ভোট ঘোষণার আগেই বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, কতটা ‘সাংবিধানিক’, কী বলছে কমিশন

ভোটের (Bengal Assembly Election 2021) আবহে শনিবারই রাজ্যে এসে পৌঁছেছে ১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসবে ১২৫ কোম্পানি। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

ভোট ঘোষণার আগেই বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, কতটা 'সাংবিধানিক', কী বলছে কমিশন
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Feb 22, 2021 | 2:29 PM

কলকাতা: এখনও ভোটের (Bengal Assembly Election 2021) দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। তার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর বুটের শব্দ শোনা যাচ্ছে এ রাজ্যে। শনিবারই ১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছেছে রাজ্যে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসে যাচ্ছে ১২৫ কোম্পানি। ভোটের এতটা আগে এভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রাজ্যে আসা কার্যত ‘নজিরবিহীন’ ঘটনা। ভোট ঘোষণার আগেই কোনও রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চলে আসা কিংবা নির্বাচনী বিধি কার্যকর হওয়ার আগে তাদের টহলদারি কতটা সাংবিধানিক তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে এ রাজ্যের শাসকদল। বামেরাও খুব জোর দিয়ে এখনও বলেনি, ‘এমনটা হতে পারে’। তবে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি এতে খুশি। কিন্তু রাজনীতির পরিসর থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন জেগেছে, এত আগেভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী কি রাজ্যে আসতে পারে? তার জবাব খুঁজল টিভি নাইন বাংলা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী এর মধ্যে ‘অসাংবিধানিক’ কিছুই দেখছেন না। উল্টে তাঁর দাবি, “নির্বাচন কমিশনকে যে অধিকার সংবিধান দিয়েছে সেই ক্ষমতাবলেই কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনও রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ যেদিন ফুরোচ্ছে তার ৬ মাস আগে থেকে কমিশন এটা করতেই পারে। কমিশন যদি মনে করে অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য এ ধরনের বাহিনী নামানো প্রয়োজনে তা নামাতেই পারে।”

পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিধানসভা ভোট হচ্ছে আরও চার রাজ্যে। কেরল, পদুচেরী, তামিলনাডু, অসম। কিন্তু সেসব রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এত চর্চা নেই। বাংলায় হইচই পড়ে গিয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের সময় বেশ কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর যাওয়া নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিল। তবে সেটা ভোট ঘোষণার পর। ৩০ কোম্পানির কাছাকাছি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল ভোট ঘোষণার পরপরই। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরও ৪০ কোম্পানি আসে। এবার ভোট ঘোষণার আগেই এসে গিয়েছে ১২ কোম্পানি।

এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কমিশন যে খুব একটা সন্তুষ্ট নয় তা বোঝাই যাচ্ছে। হতে পারে সে বার্তা দিতেই এই বাহিনী পাঠানো। আবার এমনটাও হতে পারে রাজ্য প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাদের মনে। গত কয়েক মাসে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গোলমালের বহু অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার খবর পৌঁছেছে দিল্লি অবধি। সূত্রের খবর, কমিশনও বিশেষ নজর দিচ্ছে এ রাজ্যে। এর আগে নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা যখন কলকাতায় এসেছিলেন, জেলাওয়ারি রিপোর্ট জানতে চেয়েছিলেন তিনি। ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনও এসে বেশ কড়া বার্তাই দিয়ে গিয়েছিলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের।

আরও পড়ুন: ভোটের ডিউটি করতে হবে’, চিঠি এল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে

এত আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসা নিয়ে ব্রাত্য বসু রবিবার বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ২০২১ সালের বাংলা বিধানসভা ভোটকে আসলে কার্গিলের যুদ্ধ বলে মনে করছে। এরপর ওরা সাঁজোয়া গাড়ি, সীমান্তে প্রহরায় থাকা ট্যাঙ্কও পাঠাবে।” তবে দমদমে বসে ব্রাত্য যখন এমন গুরুগম্ভীর কথা বলছেন, তাঁরই দলের এক নেতা ভাঙড়ে বসে অন্য সুর ধরেছেন। তৃণমূল নেতা মোদাসসের হোসেন প্রকাশ্য সভায় বলেছেন, “আমাদের এলাকায় তৃণমূলের লোক ছাড়া অন্য কেউ ভোট দিতে যেতে পারবে না। বুথে থাকবে আধা সামরিক বাহিনী, মাঠে থাকবে আমাদের ছেলেরা।” রাজনৈতিক মহলের দাবি, শাসকদলের দুই নেতার বক্তব্যের সুর আলাদা হলেও, এ কথা স্পষ্ট, বাহিনী একটা আলাদা চাপে রাখবে যে কোনওরকম বিশৃঙ্খলাকে।

কলকাতার প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ সত্যজিৎ ব্যানার্জির বক্তব্য, “কমিশনের ফুল বেঞ্চ এ রাজ্যে এসেছিল। একাধিকবার কমিশনের প্রতিনিধিরা এসেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এ রাজ্যে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে গেলে কী প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই দিনক্ষণ ঘোষণার আগে এই বাহিনী পাঠানো হয়েছে।” সত্যজিৎবাবুর সংযোজন, “কমিশন যে কোনও সময়ই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে পারে। অনেক সময় এমন হয়, দিন ঘোষণা হয়ে গেলেও বাহিনী পাওয়া যায় না। সে কারণেই আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখছে তারা। এ ছাড়া যে এলাকায় বাহিনী কর্তব্যরত থাকবে, সেটা হাতের তালুর মতো চেনা দরকার। আগেভাবে এলে তাদেরও সুবিধা হয়।”

আরও পড়ুন: কবে ভোট, কে প্রার্থী কিচ্ছু জানা নেই, পুরুলিয়ায় বিজেপি প্রার্থীর ‘সমর্থনে’ ব্যানার

সত্যজিৎবাবু কথার রেশ আরেক প্রাক্তন পুলিশ কর্তার গলাতেও। ওই প্রাক্তন পুলিশ কর্তা জানান, এ রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সর্বকালীন খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে। তবে এর দায় শুধু শাসকদলের দিকে ঠেললেই হবে না। এই পরিবেশ রক্ষার ভার বিরোধীদেরও। এ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তা নিয়ে কোনও আগ্রহই নেই। ফলে নির্বাচনকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন যা প্রয়োজন মনে করেছে সেটাই করেছে।

নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের অনেকের মতে, কমিশন চাইলে ছ’মাসের মধ্যে আইন শৃঙ্খলার খাতিরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আনতেই পারে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য কমিশনের এই সিদ্ধান্তে অন্য বার্তা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “কমিশন বুঝেছে বাংলায় আইনের শাসন নেই। তাই ভোট ঘোষণার আগেই বাহিনী পাঠিয়েছে। কিন্তু এরা কী করবে। এরা তো বিজেপি নেতাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছে। রাজ্যপুলিশ শাসকদলকে নিরাপত্তা দেবে, আর কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপিকে। কমিশনকে বলব মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন।”