উপর থেকে ‘নির্দেশ’ আসায় ১০ কোটি টাকা নয়-ছয়! রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা হাইকোর্টের

কেন প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে? কেনই বা পদক্ষেপ করা হল না? বৃহস্পতিবার তা নিয়েই রাজ্যকে মারাত্মক ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট।

উপর থেকে 'নির্দেশ' আসায় ১০ কোটি টাকা নয়-ছয়! রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা হাইকোর্টের
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 26, 2021 | 10:53 PM

কলকাতা: আবারও হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। বন্যায় ক্ষতিপূরণের প্রায় ১০ কোটি টাকা নয়-ছয়ের করার অভিযোগে ওঠার পর ২ বছর কেটে গেলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে? কেনই বা পদক্ষেপ করা হল না? বৃহস্পতিবার তা নিয়েই রাজ্যকে মারাত্মক ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট। এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশ মাসখানেক আগেই জারি করার পরও এতদিনে উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ না করায় আদালত রীতিমতো তুলোধোনা করে রাজ্যকে।

২০১৭ সালের বন্যায় মারাত্মক ক্ষতি হয় মালদার। ক্ষতিগ্রস্ত হন অগুনতি মানুষ। সেই সময় রাজ্য সরকারে তরফে জানানো হয়, যে সমস্ত মানুষের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, সেই বাড়ির মালিকদের ৭০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী প্রায় ১৪ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি হয়। তাতে সিলমোহর দেন খোদ বিডিও। সেই মতো প্রায় সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, এই ১৪ হাজার নামের তালিকায় গরমিল রয়েছে।

কী ধরনের গরমিল? মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তালিকায় থাকা ১৪ হাজার নামের মধ্যে ৭ হাজার ব্যক্তি এমন রয়েছেন যারা কেবলমাত্র একটি ফোন নম্বরের অধিকারী। বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হতে ২০১৯ সালে বিডিও নিজেই স্বীকার করে নেন, কোথাও একটা ‘দুর্নীতি’ হয়েছে। কী ভাবে হল সেই দুর্নীতি? সূত্রের খবর, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে ৬ জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে সেই কমিটি গ্রাহকদের তালিকা তৈরির পর রাতারাতি স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান একটি তালিকা তৈরি করেন। বিডিও নিজের বক্তব্যে জানিয়েছেন, তাঁকে উপর থেকে ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়, যে কোনও দিন লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে। তাই তালিকা খতিয়ে না দেখেই প্রধানের ওই তালিকা ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিডিও নিজে দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নিলেও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর ছাড়া আর কিছুই করেনি প্রশাসন। এতেই বেজায় চটেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। মামলাটি আদালতে উঠলে এ দিন ভর্ৎসনা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে বিচারপতি বলেন, “মামলার একমাস হয়ে গেলেও কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি? ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে আর আপনারা বসে আছেন? অভিযুক্তকে শুধু নোটিস পাঠানো উপযুক্ত পদক্ষেপ নয়। আপনি এজি হয়ে পুলিশের কাঁধে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলবেন, তা হতে পারে না।”

সূত্রের খবর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের শুধু প্রধানের বিরুদ্ধেই এফআইআর করলে হবে না। এই কেলেঙ্কারির পিছনে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের সকলের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে, এবং প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। আরও পড়ুন: রাজ্যের উপর ভরসা নেই কেন্দ্রের, সিবিআই অফিসারদের নিরাপত্তায় আধাসেনা দিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক