‘এই প্রথম কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা’, নারদ মামলা অন্যত্র সরানোর আর্জিতে চলল সওয়াল-জবাব

হেভিওয়েটদের জামিনের সময় বাইরে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে ফের একবার সরব সিবিআই (CBI)। এ রাজ্যে মামলা প্রভাবিত হওয়ার দাবি আগেও জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।

'এই প্রথম কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা', নারদ মামলা অন্যত্র সরানোর আর্জিতে চলল সওয়াল-জবাব
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jun 01, 2021 | 5:02 PM

কলকাতা: বিচারপতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে জামিন দেননি, কিন্তু পরিস্থিতি সাধারণ মানুষকে তেমনটাই ভাবতে বাধ্য করছে। আদালতে বারবার এই যুক্তিই খাড়া করছে সিবিআই। অন্য দিকে, বিচারপতিদের দাবি, আমাদের দেশে যে কোনও মানুষ মামলা শুনতে আসতে পারেন। আজ, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) ফের এ ভাবেই এগোল নারদ মামলার (Narada Case) শুনানি। তবে কোনও রায় দেননি বিচারপতিরা। আগামিকাল, বুধবার ফের হবে শুনানি।

‘কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের ঘটনা প্রথম’

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ দিন শুরুতে সিবিআই-এর পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘এই প্রথম কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে একটা তদন্তকারী সংস্থার দফতরের সামনে মন্ত্রিসভার সদস্যরা ঘেরাও করেছে। বারবার তাই বলছি, বেঞ্চ যা সিদ্ধান্ত নেবে তা যেন রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই নেয়। এখনও উত্তর নেই কেন এই ধরনের মবক্রেসি হল? ক্রিমিনাল প্রসিডিং সমাজের উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে।’ তাঁর দাবি, তাঁরা রাজনৈতিক গ্রেফতারি আগেও দেখেছেন। কিন্তু এ রাজ্যের ঘটনার মতো কোথাও হয়নি। পৃথিবীর কোনও গনতান্ত্রিক দেশেও হয়েছে কি না সন্দেহ।

তুষার মেহতার যুক্তি, সে দিন গোটা ঘটনায় বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তিনি বলেন, যে মন্ত্রীরা সে দিন ঘেরাও করেছিলেন তাঁরা শুধু সাধারন মানুষ নন, তাঁরা সাংবিধানিক পদেরও অধিকারী।

পাল্টা প্রশ্নে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যে ঘটনা বলছেন সেখানে কি গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তের জামিনের আর্জি জানানো হয়েছিল? বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন করেন, ‘ঘটনাগুলোর সময় কি সিবিআই কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল? কাজে বাধা দেওয়ার জন্য?’ বিচারপতিদের তরফে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ঠিক কোন সময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল? মানুষ কখন থেকে ঘেরাও শুরু করে? এগুলো আমাদের জানাবেন। কারণ এগুলো খুব গুরত্বপূর্ণ তথ্য। বিচারপত সৌমেন সেন তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন, চার্জশিট কি অনলাইনে পাঠানো হয়েছিল? নাকি সিবিআই আধিকারিকরা আদালতে গিয়ে দিয়ে এসেছিলেন?

‘আমাদের দেশে ওপেন কোর্ট, যে কোনও মানুষ শুনতে আসতেই পারেন’

তুষার মেহতা বলেন, ‘স্বয়ং আইন মন্ত্রী হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ দেখালেন। বিচারক প্রভাবিত না হলেও সাধারণ মানুষের মনে হবে এই জামিন বাধ্য হয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচারকের মনোভাব পক্ষপাতদুষ্ট নাও হতে পারে কিন্তু বাইরে যে ভয় দেখানো হয়েছে তার জন্য পক্ষপাতের কথা উঠে আসছে।’

বিচারপতি ইন্দ্র প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের দেশে ওপেন কোর্ট। যে কোনও মানুষ শুনতে আসতেই পারেন। বড় নামের অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও আসতে পারেন। কেউ আসতেই পারেন সন্দেহ হলে। প্রতিবাদের কথাও বলা আছে সংবিধানে।’

বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, ‘সে দিন শুনানি ভার্চুয়াল হয়েছে। আইনমন্ত্রী ও বাকিরা কোর্টের বাইরে বিক্ষোভ করছেন, তাতে সমস্যা কোথায়? চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে ভার্চুয়ালি। আপনার কথার যৌক্তিকতা কোথায়?’ তুষার মেহতার যুক্তি, ‘পাবলিক ইন লার্জের কথা বলা হচ্ছে।’ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘কেউ ভিতরে যায়নি। এজলাসে কেউ ছিলনা।’

নারদ মামলা:

গত ১৭ মে নারদ মামলায় অভিযুক্ত চার হেভিওয়েট নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন নিম্ন আদালত তাঁদের জামিন দেয়। এরপর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যায় সিবিআই। পরে হাইকোর্টেও ওই চার নেতার অন্তবর্তী জামিন মিলেছে। তবে, মামলা অন্যত্র সরানোর আবেদনের শুনানি চলছে হাইকোর্টে। সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। অভিযুক্তদের হয়ে লড়ছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।