Online Kidnapping: বাচ্চার ছবি শেয়ার করছেন? উদ্বেগ ‘শেয়ারেন্টিংয়ে’, অনলাইন কিডন্যাপিংয়ে বাড়ছে ভয়
Online Kidnapping: সন্তানের বিভিন্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন শেয়ার করাকেই বলে শেয়ারেন্টিং। সন্তানের জন্ম হওয়া থেকে হাঁটতে শেখা, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, স্কুলে ভর্তি- বিভিন্ন মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার প্রবণতা থাকে অনেক বাবা-মায়ের।
কলকাতা: আধার আতঙ্কে ভুগছে আম আদমি। গত কয়েকদিন ধরে বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে লাগাতার জালিয়াতির খবর আসছে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে। আপনার অজান্তে আপনার অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিচ্ছে সাইবার প্রতারকরা। কিন্তু, বিপদ রয়েছে আরও নানা জায়গায়। ‘শেয়ারেন্টিং’। শব্দটা নতুন লাগলেও, বাড়ছে বিপদের গন্ধ। বর্তমানে আমরা আমাদের বাচ্চাদের কোনও না কোনও ছবি প্রতিদিনই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করছি। পুলিশের পরিভাষায় যার পোশাকি নাম শেয়ারেন্টিং! বাবা-মায়েদের এই খেয়ালখুশির পোস্টে পোয়াবারো নেট দুনিয়ার অপরাধীদের। বাচ্চাদের ছবি বিকৃত করে নানা রকম অপরাধ ঘটাচ্ছে তারা। তার মধ্যে আছে শিশু পর্নোগ্রাফির মতো ভয়ঙ্কর অপরাধও। অভিভাবকদের ব্ল্যাকমেলিংও করছে। বিষয়টা চিন্তা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের। ইতিমধ্যেই অসম পুলিশ অভিভাবকদের সচেতন করতে নানা কর্মসূচি নিয়েছে। আমাদের রাজ্যের গোয়েন্দারাও নড়েচড়ে বসেছেন। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের যাবতীয় তথ্য শেয়ারের প্রবণতা এখনই বন্ধ না করলে বিপদে পড়তে হতে পারে।
শেয়ারেন্টিং কী?
সন্তানের বিভিন্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন শেয়ার করাকেই বলে শেয়ারেন্টিং। সন্তানের জন্ম হওয়া থেকে হাঁটতে শেখা, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, স্কুলে ভর্তি- বিভিন্ন মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার প্রবণতা থাকে অনেক বাবা-মায়ের। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতেই রয়েছে শিশু-নাবালকদের ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্ভাবনা। বাড়ছে ডিজিটাল কিডন্যাপিংয়ের প্রবণতা।
একটি পরিসংখ্যান বলছে, শিশুদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর প্রতি আকৃষ্ট। ৭ঘণ্টা ৩৩ মিনিটেরও বেশি সময় এরা ব্যয় করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি শিশুদের এই টান অজান্তে তৈরি করে দিচ্ছেন বাবা-মায়েরাই। কতটা ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের? কী বলছেন মনোবিদরা?
মনোবিদ সুদীপ্তা সেন বলছেন, “আমি এমন অনেক বাবা-মা কে চিনি যাঁরা তাঁদের বাচ্চাদের দু থেকে তিনটে ভিডিও প্রতিদিন পোস্ট করেন। তাঁদের বাচ্চারা কী করে তাঁদের পড়াশোনায় মন দেবে? বা খেলাধূলায় মন দেবে? কোন ব্যক্তির যদি ভিডিও খারাপ লাগে, সে যদি খারাপ কমেন্ট করে তাহলে তা বাচ্চার সাইকোলজির উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। সবই করুন, কিন্তু একটু ব্যালেন্স রেখে। খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন কোনওভাবেই আপনার বাচ্চার ক্ষতি না করে।”
মনোবিদ ডাঃ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, “বেড়াল যেমন মাছের জন্য ওত পেতে থাকে তেমনই নেট দুনিয়ার অপরাধীরা এই সুযোগগুলোর জন্য ওত পেতে থাকে। শুরু করে দেয় সাইবার বুলিং।” সতর্ক করছেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম। বলছেন, “যেগুলির কোনও দরকার নেই সে ছবিগুলি না দেওয়াই ভাল। আমার যদি পরিচিত কোনও লোক চাইছে, যাকে দিলে কোনও সমস্যা নেই, যাকে আমরা ভাল করে চিনি। তার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান আদানপ্রদান হতে পারে।”
সাইবার বিশেষজ্ঞ সাম্যজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “খুব সহজেই আজ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করে ফেলা যাচ্ছে। তাই আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে। বাচ্চাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা বন্ধ করতে হবে। এগুলো যাঁরা করে তাঁদের কাজই হচ্ছে ছবি জোগার করা। সোশ্যাল মিডিয়াই তাঁদের মূল হাতিয়ার।”
ভয় ডিপফেকিংয়েও
আমাদের রাজ্যের বা দেশের অনেক সেলিব্রেটিকেই দেখবেন সন্তানদের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা কোনওদিন এটা করেন না। বিরাট-অনুষ্কা, প্রিয়াঙ্কা-নিক কিংবা আলিয়া ভাট – এদের কখনও সন্তানদের নিয়ে ছবি পোস্ট করতে দেখবেন না। আরও একটি পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশের ৪০ শতাংশ অভিভাবক দিনে একবার হলেও সন্তানদের ছবি পোস্ট করেন। সেই ডেটাই চলে যাচ্ছে সাইবার অপরাধীদের হাতে। ঘটে চলেছে একের পর এক বিপদ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে শিশুর কণ্ঠস্বর নকল করে ব্ল্যাকমেল করছে অপরাধীরা। চলছে ডিপফেকিং। ফ্রান্স ইতিমধ্যে শিশুদের ছবি পোস্টে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমাদের দেশেও কি এবার এই ধরনের আইন আনতে হবে? উঠছে প্রশ্ন।