‘তিন বছর বহিষ্কারের শাস্তি অনেক বেশি’, বিশ্বভারতী মামলায় বললেন বিচারপতি, আন্দোলন তুলে নেওয়ার নির্দেশ

Visva Bharati University: গত ২৭ অগস্ট থেকে আন্দোলনে বসেছেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা। আজ সেই আন্দোলন তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

'তিন বছর বহিষ্কারের শাস্তি অনেক বেশি', বিশ্বভারতী মামলায় বললেন বিচারপতি, আন্দোলন তুলে নেওয়ার নির্দেশ
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 08, 2021 | 1:00 PM

কলকাতা: বিশ্বভারতীতে চলা ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে, তিন বছর বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পড়ুয়াদের জন্য তা অনেক বেশি শাস্তি বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বা বাইরে কোনও ধরনের আন্দোলন করা চলবে না বলে আজ জানিয়েছে হাইকোর্ট। তবে এখনই আন্দোলন তুলে নেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য, পঠন-পাঠনে ফিরে যাওয়া সহ তাঁদের সব দাবি এখনও মেনে নেওয়া হয়নি। তাই আন্দোলন তোলা হবে কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২৭ অগস্ট বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তিন ছাত্রকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ। সেই ইস্যুই গড়ায় আদালত অবধি। আজ সেই মামলার শুনানিতে আন্দোলন তুলে নেওয়ার কথা বলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। দু’সপ্তাহের জন্য মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

‘ছাত্ররা ভুল করলে ক্ষমা চাইবে, এ কি ধরনের আচরণ?’

এ দিনের শুনানিতে ছাত্রদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘শাস্তি হিসেবে তিন বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয় পড়ুয়াদের। ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, ছাত্ররা ভুল করলে ক্ষমা চাইবে ক্লাসে যাবে। এটা কী ধরনের আচরণ? বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, ‘ধরে নিলাম ভিসি-র আচরণ খুব খারাপ। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা কোর্টে আসতে পারতেন। এ ভাবে প্রতিবাদ কেন? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি আইন-আদালত করার আর্থিক সামর্থ্য নেই পড়ুয়াদের। তিনি  বলেন, ‘টাকা কোথায় ছাত্রদের?’ ভিসির আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ভিসির গাড়ি পরীক্ষা করছে ছাত্ররা? এটা কী ভাবে সম্ভব?’

ছাত্রদের সঙ্গে যা হয়েছে সেটা ঠিক নয়: বিচারপতি

বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি যে ছাত্রদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটাও ঠিক হচ্ছে না। আমি ছাত্রদের সাসপেনশন তুলে দিতে বলছি। কিন্তু কোনও বাইরের লোক আসবে না। ছাত্ররা আন্দোলন বন্ধ করবে। কোনও রাজনৈতিক দলের নাক গলানো চলবে না।’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনেক বেশি শাস্তি।’ তবে বিচারপতি সাফ জানিয়েছেন, ভিতরে বা বাইরে সব আন্দোলন বন্ধ করতে হবে।

বিশ্বভারতী চত্বরে না হোক, রেল স্টেশনে আন্দোলন করতে দেওয়ার আর্জি জানান পড়ুয়াদের পক্ষের আইনজীবী। কিন্তু বিচারপতি সেই আর্জিও খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, ‘দু’সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হল। আশা করা হচ্ছে সবাই এই সমস্যার সমাধান করবে।’

আগে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট:

এর আগে আদালতের নির্দেশের পর একটু একটু করে স্বাভাবিক হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি। কলকাতা হাইকোর্ট আগেই কড়া বার্তা দিয়েছিল যাতে দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। এরপরই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে নোটিস  দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিশ্বভারতীর ভর্তি প্রক্রিয়া ও ফল প্রকাশের কাজ চলবে।

গত ২৭ অগস্ট বিশ্বভারতীতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তিন ছাত্রকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ। যা ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে থাকে রবি-তীর্থের পরিস্থিতি। ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ এবং রূপা চক্রবর্তীকে তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পদার্থ বিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক পীযুষকান্তি ঘোষ ও অরণি চক্রবর্তীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাসপেন্ড করে বিশ্বভারতী। আচমকা এই সাসপেনশন ও পড়ুয়াদের বরখাস্তের নোটিসে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশ।

আবেদনে কী জানিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ?

সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন জমা দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই পিটিশনে বলা হয়, পুলিশ ও আধিকারিক নিয়োগ করে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার নির্দেশ জারি করুক আদালত। পাশাপাশি, সেন্ট্রাল অফিসের সামনের গেটে পড়ুয়াদের তালা ঝোলানো, গেট টপকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে। ৩৮ পাতার সেই পিটিশনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। এমনকি, পুলিশ সুপারকে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ। আরও পড়ুন: ফের পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তলব করল সিবিআই