Calcutta High Court : ৩৬ বছরের লড়াই শেষে মুখে হাসি, হাইকোর্টের নির্দেশে বকেয়া বেতন পাবেন ৭৬ বছরের প্রাক্তন শিক্ষিকা
Calcutta High Court : আদালতের নির্দেশে পর শ্যামলী ঘোষ বলেন, "অনেক যন্ত্রণা ছিল, অনেক যন্ত্রণা রয়েছে। যে জীবন চলে গেল, সেটা তো আর ফিরে পাব না। শুধু মনে হয়, এ জীবন এত ছোট কেন।"
কলকাতা : স্কুলে চাকরির চার বছরের মাথায় সমস্যা শুরু। ২৫ বছর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পাননি বেতনও। ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে না-পারার যন্ত্রণা নিয়েই দ্বারস্থ হয়েছিলেন হাইকোর্টের। ৩৬ বছর পর পেলেন বিচার। ২৫ বছরের বকেয়া বেতন এরিয়ার সহ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আজ হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশের পর চোখ ভিজে ওঠে ৭৬ বছরের প্রাক্তন শিক্ষিকা শ্যামলী ঘোষের। তবে এ জল যুদ্ধজয়ের। পাশে দাঁড়ানো ছেলের চোখেও তখন জল।
১৯৭৬ সালে বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে হাওড়ার শ্যামপুর হাইস্কুলে যোগ দিয়েছিলেন শ্যামলী ঘোষ। সমস্যা শুরু ১৯৮০ সাল থেকে। মাত্র চার বছর কাজ করার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানিয়ে দেন, আর স্কুলে আসতে হবে না। প্রধান শিক্ষকের এই নির্দেশের কারণ তিনি জানতে পারেননি। অভিযোগ, স্কুলে গেলেও তাঁকে লোক দিয়ে বের করে দিতেন প্রধান শিক্ষক। ১৯৮৬ সালে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন শ্যামলী দেবী। ২০০৫ সালে অবসর নেন তিনি। যদিও স্কুলে তখনও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
২০১৩ সালে বিচারপতি অশোক কুমার দাস অধিকারী শিক্ষিকার যাবতীয় বেতন ও পেনশন দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পর পেনশন দেওয়া হলেও বেতন দেয়নি বোর্ড। বছরের পর বছর কাটলেও শিক্ষিকার মামলার সুরহা হয়নি। আর্থিক অনটনের জন্য আইনজীবী ছাড়া নিজেই মামলার শুনানিতে অংশ নেন। ছিয়াত্তরের বৃদ্ধাকে দেখে শেষমেশ তাঁর মামলা দ্রুত শোনার আর্জি গ্রহণ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিলাল মৈত্র তাঁর হয়ে মামলার সওয়াল করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরও বৃদ্ধাকে তাঁর প্রাপ্য না মেটানোয় ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরিয়ার সহ যাবতীয় বেতন দেওয়ার নির্দেশ দেন। যার মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে ১০% সুদ সহ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে স্কুল এডুকেশন কমিশন তাঁকে পাওনা মিটিয়ে দেবে। টানা ছত্রিশ বছরের লড়াইয়ের শেষে আশার আলোয় এজলাসেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। তাঁর সিএ পাঠরত ছেলের চোখেও তখন জল। বিচারপতি বলেন, “আমার ঘরে আসা বৃদ্ধ নাগরিককে খালি হাতে ফেরাতে পারি না।” আদৌ টাকা বৃদ্ধার হাতে পৌঁছাল কি না তা জানতে মামলার নিষ্পত্তি করেননি তিনি।
আদালতের নির্দেশের পর শ্যামলী ঘোষ বলেন, “ভাল লাগছে। অনেক আগে হলে খুবই ভাল লাগত। আদালত না থাকলে সাধারণ মানুষের যে কী অবস্থা হত, সেটা ভাবা যায় না। আদালত আছে বলেই সাধারণ মানুষ বিচার পান।”
২৫ বছর পড়ুয়াদের পড়াতে না-পারার যন্ত্রণা যে আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন, সেটাই তাড়া করছে ৭৬ বছরের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষিকাকে। বললেন, “অনেক যন্ত্রণা ছিল, অনেক যন্ত্রণা রয়েছে। যে জীবন চলে গেল, সেটা তো আর ফিরে পাব না। শুধু মনে হয়, এ জীবন এত ছোট কেন।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথা আজ বড্ড মনে পড়ছে তাঁর- “আজি এল হেমন্তের দিন। কুহেলীবিলীন, ভূষণবিহীন। বেলা আর নাই বাকি, সময় হয়েছে নাকি–” চশমা খুলে চোখ মুছলেন বৃদ্ধা। ছলছল করছে চোখ দুটো। তবে এ অশ্রু যুদ্ধজয়ের।