Panchayat Election 2023: পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে ‘গোঁসাই বাগানের ভূতেরা’? এখনও ব্যালট মেলাতে পারছে না কমিশন
Panchayat Election 2023: ফল প্রকাশের ৩ দিন পরেও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উদ্ধার হয়েছে পোড়া ব্যালট, কোথাও আবার প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালটের যে হিসাব দিয়েছিলেন গণনার দিন সেই হিসাবে গরমিল ধরা পড়ছে।
কলকাতা: নিধিরামের কথা মনে আছে? ‘গোঁসাই বাগানের’ সেই হতদরিদ্র ভূত। ‘ভূতের মর্যাদা’ পেতে তাকে কত কী না করতে হয়েছিল? বরুণের মন জোগাতে এথিক্সের বাইরে গিয়ে দিনকে রাত, রাতকে দিন বানাতে পিছুপা হয়নি নিধিরাম। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই নিধিরামের অস্তিত্ব দেখা গেল অহরহ। ‘বরুণদের’ মন জোগাতে গিয়ে কত ব্যালটের ‘ডিএনএ’ পাল্টে ফেলে নিধিরাম, তার ইয়ত্তা নেই! তার ফলে গণনার ৫ দিন পরও ব্যালট মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন।
এই যেমন সিউড়ির ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গুড়কাটার একটি বুথ। সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রিসাইডিং অফিসারের হিসাব অনুযায়ী ভোট পড়েছে ৫৫৯টি। তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৩৩৮টি ভোট। ভোট বাতিল হয়েছে ৩৮টি। ১৮৯টি পেয়েছে বিজেপি। যোগ করলে দাঁড়াচ্ছে ৫৬৫। অর্থাৎ এই ৬টা বাড়তি ভোট কে দিল সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তবে কি নিধিরাম দিয়ে গেল সেই ভোট? উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্নও।
শুধু সিউড়ি নয়। বিভিন্ন জায়গা থেকেই আসছে এই অভিযোগ। সোনারপুরের কালিকাপুর-১ পঞ্চায়েতেও দেখা গিয়েছে এরকমই ভূতুড়ে ছবি। সেখানেও মিলেছে এরকম ‘বেনামি’ ভোটের খোঁজ। এই পঞ্চায়েতের ৪৪ নম্বর অংশে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৪২২। ভোটের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের দেওয়া তথ্য বলছে এখানে ভোট দিয়েছিলেন ১১৯৬ জন। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের সাইটে দেওয়া তথ্য বলছে সংখ্যাটা ১৫২২। অন্যদিকে ওই এলাকার ৫১ নম্বর অংশে আবার উলটপুরাণ। ভোটের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের দেওয়া তথ্য বলছে ভোট দিয়েছেন ১০৪৭ জন। কিন্তু, গোনা ভোটের সংখ্যা ৮৭৮।
ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৬ হাজার বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। আদালতের তরফেও আভাস দেওয়া হয়েছে, এখনই জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নয়। অর্থাৎ যদি কোনও বুথে গরমিল প্রমাণিত হয়, ফের সেখানে নির্বাচন হতে পারে। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তে যথারীতি চাপে কমিশন। জানা গিয়েছে, জেলাশাসকদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেছে রাজীব সিনহার দফতর। সূত্রের খবর, ঝামেলা হওয়া বুথগুলির সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।
ভোটের দিন দেখা গিয়েছে, জনমত কোথাও জলে ভেসেছে, কোথাও পুড়েছে, কোথাও আবার দিনেদুপুরে ‘ডাকাতি’ হয়ে গিয়েছে। এমনকী প্রিসাইডিং অফিসারের মাথায় বন্দুক ঠেকানোর অভিযোগও উঠেছে। এই সব অভিযোগের মধ্যেও ১১ জুলাই বেরয় ভোটের (Panchayat Election Result) ফল। রাজ্যজুড়ে শুধুই ঘাসফুল ঝড় দেখা গিয়েছে। আর সেই ঝড়ে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। তবে, ভোট মিটে গেলেও ‘শান্তিতে’ নেই কমিশন। গণনার ৫ দিন পরও ব্যালটের হিসেব মেলাতে ঘুম ছুটেছে তাদের। অনেকেই মনে করছে, এমন ‘গ্যাঁড়াকলের’ নাটের গুরু নিধিরামই। এত কিছু করে নিধিরাম এবার ভূতের মর্যাদা ফিরে পায় কি না, সেটাই দেখার। যদিও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, হেরে যাওয়ার ফলেই এসব বাহানা দিচ্ছে বিরোধীরা।