Plastic Ban in West Bengal: প্লাস্টিক নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত রাজ্যের, জুলাই মাস থেকেই সতর্ক থাকুন
১ জুলাই থেকেই নয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী। ৭৫ মাইক্রনের নীচের প্লাস্টিক ব্যবহার করলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশে দূষণ ছড়ানোয় প্লাস্টিকের ভূমিকার কথা বারবার বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে যখন গোটা বিশ্বের প্রায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে, তখন প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে বাংলাতেও। জুলাই মাস থেকেই প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশ টানতে চলেছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার বিধানসভায় এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী রত্না দে নাগ। তিনি জানিয়েছেন, ১ জুলাই থেকে রাজ্যে ৭৫ মাইক্রনের নীচের প্লাস্টিক বিক্রি বা ক্রয় করা যাবে না। কেউ যদি তারপরও প্লাস্টিকের ব্যাগ বা অন্য কোনও জিনিস কেনা-বেচা করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরের তরফে প্লাস্টিক তৈরির কারখানাগুলোতে পরিদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
জারি হয়েছে বিজ্ঞপ্তি
এ দিন বিধানসভার অধিবেশনে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের প্রশ্ন ছিল, ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক উৎপাদনকারীদের উৎপাদন বন্ধ করার জন্য কী কী ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে? উত্তরে দফতরের মন্ত্রী রত্না দে নাগ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ দফতর ইতিমধ্যেই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের জিনিস উৎপাদন, মজুত, বিতরণ, বিক্রি ও ব্যাবহার নিষিদ্ধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৬-র বিধি অনুসারে ১ জুলাই, ২০২২ থেকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে ৭৫ মাইক্রনের নীচের প্লাস্টিক।
নিষিদ্ধ তালিকায় কী কী থাকছে?
প্লাস্টিকের কাঠি-সহ ইয়ার বাড, বেলুনের জন্য প্লাস্টিকের লাঠি, প্লাস্টিকের পতাকা, আইসক্রিমের স্টিক, পলিস্টেরিন (থার্মোকল), প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, কাঁটাচামচ, চামচ, ছুরি, নল, মিষ্টির বাক্সের চারপাশে মোড়ানোর কাগজ সহ একাধিক জিনিস রয়েছে ওই তালিকায়।
এই বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে অবহিত করা জন্য বিভিন্ন সংস্থা, রাস্তার বিক্রেতা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, স্কুল, কলেজ, অফিস, হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তা পাঠানো হয়েছে সরকারের তরফে। ৩০ জুন ২০২২ চিহ্নিত জিনিসপত্রগুলির ব্যবহার শেষ করতে হবে।
ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন…
১ জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। রাজ্যে ১০২৬টি কারখানা রয়েছে, যাঁরা প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করে। তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরি করা যাবে না।
ব্যবহার করলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
মন্ত্রী জানিয়েছেন, যাঁরা এই বিজ্ঞপ্তি মানবেন না তাঁদের পণ্য বাজেয়াপ্ত করা, পরিবেশগত ক্ষতির ক্ষতিপূরণ ধার্য করা, শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা সহ পরিবেশ সুরক্ষা আইন, ১৯৮৬ অনুসারে একাধিক পদক্ষেপ করা হবে।
হলদিয়া পেট্রো কেমিক্যাল লিমিটেড ও আই ভি এল ধানসেরী পেট্রো কেমিক্যাল ইন্ড্রাট্রিস লিমিটেডের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক সেরেছে রাজ্য সরকার। তাদের বলা হয়েছে, যাতে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যাগ প্রস্তুতকারী কারখানাগুলিকে প্লাস্টিক দানা সরবরাহ না করা হয়।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের পক্ষ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্যের ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়। সেই সমীক্ষা রিপোর্টে রাজ্যে ১৯১ টি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ উৎপাদনকারী কারখানা চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ উৎপাদন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের তথ্য এবং সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, এ রাজ্যে প্লাস্টিকের উৎপাদক ও ব্র্যান্ড মালিকের সংখ্যা ১১৯৪ টি। পরিষদের পক্ষ থেকে এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের যথাক্রমে ৫০০ টাকা ও ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে মোবাইল অ্যাপ, পরিবেশ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যেখানে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ উৎপাদন, মজুত, ব্যবহারের হদিশ দিলেই জনগণকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।