শহরে জমা জলের ভোগান্তি কাটাতে ৬ ফর্মুলা বিশেষজ্ঞদের, হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে কেন্দ্র-রাজ্যকে
জমা জলের (Water Logging) দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে জোর দিতে হবে পরিকাঠামোর উপর। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় স্টর্ম ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট।
কলকাতা: সমস্যাটা শুধু শহর কলকাতার নয়— দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই প্রায় সব বড় শহরেরই। অপরিকল্পিত নগরায়ন, নিকাশি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব। এর জেরেই জমা জলের যন্ত্রণায় ওষ্ঠাগত মেট্রো শহরের বাসিন্দাদের জীবন। কোন পথে মিলবে সমাধান? বিশেষ কিছু ফর্মুলা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
টানা দু’দিন বৃষ্টি হলেই ভেনিসের চেহারা নেয় দেশের প্রায় সবক’টি বড় শহরই। পরিকল্পনাহীন বসতি যেমন এর একটা বড় কারণ, তেমনই শহরবাসীর অসচেতন মনোভাবও সমান দায়ী। দেশের মোট কর্মসংস্থানের বেশির ভাগটাই শহরে। ফলে জনবসতির চাপও বেশি। জঙ্গল সাফ করে, পুকুর ভরাট করে চলছে অপরিকল্পিত ‘নগরায়ন’। যার পুরো প্রভাবটাই পড়ছে পরিবেশের উপর।
পরিবেশবিদরা বলছেন, কখনও বর্ষায় অতি বৃষ্টি, কখনও আবার শুখা বর্ষা। প্রকৃতির ভারসাম্যের এই অভাব মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাই জমা জলের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে জোর দিতে হবে পরিকাঠামোর উপর। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় স্টর্ম ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট।
বড় শহরগুলিতে বৃষ্টির জল বেরোনোর বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো নেই। বেশির ভাগ শহরেই পুকুর ও খালি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিত নগরায়ন চলছে। যেমন দিল্লির বারাপুল্লা নিকাশি নালা ভরাট করে চলছে বাস ডিপো তৈরির কাজ। দেশের বেশির ভাগ শহরেই বৃষ্টির জল বেরোনোর নালাগুলির করুণ হাল। দ্রুততার সঙ্গে সেগুলি মেরামত করা দরকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শহরের বুকে নগরায়ন করতে গিয়ে জল বেরোনোর জন্য রাস্তার ধারে নালা তৈরি করেই দায়িত্ব সারছে পুরসভাগুলি।
আরও পড়ুন: West Bengal Weather: সকাল থেকে ফের বৃষ্টি শুরু কলকাতায়; জল-যন্ত্রণা আরও কতদিন, জানিয়ে দিল হাওয়া অফিস
গোটা দেশে নিকাশির জন্য নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাও নেই। রাজ্যস্তর কিংবা জাতীয় স্তর— এ ক্ষেত্রে সর্বত্রই একই ছবি। স্বচ্ছ ভারত মিশন বা অটল মিশন পরিকল্পনা শহরের জমা জল কী ভাবে দ্রুত বের করা যাবে তার দিশা কিন্তু দেখাতে পারেনি। জমা জলের এই দুর্ভোগ কাটাতে বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও কোনও শহর ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিকই। মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে নগরায়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তা যথেষ্ট নয়। পাকাপাকি কোনও ব্যবস্থা থাকা দরকার।
কোন পথে মুক্তি—
* শহরের মধ্যে থাকা খোলা জায়গা, ডোবা-পুকুর চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করা। *এই সমস্ত জায়গাতে ক্রিটিক্যাল গ্রিন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মর্যাদা দিতে হবে। * সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে প্রতিটি শহরে নিকাশির জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। * জল জমতে পারে বা সম্ভাবনা রয়েছে, এমন জায়গাগুলিকে হাই রিস্ক জ়োনের আওতায় এনে বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। * শহরের জমা জল নিকাশির জন্য নোডাল অথরিটি নিয়োগ করতে হবে। * জাতীয় ও রাজ্যস্তরের পৃথক নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো রাখতে হবে।
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিকাঠামোই একমাত্র এই অতল বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে শহরগুলিকে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এগোলে সে কাজ আরও সহজ হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।