দু’দিনে পদ্মের ২ উইকেট, পতন রুখতে ক্রিজে দিলীপ-শুভেন্দু, গুগলি দিচ্ছে তৃণমূলও

বিজেপি যতই এক থাকার বার্তা দিক না কেন, তৃণমূলও দল ভাঙানোর উস্কানি দিতে ছাড়ছে না।

দু'দিনে পদ্মের ২ উইকেট, পতন রুখতে ক্রিজে দিলীপ-শুভেন্দু, গুগলি দিচ্ছে তৃণমূলও
ছবি-Facebook
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 01, 2021 | 9:09 PM

কলকাতা: ভোটের চার মাস কাটতে না কাটতেই বঙ্গ বিজেপির অন্দরে বইতে শুরু করেছে চোরা স্রোত। কারণ ৭৭ থেকে বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে হয়েছে ৭২। বঙ্গজয়ের স্বপ্নপূরণ অধরাই থেকেছে বিজেপির। সেই হতাশা পুরোপুরি সামলে ওঠার আগেই একের পর এক ধাক্কা খেতে শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি। পর পর তিন জন বিধায়ক দল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। মাথাচাড়া দিচ্ছে নানা অসন্তোষ। ফের সামনের সারিতে এসে গিয়েছে আদি-নব্য বিবাদ। এই অবস্থায় বুধবার ঘর সামলাতে শিলিগুড়িতে উত্তরের দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কলকাতাতেও দক্ষিণের বিধায়কদের নিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন দিলীপ-শুভেন্দু। কিন্তু বিজেপি যতই এক থাকার বার্তা দিক না কেন, তৃণমূলও দল ভাঙানোর উস্কানি দিতে ছাড়ছে না।

বুধবার উত্তরবঙ্গের বৈঠকে প্রায় ৭ বিধায়ক অনুপস্থিত ছিলেন বলে খবর। যা বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের। এরই মাঝে বিজেপির আজকের সাংবাদিক বৈঠক যেন কিছুটা ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শুভেন্দু যদিও এ দিনের বৈঠকে কটাক্ষের সুরে বলেছেন, “তৃণমূল ২১৩ টা আসন জেতার পরও ওদের আরও বিধায়ক দরকার।”

ভোটের পরই মুকুল রায় ফিরে গিয়েছেন ঘাসফুলে। সোমবার বিষ্ণপুরের বিজেপি বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, মঙ্গলবার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ফুলবদল করেছেন। নির্বাচনের আগে ছোট ফুল ছেড়ে বড় ফুলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছিল। এবার কি উল্টো স্রোতের ইঙ্গিত? দু’দিনে পরপর দুটো উইকেট পড়ে যাওয়ায় পর কিন্তু দুশ্চিন্তা অল্প অল্প করে হলেও গ্রাস করতে শুরু করেছে পদ্মশিবিরকে। কারণ উত্তরবঙ্গের বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন খানছয়েক বিজেপি বিধায়ক।

সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির বৈঠকে গোপাল চন্দ্র সাহা, বিবেকানন্দ বাউরি, মনোজ ওঁরাও, অশোক লাহিড়ি, সত্যেন্দ্রনাথ রায়, জুয়েল মুর্মু, এবং দিবাকর গোস্বামী গরহাজির ছিলেন। অশোক লাহিড়ি দিল্লিতে রয়েছেন, বাকিরা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিত ছিলেন বলে খবর। কিন্তু, কী শিলিগুড়ি, কী কলকাতা। কোথাওই বিজেপির সমস্ত বিধায়ক হাজির হলেন না।নানারকম কারণ দেখিয়ে গরহাজির রইলেন তাঁরা। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এই অনুপস্থিতি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না।

বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর দিলীপ ঘোষ দাবি করেছিলেন, বিধায়করা কেউ যাবেন না। এদিন, দল অটুট থাকার বার্তা দিতে গিয়েও তিনি স্বীকার করে নিলেন, সেদিন ভুল হয়ে গিয়েছিল বিলকুল। দিলীপবাবু বলেন, “মুকুলবাবুর মতো নেতা যাঁকে আমরা প্রথমবার জয়ী হওয়ার স্বাদ দিয়েছিলাম, যিনি আমাদের দলেও সর্বোচ্চ নেতৃত্বে ছিলেন। এই সব নেতার উপর যদি ভরসা না করা যায় তবে রাজনীতির পতন হয়েছে মনে করতে হবে। আমি এদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, হয়তো কোথাও ভুল হয়েছিল।”

শুভেন্দু অবশ্য দলত্যাগী এই বিধায়কদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিছুটা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সুরেই তিনি বলেছেন, “যারা গিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে বিজেপির পরিষদীয় দলের কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও দিন তাঁরা বিজেপির পরিষদীয় দলের ঘরেও যাননি। এদের সঙ্গে চার মাস দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ঠিক করেছি, দলত্যাগ বিরোধী আইন আমরা কার্যকর করব। সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে, এই মামলা তিন মাসের মধ্যে রায় দিতে হবে। তাই আমাদের লড়াই জারি থাকবে।”

ফলে নতুন করে দলের ভাঙন যে বিজেপি সহ্য করতে নারাজ, সেই বার্তা এ দিনের বৈঠকে মোটামুটি স্পষ্ট করেই দিয়েছেন দিলীপ শুভেন্দুরা। যদিও তৃণমূল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, “অন্তত ১২ জন বিধায়াক শুভেন্দু আর বিজেপিকে সহ্য করতে পারছেন না।” এরা সকলেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছেন বলে দাবি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের। ফলে বিজেপি যতই দল ধরে রাখার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, ভাঙন যে ভবিষ্যতেও দেখা যেতে পারে, সেই আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা: হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ রাজ্যের