CPIM: তৃণমূল-বিজেপির ‘গোপন বোঝাপড়া’ নিয়ে ভাবলে ‘ভুল’ হবে, হঠাৎ করে এখন মনে হচ্ছে সিপিএমের!
অথচ এই সিপিএমের ভোট প্রচারেই বার বার 'বিজেমূল' শব্দের ঘুরপাক দেখেছে বঙ্গবাসী। বিজেপি ও তৃণমূলকে মিলিয়ে 'দ্বিমেরুত্বের' রাজনীতির কথা বঙ্গবাসীর মনে গেঁথে দিতে চেয়েছে লাল ঝান্ডাধারীরা।
প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাংগঠনিক আলোচনায় বসেছিল সিপিএম। এই আলোচনার যে রিপোর্ট উঠে এসেছে, তাতে একের পর এক অবাক করা উপলব্ধির বিচ্ছুরণ। গত ১২ ও ১৩ অগস্ট সাংগঠনিক আলোচনায় বসেছিল সিপিএম। সেখানে ভোটের ভরাডুবি থেকে ‘বাংলা শূন্য’ হওয়ার কারণ, কিংবা জোটের প্রভাব সমস্ত কিছু নিয়েই আলোচনা হয়। একইসঙ্গে আত্মসমালোচনার বেশ কিছু দিকও তুলে ধরে তারা। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, ‘তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে তীব্র মেরুকরণ’ ভাঙতে চেয়েছিল সিপিএম। যাতে পুরোপুরি ‘ব্যর্থ’ তারা। তবে এ কথায় নতুন কিছু নেই। কারণ, এমন দাবি বহুবার তারা করেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি সিপিএমের, ‘এ কথা ভাবা ভুল হবে যে এমন দ্বিমেরু তৈরিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির কোনও গোপন বোঝাপড়া রয়েছে।’
সাংগঠনিক বৈঠকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে একটি বিধানসভা অংশেও সংখ্যা গরিষ্ঠের ভোট সংগ্রহ করতে পারিনি, পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে মেরুকরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এই দ্বিমেরুত্ব ভাঙার জন্য সব রকমের চেষ্টা করা হবে। তবু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্য কমিটি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ এই সময়কালে সমস্ত ধরনের সংগ্রাম ও লড়াই আন্দোলন সত্ত্বেও, রাজনৈতিক ভারসাম্যের কোনও বদল ঘটেনি। ২০১৯ -এ যা অবস্থান ছিল তা অপরিবর্তিত রয়েছে।’
এরপরই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘সিপিআইএমের ভোটপ্রাপ্তি ২০১৬ সালের ১৯.৭৫ ভাগ থেকে কমে ২০১৯ সালে ৬.১৮ ভাগ হয়েছে, ২০২১ সালে আরও কমে শতকরা ৪.৭৩ ভাগ হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে রাজনৈতিক দ্বিমেরুত্ব কয়েক বছর ধরে শক্তি সংগ্রহ করছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচনের পরে আরও তীব্র হয়েছে।… তবে এ কথা ভাবা ভুল হবে যে এমন দ্বিমেরু তৈরিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির কোনও গোপন বোঝাপড়া রয়েছে।’ একই সঙ্গে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ‘তৃণমূল থেকে বিপুল সংখ্যায় বিজেপিতে যোগদান ও নির্বাচনের পর অনেকের প্রত্যাবর্তন রাজ্যে দ্বিমেরু তৈরির এক প্রচেষ্টা ও এতে এই দলের গোপন সমঝোতা রয়েছে, এমনটা ভেবে আমরা ভুল করেছিলাম।’
অথচ এই সিপিএমের ভোট প্রচারেই বার বার ‘বিজেমূল’ শব্দের ঘুরপাক দেখেছে বঙ্গবাসী। বিজেপি ও তৃণমূলকে মিলিয়ে ‘দ্বিমেরুত্বের’ রাজনীতির কথা বঙ্গবাসীর মনে গেঁথে দিতে চেয়েছে লাল ঝান্ডাধারীরা। চায়ের আড্ডা থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম ‘বিজেমূল’ যেন ‘ট্রেন্ডিং ওয়ার্ড’। যদিও ভোট মিটটেই এই বিজেমূলই গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে সূর্যকান্ত মিশ্রদের। সূর্য মিশ্র-মহম্মদ সেলিমের দ্বন্দ্বও এ নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে।
মুজফ্ফর আহমেদের জন্মদিবস উপলক্ষে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বক্তব্য রাখতে উঠে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “বিজেমূল তত্ত্ব ভুল ছিল। বিজেপিকে রুখতে জাতীয় স্তরে তৃণমূলকে পাশে চাই।” সূর্য মিশ্রের বক্তব্য শেষে সেলিম বলতেই উঠেই অন্য সুর ধরেন, “এখন অনেকে বলছেন বিজেমূল তত্ত্ব ভুল। বক কচ্ছপ আলাদা। কিন্তু সুকুমার রায় বকচ্ছপ শব্দটা উল্লেখ করেছেন। কংগ্রেস-নকশাল জয়েন্ট অপারেশনের সময় আমরা কংশাল শব্দটা প্রয়োগ করেছি। গরু এবং গাড়ি আলাদা হলেও দু’টো একটা জায়গায় মেশে গরুরগাড়ি হিসাবে। দু’টো আলাদা পারপাস হলেও বিষয়টা এক।” অন্যদিকে এই বিজেপি-তৃণমূলের ‘দ্বিমেরুত্বের’ প্রকাশে সিপিএমে ‘বিজেমূল’ শব্দ নিয়ে বিমান বসুর বক্তব্য ছিল, “বিজেমূল কথাটা করা বলল আমরা জানি না। আমরা নিজেদের কথায় কখনই এরকম ব্যাখ্যা করিনি। এরকম অনেক কিছুই হয়েছে যা মানুষ গ্রহণ করেনি। মানুষকে যা বিরক্ত করেছে।”
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই সিপিএমের এক অদ্ভূত বোধোদয় দেখা যাচ্ছে। কথায় কথায় নিজেদের পুরনো ভুল-ত্রুটিকে তুলে ধরছেন তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ উপলব্ধি মন্দ নয়। তবে একই সঙ্গে তাঁদের পর্যবেক্ষণ, এই উপলব্ধিতে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে, সিপিএম কতটা দিকভ্রান্ত! না হলে এই মুহূর্তে এক কথা, পর মুহূর্তেই তাদের মুখে অন্য কথা কেনই বা উঠে আসবে। আরও পড়ুন: দলে ঐশী, মীনাক্ষিরা যথেষ্ট নয়, টার্গেট পূরণে ব্যর্থ সিপিএম!