Chancellor Controversy: মুখ্যমন্ত্রী কি আচার্য হতে পারেন? কী বলছেন আইনজ্ঞরা, কী মত শিক্ষামহলের
Bratya Basu: মুখ্যমন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য আচার্য করা যায় কি না, কেরলের রাজ্যপালের বক্তব্য তুলে ধরে সওয়াল করেন শিক্ষামন্ত্রী।
কলকাতা: উপাচার্য বিতর্কে এবার সরাসরি রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের ছবি স্পষ্ট হল। শুক্রবার বিস্ফোরক দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে এদিন সকালেই টুইটারে ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তোপ দাগেন রাজ্যপালকে। ব্রাত্যর কথায়, “ওনার মতো আচার্য থাকলে শিক্ষার হাল ভয়াবহ হবে!” মুখ্যমন্ত্রীকে সেক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য আচার্য করা যায় কি না, কেরলের রাজ্যপালের বক্তব্য তুলে ধরে সওয়াল করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই। এভাবে কি আদৌ কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আচার্য হতে পারেন?
কী বলছেন আইনজ্ঞরা
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “শিক্ষার ব্যবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা যে খুব একটা ভাল না এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মান দিন দিন পড়ছে। এর মধ্যে অযথা বিতর্ক। একদিকে রাজ্যপাল, একদিকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী উস্কে দিয়েছেন। দু’জনের কেউই সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে চলছেন বলে মনে হয় না। এটা বলা খুবই অন্যায় এরকম রাজ্যপাল থাকলে শিক্ষার মান পড়বে। অন্যদিকে রাজ্যপালও যেভাবে সমস্ত ভিসিদের ডেকে পাঠাচ্ছেন, সমস্ত ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছেন তাও সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে করা হচ্ছে না। দু’পক্ষেরই সংযম দরকার। আর সবক্ষেত্রে একটা আইন আছে। হঠাৎ করে কেউ তা উড়িয়ে গিয়ে আচার্য বা উপাচার্য হতে পারেন না। আইন আছে। একজন যে আচার্য হন, তা তো আইন মেনেই হন।”
ভারতবর্ষের একটা সংবিধান আছে, বলছে শিক্ষামহল
শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, “রাজ্যপালের সঙ্গে আমাদের রাজ্য সরকারের রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখতে আমরা অভ্যস্ত। শিক্ষাক্ষেত্র তার ভাল বা মন্দ সেটার সঙ্গে সাধারণভাবে রাজ্যপালের কিছু করণীয় থাকে না। তাঁর পদটা একেবারে অন্য। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা খারাপ হয় তা হলে রাজ্য সরকারকে তার মতো করে ভাবতে হবে। সেখানে রাজ্যপাল খারাপ অবস্থা বুঝলেও তা ভাল করার দাওয়াই কিন্তু রাজ্যপালের কাছে নেই। সেটা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে। তবে উপাচার্যদের ডাকলেও যা ঘটে সেটাও বাঞ্ছনীয় নয়। এগুলো গত এক দশকে ঘটছে। এটা একেবারেই হঠকারী কথা। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এত সহজে এটা হতে পারে না। ভারতবর্ষের একটা সংবিধান আছে।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই রাজ্যপাল আচার্য: সুভাষ সরকার
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের কথায়, “সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার জন্য রাজ্যপালের মতো একজন সাংবিধানিক পদের মানুষকে আচার্য করা হয়েছে। এখানে আচার্যের যে ভূমিকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে একই ভূমিকা পালন করেন ভিজিটার। ভিজিটার ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে গেলে অবশ্যই রাজ্যপালের আচার্য পদে থাকা উচিৎ। এই ধরনের কথা প্রমাণ করছে রাজ্য সরকার সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও রাজনীতির প্রভাবে প্রভাবিত করতে চাইছে।”
কী বলেছিলেন কেরলের রাজ্যপাল
বামরাজ্য কেরলে সরকারের সঙ্গে সে রাজ্যের রাজ্যপালের সংঘাত সম্প্রতি তুঙ্গে ওঠে। কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান বলেছিলেন, তিনি রাজ্যপাল পদ থেকে সরে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নই আচার্য হোন, ‘প্রস্তাব’ দেন তিনি। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠিও পাঠান আরিফ মহম্মদ খান। সেখানে লেখেন, “আচার্য পদে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মানতে নারাজ। বরং মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যপাল হয়ে যান। এই মর্মে অর্ডিন্যান্স জারি করে আমাকে পাঠালে সইও করে দেব।”
কী বলেছেন ব্রাত্য বসু
এদিন শিক্ষা নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল তরজা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বসু বলেন, “উনি দিনের পর দিন ফাইল ফেলে রাখেন। ফাইল আটকে রাখেন, বিন্দুমাত্র সহযোগিতার মনোভাব না দেখান তা হলে কেরলের রাজ্যপাল যা বলেছেন, আমরা বিচার করে দেখব আমাদের আইন মেনে, সংবিধান নিয়ে আলোচনা করে, আইনজ্ঞের পরামর্শ মেনে দেখব অন্তত সাময়িকভাবে আচার্য পদে আমরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আনতে পারি কি না। সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত উনি। অথচ ওনার কোনও কাজ নেই! খালি টুইট আর ফেসবুক করা ছাড়া! আপনার মনে হতেই পারে কোনও সিদ্ধান্ত ঠিক না। তা নিয়ে আলোচনা করুন। ফাইল আটকে রেখে দিচ্ছেন এটা কেমন। বিধানসভার অধ্যক্ষ পর্যন্ত এই নিয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।”
আরও পড়ুন: Binay Tamang: তৃণমূলে যোগ দিলেন বিনয় তামাং, বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে ‘মিলেমিশে’ কাজের আশ্বাস