Arjun Singh : ‘হাত’ ছেড়ে এ ‘ফুলে’ ও ‘ফুলে’ যেভাবে গাণ্ডীব চালালেন অর্জুন…
Arjun Singh : পদ্ম ছেড়ে অর্জুন সিং কি ঘাসফুলে ফিরছেন ? গত কয়েকদিনে এই জল্পনা বাড়ছিল। সেই জল্পনা সত্যি করে তৃণমূলে ফিরলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ।
ব্যারাকপুর : ছিলেন কংগ্রেসের কাউন্সিলর। তারপর তৃণমূলের বিধায়ক। এখন বিজেপির সাংসদ। তিন রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে লক্ষ্যভেদ করেছেন। তিনি ব্যারাকপুরের অবিসংবাদিত নেতা অর্জুন সিং (Arjun Singh)। গত কয়েকদিন ধরে তাঁকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল শুরু হয়েছিল। তৃণমূলে তাঁর যোগদান নিয়ে জল্পনা বাড়ছিল। সেই জল্পনায় ইতি টেনে আজ বিকেলে তৃণমূলে ফিরেছেন ৬০ বছরের অর্জুন সিং। এই দলবদল নিয়ে আলোচনার মধ্যে ফিরে দেখা যাক তাঁর রাজনৈতিক পথচলা।
১৯৬২ সালের ২ এপ্রিল রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম অর্জুনের। তাঁর বাবা সত্যনারায়ণ সিং কংগ্রেস নেতা ছিলেন। ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা অর্জুনের কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিতে আগ্রহ গড়ে ওঠে। নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সক্রিয় রাজনীতিতে আরও সময় দিতে মাঝপথেই পড়াশোনায় ইতি পড়ে তাঁর। বছর খানেক জুট কর্মী হিসেবে কাজও করেন।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালে। ওই বছর ভাটপাড়া পুরসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জিতে কাউন্সিলর হন। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন অর্জুন। ২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ভাটপাড়া আসনে তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। সিপিআইএম প্রার্থী রামপ্রসাদ কুন্ডুকে হারিয়ে প্রথমবার বিধানসভায় পা রাখেন তিনি। পরপর চারবার জিতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভাটপাড়ার বিধায়ক ছিলেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন অর্জুন।
এর মধ্যে একবার হার মানতে হয়েছে অর্জুনকে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করেন মমতা। কিন্তু, সিপিআইএমের তড়িৎবরণ তোপদারের কাছে হেরে যান।
ঘাসফুলে থাকাকালীন ব্যারাকপুরে অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন অর্জুন। তৃণমূলের হিন্দি ভাষী সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পঞ্জাব- এই চার রাজ্যে তৃণমূলের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে অর্জুনের। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, লোকসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হন। তারপরই তাঁর দলবদল। ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুল হাতে তুলে নেন। পদ্মে গিয়ে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের টিকিটও পান। তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকে হারান।
শুধু লোকসভা ভোটে নিজে জিতেই থামেননি অর্জুন। তিনি ভাটপাড়া বিধানসভা আসনে পদত্যাগ করায় উপনির্বাচন হয়। সেখানে বিজেপির টিকিটে তাঁর ছেলে পবন সিং জয়লাভ করেন। ২০২০ সালে ১ জুন রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি করা হয় তাঁকে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচন থেকে অর্জুন-গড়ে ফাটল ধরে। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। শুধুমাত্র ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছেন অর্জুন-পুত্র পবন সিং। মাস তিনেক আগে ভাটপাড়া পুরসভা নির্বাচনেও হারে বিজেপি।
কিছুদিন আগে থেকে অর্জুনের নানা মন্তব্যে জল্পনা বাড়তে থাকে। প্রশ্ন ওঠে, পদ্ম ছেড়ে তিনি কি ঘাসফুলে ফিরছেন ? আজ সকালে সাংবাদিক বৈঠকে অর্জুন বলেন, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তিনি সঙ্গে ছিলেন। ২১ বছর পর তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে পদ্মফুলে গিয়েছিলেন। তিন বছর পদ্মফুলে কাটিয়ে ফের ঘাসফুলে ফিরে এলেন অর্জুন।