আপডেট: চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধবাবু

বুধবার সকাল থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।

আপডেট: চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধবাবু
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 11, 2020 | 6:21 PM

কলকাতা: শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও এখনই সঙ্কটমুক্ত নন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বিকেলের বুলেটিনে উডল্যান্ডস হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার সপ্তর্ষি বসু জানিয়েছেন, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি। তবে এখনও তাঁকে ভেন্টিলেশনেই রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ওনার ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করলে পরিস্থিতির আরও দ্রুত উন্নতি হবে। ভেন্টিলেটর থেকে তাঁকে বাইপ্যাপে ফেরানো যাবে। শুক্রবারই পরীক্ষামূলকভাবে বিষয়টি দেখার পরিকল্পনা রয়েছে চিকিৎসকদের। সকালেই ঘুমের ওষুধের মাত্রা কমানো হতে পারে, ভেন্টিলেটর মোডও কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সকাল ১০টার মধ্যে করতে চাইছেন চিকিৎসকরা। এদিনও বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক বলেই জানিয়েছেন হাসপাতালের সিইও রূপালী বসু। তবে সঙ্কটের মাত্রাটা অনেকটাই কমেছে বলে দাবি তাঁর।

বৃহস্পতিবারই বাড়ানো হয়েছে বুদ্ধবাবুর চিকিৎসার জন্য তৈরি হওয়া মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য সংখ্যা। আগে পাঁচজন চিকিৎসক ছিলেন। এদিন আরও দু’জন সেখানে যুক্ত হলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাঁদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ বুদ্ধবাবুকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করে আনা। যেহেতু তিনি একজন সিওপিডির রোগী, তাই কাজটা যে খুব একটা সহজ হবে না তাও মানছেন চিকিৎসকরা।

সন্ধ্যা পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাসপাতাল জানাচ্ছে-

* ভেন্টিলেশনেই আছেন। এখনও অবস্থা সঙ্কটজনক। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫ শতাংশ। রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, প্রস্রাবের পরিমাণ ভাল। * রক্তের রিপোর্ট ভাল। হিমোগ্লোবিন ৯.৭% (থাকার কথা ১৩+), শ্বেতকণিকার সংখ্যা ৮১০০ (থাকার কথা ৪০০০-১১০০০), ইউরিয়া-৪০ (থাকার কথা ৫০ এর নীচে), ক্রিয়েটিনিন-১.১১ (থাকার কথা ১ এর নীচে), সোডিয়াম-১৩৪ ( থাকার কথা ১৩০-১৪৫), পটাশিয়াম ৪.৩ (থাকার কথা ৩.৫-৪.৫), সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (এক ধরনের প্রদাহ সূচক)-৯.২ (থাকার কথা ১০ এর নীচে)। * এবিজি বা ব্লাড গ্যাস অ্যানালিসিস রিপোর্টও সন্তোষজনক। দুপুর ১টার রিপোর্ট অনুযায়ী রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের (পিসিও২) মাত্রা ৫২ (থাকার কথা ৩৮-৪২)। রক্তে অক্সিজেনের (পিও২) মাত্রা ৬৪ (থাকার কথা ৭৫-১০০)। * দেওয়া হচ্ছে অ্য়ান্টিবায়োটিক্স স্টেরয়ডস। * উনি মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে থাকবেন। ধীরে ধীরে ভেন্টিলেটর থেকে বের করার পরিকল্পনা হয়েছে। * ভেন্টিলেশনে থাকবেন বলে ঘুমের ওষুধও চলছে।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে বুধবারই উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। বৃহস্পতিবার সকালে বসে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক। কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, পালমনোলজিস্ট অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট সৌতিক পাণ্ডা, অ্যানাস্থেটিস্ট আশীষ পাত্র, ফিজিশিয়ন কৌশিক চক্রবর্তী ছিলেন বৈঠকে। বুধবার থেকে এই পাঁচ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন চিফ অপারেটিং অফিসার চিকিৎসক মালতী পুরকাইত, চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু, ডিরেক্টর নার্সিং আলো সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, ফুয়াদ হালিম।

