচনা করেই দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল। যখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন নাকি ১০ জনপথের থেকে সোনিয়ার সঙ্গে দেখা না হওয়ার কারণ হিসাবে দিল্লির বাতাসের গুণমানকে উল্লেখ করা হয়েছিল। অথচ কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রীকে সংসদে দেখা গিয়েছিল এবং এমনকী গান্ধী মূর্তির কাছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সামিল হতে দেখা গিয়েছিল। যদিও সেখানেও বাতাসের গুণগত মান খারাপ ছিল।

উল্লেখ্য মুলায়ম সিং যাদব এবং লালু প্রসাদ যাদব যথাক্রমে বিহার এবং উত্তর প্রদেশের মতো পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। একাধিক বার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনও সাফল্য পাননি। শরদ পাওয়ারের এনসিপিও মহারাষ্ট্রের বাইরে ছত্তীসগঢ়, মেঘালয়, গুজরাট, গোয়া এবং দমন ও দিউতে দলের বিস্তারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, কিন্তু খুব কমই সফল হয়েছেন। অন্যদিকে, জনতা পার্টি এবং জনতা দলের থেকে বিচ্ছিন্ন দলগুলি যেমন সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জেডিইউ, জেডিএস এবং বিজেডি অত্যন্ত ভাল সাফল্য হয়েছে।

আরও পড়ুন : JMM likely to back Congress: মুখ ফেরাচ্ছে পড়শিরাও, কংগ্রেসই বেশি পছন্দ হেমন্ত সোরেনের; আরও একা হচ্ছেন মমতা?