Babul Supriyo in TMC: তৃণমূলে এসেই মহুয়ার সৌজন্যে আবেগতাড়িত বাবুল
Babul Supriyo and Mahua Moitra: মহুয়া লিখলেন, "আমার লোকসভার সহকর্মীকে স্বাগত। একসঙ্গে ব্যাট করার জন্য মুখিয়ে আছি। যা আগে ভিন্ন দলে থেকে করতাম।"
কলকাতা: তাঁরা দু’জনেই বলিয়ে কইয়ে সাংসদ। সংসদে তো বটেই বিভিন্ন বিতর্ক সভায় তাঁদের বাক্যবাণ বিরোধী পক্ষকে ধরাশয়ী করে। কিন্তু দুই নেতার সম্পর্কটা মোটেই ভাল নয়। অন্তত এতদিন তাই ছিল। একজন মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra), আরেকজন বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। তবে পাল্টে গেল ছবিটা। একদা দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবার একই দলে। শনিবার বাবুল তৃণমূলে (TMC) যোগ দিয়ে প্রথম টুইটটি করলেন মহুয়ার উদ্দেশে। সেটাও আবার মহুয়ারই টুইট রিটুইট করে।
গত ৩১ জুলাই রাজনীতি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন বাবুল সুপ্রিয়। তার পর শনিবার দলবদল আসানসোলের দু বারের বিজেপি সাংসদের। আর বাবুলের তৃণমূলে যোগদানের পরই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। লিখলেন “আমার লোকসভার সহকর্মীকে স্বাগত। একসঙ্গে ব্যাট করার জন্য মুখিয়ে আছি। যা আগে ভিন্ন দলে থেকে করতাম।”
সেই টুইটটি আবার রিটুইট করে বাবুল লিখলেন, অনেক অনেক ধন্যবাদ। তার পর একটা স্মাইলি দিয়ে জানালেন তিনি আবেগতাড়িত। উল্লেখ্য, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এটাই বাবুলের প্রথম টুইট। আবার সেটাও এমন একজনের যাঁকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করার জন্য আদালতেও যেতে হয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে।
Thank you so much ? touched https://t.co/ruFnTih1oA
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) September 18, 2021
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস। একটি টিভি চ্যানেলের বিতর্কে একদিকে ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। অন্যদিকে মহুয়া মৈত্র। সেখানেই তাঁর সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছেন বাবুল বলে অভিযোগ তোলেন মহুয়া। ‘লাইভ’ তর্কাতর্কি চলার মধ্যেই বাবুল তাঁকে বলে বসেন, “মহুয়া আর ইউ অন মহুয়া”, অর্থাৎ, “মহুয়া আপনি কি মহুয়া খেয়ে আছেন?” উল্লেখ্য, একটি উত্তেজক পানীয় হিসেবে পরিচিত মহুয়া। তাই বিতর্কসভায় বাবুলের ওই মন্তব্যের ঘোরতর প্রতিবাদ করেন তৃণমূল সাংসদ। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আলিপুর থানায় বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে একজন মহিলার সম্মানহানির অভিযোগে বাবুল সুপ্রিয়কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দেয় আদালত।
পরে মহুয়া বলেছিলেনন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার কোনও রকম ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব নেই, কখনও মুখোমুখি কথা পর্যন্ত হয়নি। উনি একজন মন্ত্রী হয়ে, সারা দেশের সামনে, সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এ কথা বলে আমায় অপমান করেছেন। একজন মহিলা হিসেবে আমার আইনি অধিকার আমি বুঝে নেব।’’ অন্যদিকে বাবুল অবশ্য তাঁর মন্তব্যের পক্ষে সওয়াল করে দাবি করেছিলেন, মহুয়ার উত্তেজিত বাক্যবাণের মুখে তিনি নেহাত মজা করেই ওই কথাটা বলেছিলেন। কিন্তু মহুয়ার পাল্টা জবাব ছিল ‘‘মজা কিনা, সেটা আইনই বলবে।’’ এর পর অবশ্য সেই মামলা খারিজ হয়। তবে একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বাবুলের এহেন মন্তব্য করার আগে ভাবনাচিন্তার দরকার বলেও মন্তব্য করে আদালত।
মহুয়া বনাম বাবুল দ্বৈরথ অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনার সময় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া টেনে আনেন দেশের বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গ। পরে টুইটারে সেই বক্তব্যের অংশ বিশেষ তুলে ধরে মঙ্গলবার মহুয়া লেখেন, ‘দেশের বিচারব্যবস্থা পবিত্র নেই। যে দিন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি নিজেই নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের বিচার করেছেন, সেই দিন থেকে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। নিজেকে দোষমুক্ত ঘোষণা করা এবং অবসর নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে নিজের মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পেয়েছেন জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা’।
আর তার প্রেক্ষিতে ময়দানে নামেন বাবুল। তাঁর কটাক্ষ ছিল, ‘লোকসভায় মহুয়া মৈত্রের দেওয়া ভাষণ এ ভাবে পড়তে হবে (লাইনের ভিতরে ভিতরে পড়তে হবে)। আসলে উনি (মহুয়া মৈত্র) এই কথাগুলি বলার সময় নিজের রাজ্যের কথাই বলেছেন। বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ‘স্বৈরতান্ত্রিক প্রধান’-এর কথা’। অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘুরিয়ে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। এহেন বাবুল তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রথম টুইটই করলেন মহুয়ার টুইট রিটুইট করে। তাই হয়ত রাজনীতিকরা প্রায়শই বলেন, ‘রাজনীতি হল সম্ভাবনার শিল্প।’