Jadavpur University: ৪৫ বছর বয়সেও ফেয়ারওয়েল হয় যাদবপুরে! এতটাই প্রভাবশালী প্রাক্তনীরা

Jadavpur University: র‌্যাগিংয়ের ইতিহাস ঘাটলেই বোঝা যাবে হস্টেলের অন্ধকার ঘরে ঠিক কী কী চলে। আর সবটারই নেতৃত্বে থাকেন হস্টেলের 'সিনিয়র দাদারা।' যে দাদাদের তাণ্ডবে হস্টেলে টেকা দায়। আর সব কিছু জেনেও অন্ধ হয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ তেমনই।

Jadavpur University: ৪৫ বছর বয়সেও ফেয়ারওয়েল হয় যাদবপুরে! এতটাই প্রভাবশালী প্রাক্তনীরা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। Image Credit source: facebook
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 15, 2023 | 7:18 PM

কলকাতা: দেশের মধ্যে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে শীর্ষস্থানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুরে একাধিক হস্টেল। স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য যেমন হস্টেল রয়েছে, তেমনই গবেষকদের থাকার জন্যও রয়েছে হস্টেল। সব মিলিয়ে ১০টি হস্টেলে এখন ছাত্র, গবেষকরা থাকেন। স্নাতক স্তরের হস্টেলগুলিতেই যত গণ্ডগোল। তুলনামূলক ভাবে শান্ত থাকে গবেষকদের হস্টেল। র‌্যাগিংয়ের ইতিহাস ঘাটলেই বোঝা যাবে হস্টেলের অন্ধকার ঘরে ঠিক কী কী চলে। আর সবটারই নেতৃত্বে থাকেন হস্টেলের ‘সিনিয়র দাদারা।’ যে দাদাদের তাণ্ডবে হস্টেলে টেকা দায়। আর সব কিছু জেনেও অন্ধ হয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ তেমনই। তার কারণও এই সিনিয়র দাদাদের ভয়ে। কর্তৃপক্ষ কিছু করলেই রাতভর চলবে অবস্থান-বিক্ষোভ। যাদবপুরের এই বাস্তব সকলের জানা। কী করে এত ক্ষমতা আসে প্রাক্তন পড়ুয়াদের হাতে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে দাদাদের ‘দাদাগিরির’ কয়েকটা নমুনা দেখাই।

৪৫ বছরেও ফেয়ারওয়েল: যাদবপুরের হস্টেলের ব্লকে ব্লকে ‘দাদা’ আলাদা। সেই ব্লক সেই দাদার অধীনে। সেখানে তিনিই শেষ কথা। ক্যাম্পাসে কান পাতলেই শোনা যায় ৪৫ বছর বয়সী এক দাদার কথা। তিনি ৪৫ বছর বয়সে নাকি হস্টেল থেকে ফেয়ারওয়েল পেয়েছিলেন। পরিস্থিতি এতটাই আনন্দের ছিল যে, সেই দাদার ফেয়ারওয়েলে হস্টেলে জারি হয়েছিল হুইপ। থাকতে হয়েছিল সব আবাসিককে। ইচ্ছে থাক বা না থাক ‘দাদারা’ বলে দিয়েছেন মানেই থাকতে হবে, এই ছিল নিদান। হাসতে হাসতে ফেয়ালওয়েল নিয়ে সেদিন ব্লকের ব্যাটন অন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ওই দাদা।

এমটেক অ্যান্ড কন্টিনিউয়িং: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় সে রাতে হস্টেলে ঢুকতে পারেনি পুলিশ। যাদবপুর থানার আধিকারিকরা হস্টেলে গিয়ে দেখেন মেন গেটে তালা দেওয়া। চেষ্টা করেও হস্টেলে ঢুকতে পারেননি অফিসাররা। সূত্রের খবর, যার নিদানে সেদিন হস্টেলের মেন গেটে তালা পড়েছিল, তিনি নাকি ৬ বছর আগে এমটেক করে ফেলেছেন। তবু হস্টেলের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান, তাই হস্টেল ছেড়ে তিনি যেতে পারেননি। বয়স ৩০ হতে চললেও হস্টেলই এখনও তার প্রেজেন্ট অ্যাড্রেস।

পার্ক সার্কাস থেকে বিড়ি নিয়ে এসো: রাতবিরেতে দাদাদের ইচ্ছে পূরণ করতে হয় অনেক জুনিয়রকেই। কিন্তু হস্টেলের পাশ আউটরা দাদাগিরিরও নতুন নতুন পন্থা বের করে ফেলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার কথায় জানা যায়, তাকে একরাতে নাকি ৪ বার পার্ক সার্কাস থেকে বিড়ি নিয়ে আসতে হয়েছিল। দাদারা রাত ২টোর সময় নির্দেশ দিলেন, ‘যাও, পার্ক সার্কাস থেকে ১ প্যাকেট বিড়ি নিয়ে এসো।’ সাইকেলে করে যাদবপুর থেকে পার্ক সার্কাস গিয়ে পাঠাতে হল লাইভ লোকেশন। দাদা অ্যাপ্রুভ করার পর, সেখান থেকে এল ১ প্যাকেট বিড়ি। হস্টেল ফেরার পর দাদা ফের বললেন, “এ কী মাত্র ১ প্যাকেট। যাও আরও ২ প্যাকেট নিয়ে এসো।” প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ফের লাইভ লোকেশন দেখিয়ে আরও ২ প্যাকেট বিড়ি নিয়ে এল। সে রাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল মোট ৪ বার।

২০২১ সালেই হয়েছিল র‌্যাগিং: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র‌্যাগিং-এর ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একই অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। কারণ তদন্ত কোনওবারেই এগোয়নি। লকডাউনের পরেই ২০২১ সালে মেন হস্টেলে বাংলা বিভাগেরই এক পড়ুয়া র‌্যাগিং-এর অভিযোগ করেন। সে সময়ও অভিযোগ উঠেছিল, তাকে রেলিংয়ে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়েছিল। এসএফআই সমর্থক ওই পড়ুয়াকে তখন উদ্ধার করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় অধ্যাপকদের। তারপর অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।

কেন অন্ধ কর্তৃপক্ষ?

র‌্যাগিং-এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ ডিন অব স্টুডেন্সের। যে কোনও অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখতে হবে তাঁকে। এমনকী থানাকেও জানাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। ডিন অব স্টুডেন্টস রজত রায়ের দাবি, এর আগে মৌখিক অভিযোগেও তিনি তদন্ত করেছেন। কিন্তু মৌখিক অভিযোগে দেখা যায় তদন্ত এগোলেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় পড়ুয়ারা। তখন বিপদে পড়তে হয় তাঁকেই। আর লিখিত অভিযোগের ক্ষেত্রে উপাচার্য পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করেই দায় ঝেড়ে ফেলেন। ফলে তদন্তের আর শেষ হয় না। আর অন্যদিকে যখনই কর্তৃপক্ষ কোনও কঠোর পদক্ষেপ করে, তখনই একদল পড়ুয়া বসে যায় অবস্থান ঘেরাওয়ে। তাই কোনও সিদ্ধান্তই কার্যকর হয় না এই প্রাক্তনদের বিরুদ্ধে। তাই তারা সর্বেসর্বা। তারা ক্যাম্পাসে পাওয়ারফুল।