Priyanka Gandhi Vadhra: প্রিয়ঙ্কাই কি গান্ধীদের তুরুপের তাস? কেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে ভাসছে তাঁর নাম?

Priyanka Gandhi Vadhra: প্রশ্ন উঠছে, কেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী? দেশজোড়া নরেন্দ্র মোদীর এই বিপুল জনপ্রিয়তার সামনে যেখানে পরাজয় প্রায় নিশ্চিত, সেখানে কেন প্রিয়ঙ্কাকে সিংহের গুহায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?

Priyanka Gandhi Vadhra: প্রিয়ঙ্কাই কি গান্ধীদের তুরুপের তাস? কেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে ভাসছে তাঁর নাম?
বারাণসীতে দেখা যাবে মোদী-প্রিয়ঙ্কা টক্কর?Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 14, 2023 | 8:58 PM

নয়া দিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বারাণসীতে প্রার্থী হবেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী? জল্পনা উস্কে দিয়েছেন শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে একই সময়ে সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবার্ট বঢরা দাবি করেছেন, সফল সাংসদ হওয়ার সবরকম যোগ্যতা রয়েছে প্রিয়ঙ্কার। দুই প্রান্তের দুই দাবি কি নেহাতই কাকতালীয়! না কি ২০২৪ এর মহারণে নরেন্দ্র মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া থামাতে গান্ধী পরিবারের শেষ তুরুপের তাস সত্যিই ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সনিয়া? এই নিয়ে জল্পনার মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, কেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী? দেশজোড়া নরেন্দ্র মোদীর এই বিপুল জনপ্রিয়তার সামনে যেখানে পরাজয় প্রায় নিশ্চিত, সেখানে কেন প্রিয়ঙ্কাকে সিংহের গুহায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?

সংসদীয় রাজনীতিতে বলা হয়, লোকসভার রাস্তা যায় উত্তর প্রদেশ হয়ে। সেই উত্তর প্রদেশের মাটিতে এবার গান্ধী পরিবার থেকে কে কোথায় প্রার্থী হবেন, তাই নিয়ে তীব্র জল্পনা উস্কে দিয়েছেন শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত। তিনি সরাসরি দাবি করেছেন, বারাণসী কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী প্রার্থী হলে যে কোনও হিসেব ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে। রবার্ট বঢরাও সম্প্রতি দাবি করেছেন, সাংসদ হওয়ার সব রকম যোগ্যতা রয়েছে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর। এই বিষয়টি শুধুমাত্র জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শরদ পওয়ারের থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই আচমকা প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনেছেন দুঁদে রাজনীতিবিদ সঞ্জয় রাউত। সম্প্রতি, বিদ্রোহী ভাইপো অজিত পওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শরদ পওয়ার। বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করার জন্য জোটের অন্য নেতারা যখন সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছেন, সেখানে শরদের পদক্ষেপে জোটের মুখ পুড়েছে। এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। তাই, প্রিয়ঙ্কা প্রসঙ্গ তুলে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন সঞ্জয়, এমনই মনে করা হচ্ছে।

উত্তর প্রদেশের আমেঠি, রায়বেরিলি বরাবরই গান্ধী পরিবারের খাস তালুক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০১৯-এর লড়াইয়ে স্মৃতি ইরানির কাছে আমেঠি হারিয়েছেন রাহুল গান্ধী। রায়বেরিলি এখনও টিকে থাকলেও, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার সনিয়া প্রার্থী হবেন কি না, তাই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে, উত্তর প্রদেশে গান্ধী পরিবারের নতুন মুখ হিসেবে প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করে চমক দিতে পারে কংগ্রেস, এমনটাও মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী ফলাফলে ভরাডুবি হলেও উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষ হাতে সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলেছেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর ‘লড়কি হু লড় সকতি হু’ স্লোগান, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। কর্নাটক, হিমাচল প্রদেশে রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি প্রচারের অন্যতম মুখ ছিলেন প্রিয়ঙ্কাও।

তবে, এর বাইরেও প্রিয়ঙ্কাকে বারাণসী থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করার পিছনে বেশ কিছু রাজনৈতিক কারণও রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রিয়ঙ্কা যদি বারাণসী থেকে মনোনয়ন জমা দেন, তাহলে নরেন্দ্র মোদীকে আরও একবার বারাণসী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই হবে। যদি তিনি কেন্দ্র বদলান, সেই ক্ষেত্রে কংগ্রেস বলতে পারে, তিনি লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় কোনও লোকসভা কেন্দ্র থেকে মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও কঠিন হয়ে পড়বে। সেই ক্ষেত্রেও যুদ্ধ শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে পরাজয় মেনে নেওয়ার অভিযোগ তুলতে পারে কংগ্রেস।

রাজনীতিতে প্রায় দুই দশক কাটিয়ে ফেলেছেন রাহুল গান্ধী। তাঁকে অন্তত ১৫ বার রাজনীতিতে ‘লঞ্চ’ করা হয়েছে বলে কটাক্ষ করে বিজেপি। কিন্তু, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী তুলনায় রাজনীতিতে নবাগত। কংগ্রেসকে অপছন্দ করেন এবং মোদীর সমর্থক, এমন অনেকের কাছেও প্রিয়ঙ্কার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আর রাহুল গান্ধীর মতো কথায় কথায় প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে কটাক্ষও করা যাবে না। পাশাপাশি তিনি মহিলা বলে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অশোভন প্রচারও করা সম্ভব নয়। তাছাড়া প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর মতো বড় নাম বারাণসীতে প্রার্থী হলে, প্রধানমন্ত্রী মোদী, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথ, রাজনাথ সিং, জেপি নাড্ডাদের মতো বিজেপি শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এই একটি কেন্দ্রের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। বিজেপি শীর্ষনেতারা প্রিয়ঙ্কাকে একযোগে আক্রমণ করলে, তা আখেরে প্রিয়ঙ্কার রাজনৈতিক ভাবমূর্তিই বড় করে তুলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে, বিষয়টি এখনও পর্যন্ত একেবারেই প্রাথমিক আলোচনার স্তরে রয়েছে। ২০১৯ সালেও বারাণসী থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা হয়েছিল প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রার্থী হননি তিনি। এই অবস্থায়, পরিবারতন্ত্র নিয়ে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও জোরদার করছে বিজেপি। আরও এক কদম এগিয়ে কংগ্রেসের মূল ভিত্তি গান্ধী-নেহেরু ঐতিহ্যের ইতিহাসে আঘাত করতে শুরু করেছে শাসক শিবির। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, সোমবার, দেশজুড়ে বিজেপি ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ পালন করছে। দেশভাগে বিপর্যস্ত পরিবারবর্গের দুঃসহ স্মৃতির প্রতি সহমর্মিতা জানাতেই এই কর্মসূচি। কিন্তু বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই কর্মসূচির পরোক্ষ লক্ষ্য ধর্মের নিরিখে দেশভাগের দায়ভার গান্ধী-নেহরুর পরিবারের ঘাড়ে চাপানো। এই আখ্যান জনমানসে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা।