CPIM: দলে ঐশী, মীনাক্ষিরা যথেষ্ট নয়, টার্গেট পূরণে ব্যর্থ সিপিএম!

গত ১২ ও ১৩ অগস্ট সাংগঠনিক আলোচনায় বসেছিল সিপিএম। সেখানে ভোটের ভরাডুবি থেকে 'বাংলা শূন্য' হওয়ার কারণ, কিংবা জোটের প্রভাব সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর।

CPIM: দলে ঐশী, মীনাক্ষিরা যথেষ্ট নয়, টার্গেট  পূরণে ব্যর্থ সিপিএম!
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 24, 2021 | 3:00 PM

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: একুশের বিধানসভা ভোটের আগে সিপিএমের প্রার্থী তালিকা সামনে আসতেই অনেকের মনে হয়েছিল এবার বোধহয় পাকা চুলের জমানা শেষ হতে চলেছে। কালো চুলের উপরই ভরসা রাখতে চাইছে সিপিএম। এবারের ভোটে সংগঠনের মুখ হয়েছে যাঁরা, তাঁদের একটা বড় অংশই তরুণ-তুর্কি। তালিকায় ছাত্র-যুব নেত্রীর সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। কিন্তু ভোটবাক্সে এই তরুণ দল কোনও চমকই ধরাতে পারল না। কেন পারল না? প্রচারে তো কোনও খামতি রাখেননি মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধররা! তা হলে যুবদের ভোট কেন ঘরে তুলতে পারলেন না তাঁরা? সূত্রের খবর, সংগঠন সম্পর্কিত এক পর্যালোচনায় এই ভরাডুবির কারণ খুঁজতে নেমে উঠে এসেছে একের পর এক হতাশাজনক তথ্য। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ঐশী ঘোষ, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধর-সহ একাধিক তরুণ প্রার্থীকে ভোটের রাজনীতিতে দেখা গেলেও আদতে যে মহিলা বা যুবদের সংগঠনে আনা যায়নি, তা স্বীকারও করে নিয়েছে দল। একই সঙ্গে বিগত বছরে ৩৭৯  জন প্রার্থী সদস্যপদও যে খারিজ হয়েছে, তার দায়ও পার্টির, রিপোর্টে বলা হয়েছে সে কথাও।

গত ১২ ও ১৩ অগস্ট সাংগঠনিক আলোচনায় বসেছিল সিপিএম। সেখানে ভোটের ভরাডুবি থেকে ‘বাংলা শূন্য’ হওয়ার কারণ, কিংবা জোটের প্রভাব সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর। সেখানেই বর্তমান প্রজন্ম ও সিপিএম নিয়ে উঠে এসেছে বেশ কিছু হতাশাজনক তথ্যও। মহিলাদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে দুর্বলতা বরাবর ছিল। তাই হয়ত মহিলা ভোটারদের দলে টানা যায়নি বলে মনে করছেন সিপিএমের একাংশ। অর্থাৎ এমনটা বলাই যায়, কয়েকটি নামকে সামনে এনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি বলে বাস্তব পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও বাস্তব কিন্তু বলছে তরুণ মহিলাদের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক কয়েক যোজন দূরে। রীতিমতো পরিসংখ্যান নিয়ে তা দলের অন্দরে তুলে ধরা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

এখন সিপিএমে মহিলা সদস্যের সংখ্যা মাত্র ১০.৭৫ শতাংশ। কলকাতা প্লেনামে সংগঠন লক্ষ্য নিয়েছিল ২৫ শতাংশ মহিলার অন্তর্ভূক্তি। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে লক্ষ্যের অর্ধেকও ছুঁতে পারেনি তারা। ২০২০ সালের থেকেও এবার খারাপ অবস্থা সিপিএমের। ২০২০ সালে মহিলা সদস্যর সংখ্যা ছিল ১০.৯৬ শতাংশ। ভোটের বাংলাও সেটাও কমে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে ৩১ বছর বয়সী সংগঠনের দলের সদস্য মাত্র ৮.৭০ শতাংশ। অথচ প্লেনামে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কমপক্ষে ২০ শতাংশ সদস্য এই অংশে হওয়া প্রয়োজন।

মহিলা পার্টি শাখার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়নি। ছাত্র শাখা সংগঠনেরও অবস্থা তথৈব চ। ২০১৬ সালে রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনাম নির্দেশ দিয়েছিল, “প্রতি শাখায় কমপক্ষে ১ জন মহিলা ও অপেক্ষাকৃত তরুণ বিশেষত ৩১ বছরের কমবয়সীদের আপাতত অন্তত ২ জনকে অন্তর্ভূক্ত করতেই হবে।” বর্তমানে এই ছবি যে মোটেই আশা ব্যঞ্জক নয়, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে সিপিএম।

২০১৭ সাল থেকেই বাম শিবিরে ভাটা দেখা দেয়। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে একটাও আসন জেতেনি বামেরা। অথচ ২০০৭ সালে ৩৭টিতে তাদের রাজত্ব ছিল। একুশের বিধানসভা ভোটে একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল বামেরা। বাংলার রাজনীতিতে একেবারেই অপাংক্তেয়। তরুণ মুখ এনেও অক্সিজেন জোগানো গেল না। কারণ! উপরে উপরে যতই তারুণ্যের হাওয়া চলুক না কেন, দলের খোলনলচে এখনও মরচে ধরাই। না হলে রিপোর্টে লিখতে হতো না, “তরুণ বলতে ১৮-১৯ বছর বয়সীর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। তবে ব্যতীক্রমী উদাহরণও রয়েছে। কোনও কোনও জেলায় সম্পাদকমণ্ডলী এরিয়া কমিটি থেকে প্রস্তাবিত সদস্যপদে মহিলা ও ৩১ বছরের কম বয়সি না থাকলে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও ঘটেছে। বিগত বছরে ৩৭৯ জনের প্রার্থী সদস্যপদ খারিজ করেছে। এটা অভিপ্রেত নয়। এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকে গ্রহণ করতে হবে।” আরও পড়ুন: কোথায় সমস্যা? সমাধানই বা কীসে? লক্ষ্মী-বিভ্রাটে এবার সরকারি কর্মচারীদের শরণাপন্ন তৃণমূল