বোর্ডের বৈঠক শেষে চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা জানান, “মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন নতুন করে যাতে জটিলতা তৈরি না হয় সেটাই আমাদের এখন লক্ষ্য। এমনিতে উনি চিকিৎসায় খুব ভাল সাড়া দিচ্ছেন। কথাবার্তা শুনলে বুঝতে পারছেন। পুষ্টির যাতে ঘাটতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি। রাইস টিউবের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হচ্ছে। সময়ে সময়ে এবিজি পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই মতো ভেন্টিলেটরের মাত্রা কমানো-বাড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির পরে দেহে সংক্রমণের কোন‌ও সম্ভাবনা মেলেনি। এ সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। দুপুরের পর থেকে রিপোর্ট পেতে শুরু করব। ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক বুধবার থেকে চলছে। দুপুরে রিপোর্ট পাওয়ার পরে অ্যান্টিবায়োটিক বদলের প্রয়োজন হলে তা করা হবে।”

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাসপাতালের সিইও রূপালী বসু। সেখানেই জানান, বুদ্ধবাবুকে পর্যবেক্ষণের জন্য যে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়েছিল তা বাড়ানো হয়েছে। আগে পাঁচ সদস্যর বোর্ড তৈরি হলেও, এদিন সেখানে আরও দু’জন ফিজিশিয়নকে আনা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক ধ্রুব ভট্টাচার্য এবং চিকিৎসক সোমনাথ মাইতি। সোমনাথ মাইতি দীর্ঘদিন ধরে বুদ্ধবাবুর চিকিৎসা করছেন বলেও জানান তিনি।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করা সম্ভব হলেও নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর বা বাইপ্যাপের সাহায্য নিতে হবে। কারণ বুদ্ধবাবুর ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছয় কম এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয় কম। এটাই তাঁর রোগ। উনি বাড়িতেও বাইপ্যাপেই ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য চিকিৎসক বলেন, “মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন দেহে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। আসল উদ্বেগের জায়গা হল ভেন্টিলেটর থেকে বার করানোর পর কী হয়। দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে পারে। নতুন করে কার্বন ডাই অক্সাইড জমে বিপত্তি ঘটতে পারে। সে জন্য ওই মুহূর্তটাকে চ্যালেঞ্জ বলা হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির পর সংক্রমণ কিছু হয়েছে কি না, সে সংক্রান্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে সংক্রমণ সূচক খুব একটা বেশি নয়।”

চিকিৎসক ধ্রুব ভট্টাচার্যর কথায়, “এর আগে বুদ্ধবাবুকে যখন ভর্তি করা হয়েছিল তখন বাইপ্যাপে কাজ হয়েছিল। এবার ওনাকে বাঁচানোর জন্য মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে দিতে বাধ্য হয়েছি। আপাতত উনি ভাল আছেন। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হল এই রোগীকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করা। একজন ক্রনিক সিওপিডি রোগীর ক্ষেত্রে এটা শক্ত এবং কঠিন কাজ।” বুদ্ধবাবুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সোমনাথ মাইতি বলেন, “উনি কতদিনে পুরোপুরি সুস্থ হবেন তা বলা কঠিন। তবে আমরা আশাবাদী।”

এই মেডিক্যাল টিমই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে। রয়েছেন সিইও রূপালী বসুও।

বুধবার সকাল থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। দুপুরে ভর্তি করা হয় উডল্যান্ডস হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গেই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বুদ্ধবাবু সিওপিডির (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগী। তাই শ্বাসকষ্ট বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছয়। শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাও বাড়তে থাকে।

আরও পড়ুন: দেড় ঘণ্টায় সামান্য উন্নতি বুদ্ধবাবুর, কমেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা

সন্ধ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়ে পড়েন তিনি। ৬টা নাগাদ তাঁর শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্র বেড়ে ১৩১ (সাধারণ মানুষের দেহে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ৩০-৪০) হয়। চিকিৎসকদের অনবরত তদারকিতে পরে অবশ্য তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।