AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Anubrata Mondal: কেষ্ট-কীর্তন: ভোট এলেই এ সব ‘অমোঘ’ ডায়লগে মাতিয়ে রাখতেন অনুব্রত

Controversial Comment: ‘কেষ্টদার’ মুখের ‘বাণী’ বাংলার রাজনীতির বহুচর্চিত বিষয়। ভোটের সময় হোক বা রাজনীতির কোনও ঘটনা, সাংবাদিকদের বুম অপেক্ষা করে কেষ্টর ‘হিট ডায়লগের’।

Anubrata Mondal: কেষ্ট-কীর্তন: ভোট এলেই এ সব ‘অমোঘ’ ডায়লগে মাতিয়ে রাখতেন অনুব্রত
গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ
| Edited By: | Updated on: Aug 11, 2022 | 5:10 PM
Share

কলকাতা: দেখ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে/ দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন- এই পংক্তি ক’টি কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা। ‘অনুপ্রেরণায়’ তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মূলত তাঁকে চিনেছে বঙ্গবাসী। ঘাসফুল সরকারের যত সময় পেরিয়েছে, ততই দাপট বেড়েছে বীরভূম জেলার এই নেতার। বীরভূমের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক জেলাতে অনুব্রতই শেষ কথা বলেন। ভাল নাম অনুব্রত হলেও অনুগামীরা ভালবেসে ডাকেন কেষ্ট নামেই। সেই ‘কেষ্টদার’ মুখের ‘বাণী’ বাংলার রাজনীতির বহুচর্চিত বিষয়। ভোটের সময় হোক বা রাজনীতির কোনও ঘটনা, সাংবাদিকদের বুম অপেক্ষা করে কেষ্টর ‘হিট ডায়লগের’।

বিধানসভা হোক বা লোকসভা, পঞ্চায়েত হোক বা পুরসভা। রাজ্যে ভোটের বাজনা বাজলেই চোখা চোখা মন্তব্য ভেসে আসে অনুব্রতের থেকে। বীরভূমের সীমানা পেরিয়ে সেই মন্তব্য হিট হয়ে যায় সারা রাজ্যে। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, বিরোধীদের শাসাচ্ছেন অনুব্রত। কিন্তু মেঠো কথার মধ্যে দিয়ে সেই অভিযোগ খণ্ডন করে নিজের বক্তব্যে অটল থাকেন তিনি। তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তিও দেন শান্ত ভঙ্গিতে।

২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। এর পর হয় ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচন। তখনও পর্যন্ত রাজ্যের অনেক পঞ্চায়েত এবং পুরসভায় বিরোধীদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনের পরে বিরোধীরা কার্যত গুটি কতক আসনে বন্দি থেকে যায়। সেই ভোটে ব্যাপক বোমাবাজি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে শাসকের বিরুদ্ধে।

চড়াম চড়াম:

এর পর আসে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট। নারদা মামলায় তখন তৃণমূল বেসামাল। নিজেকেই ২৯৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ভোটারদের আবেদন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কেষ্টর তা নিয়ে অত মাথাব্যথা ছিল না। তিনি ছিলেন নিজের মেজাজেই। নিজের ‘কাজ’ ‘ঠিক ভাবে’ করে দিতে পারলেই সাফল্য আসবে বলে মনে করেন তিনি। তখনই অনুব্রতের মুখে শোনা গেল ঢাক বাজানোর কথা। তিনি বলেছিলেন বিরোধীদের জন্য ‘চড়াম চড়াম’ করে ঢাক বাজবে। এ নিয়ে রাজ্যে বিতর্কও ছড়িয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বিরোধীদের উপর বোমা মারার হুমকি দিচ্ছেন অনুব্রত। কিন্তু বিরোধীদের কথায় নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি তিনি।

anubrata

গুড় বাতাসা:

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সারা রাজ্যে ব্যাপক অশান্তির অভিযোগ করে বিরোধীরা। শাসকদলের দুষ্কৃতীদের হাতে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করে সব বিরোধী দল। যদিও শাসকের বক্তব্য ছিল, প্রার্থী না পাওয়ার হতাশাই এ সব বাজে বকছে বিরোধীরা। মমতা সরকারের উন্নয়নও বিরোধী প্রার্থী না পাওয়ার অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছিল ঘাসফুল শিবির। সেই ভোটেও হিট হয়েছিল অনুব্রতের ‘গুড় বাতাসা’ তত্ত্ব। অনুব্রত বলেছিলেন, ব্লক অফিসে গুড় বাতাসা এবং জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন তাঁর কর্মীরা। গরমে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে গুড়বাতাসা ও জল খাওয়ানো হবে। ‘উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে’ বলেও হুঙ্কার শোনা গিয়েছিল কেষ্টর গলায়। তা নিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ একটি কবিতা লেখেন। তার পর অনুব্রতর রোষে পড়তে হয়েছিল বর্ষীয়ান কবিকে।

নকুল দানা ও ভয়ঙ্কর খেলা:

২০১৮ সালের গুড়বাতাসা মেনু রিপিট হয়নি ২০১৯ সালের লোকসভায়। তবে কিছুটা গুড় বাতাসার ঢঙেই নকুলদানা ও জল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বীরভূমের ‘বাদশা’। কেষ্ট বলেছিলেন, “নকুল দানা খেলে আঙুল অন্য কোথাও যাবে না।” বিতর্কিত মন্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন তাঁকে নজরবন্দিও করেছিল। কিন্তু তাতে ভোট পরিচালনের বিশাল পরিবর্তন ঘটেনি। সে স বছর পাঁচন দিয়ে জেলার জমি উর্বর করার নিদানও দিয়েছিলেন। ২০২১ সালে তুলনায় অনেক বেশি সাবধানী ছিলেন অনুব্রত। রাজ্য জুড়েই ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়েছিল তৃণমূল। অনুব্রত বলেছিলেন, “ভয়ঙ্কর খেলা হবে।”

এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে হুমকির ভাষা শোনা গিয়েছে অনুব্রতের গলায়। ২০২০ সালে জেএনইউ-তে এবিভিপি-র তান্ডব দেখে রেগে লাল হয়েছিলেন কেষ্ট। এ রাজ্যে বিজেপি এই ঘটনা ঘটনোর চেষ্টা করলে তিনি ‘শুঁটিয়ে লাল করে’ দিতেন বলে জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি অমিত শাহকে ‘মাথামোটা’, প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গ সফরকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। বিশ্বভারতীর উপাচার্যকেও পড়তে হয়েছিল তাঁর রোষের মুখে। নিজেকে অনুব্রত এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তিনি কিছু বললেই তা ‘খবর’ হয়ে যায়।