Job Seekers Protest: ‘মা, পুজোয় জামা কিনে দেবে না?’, ছেলের আবদারের কোনও উত্তর নেই, আছে শুধু বেকারত্বের কান্না
Kolkata: যাঁরা বসে আছেন ওখানে রাস্তার ধারে, পরিবার পরিজনকে ছেড়ে... তাঁরাই বোঝেন পরিবারকে ছেড়ে দিনের পর দিন আন্দোলনে বসে থাকার যন্ত্রণা।
কলকাতা: ওঁদের আপনারা প্রত্যেকেই চেনেন। ৫৫০ দিনের আন্দোলনের দৌলতে ওঁরা পরিচিত। দিন শুরু হয় বারুইপুরের মেসে, তারপর ট্রেনে করে শিয়ালদহ। সেখান থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। সেখানেই দিন কেটে যায়। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ মাথায় করেই চলে আন্দোলন। রাস্তার ধারে বসে। তারপর রাতে আবার মেসে ফেরা। ওঁরাও চাকরি করেন বটে। তবে সেখানে মাসমাহিনা নেই। সেই চাকরির নাম ‘ আন্দোলন’। অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছে, আর যোগ্যরা রাস্তায় বসে আছেন রাস্তায়। এমন অভিযোগ বার বার উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু যাঁরা বসে আছেন ওখানে রাস্তার ধারে, পরিবার পরিজনকে ছেড়ে… তাঁরাই বোঝেন পরিবারকে ছেড়ে দিনের পর দিন আন্দোলনে বসে থাকার যন্ত্রণা।
আজ মহালয়া। দেবীপক্ষের সূচনা। চারিদিকে সাজো সাজো রব। গোটা শহর সেজে উঠছে শারদ আনন্দে। কিন্তু ওঁদের পুজো? ওঁরা এখনও ঠাঁয় বসে আন্দোলনে। আগের পুজোটাও গান্ধীমূর্তির পাদদেশেই কেটেছে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের। এবারও তাই। এবারও একই দিকে এগোচ্ছে আন্দোলন। সন্তানকে ছেড়ে শহর কলকাতায় ধর্না দিতে আসার জ্বালা একমাত্র একজন মায়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। সেই রকমই এক মা শম্পা। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সকলের কাছে তিনি শম্পাদি। বাড়িতে একটা ছোট্ট সন্তান রয়েছে। ফোনে মাকে বারবার বলছে… মা, পুজোয় জামা কিনে দেবে না? মা বাড়ি কবে আসবে? কথাগুলো শুনে মুখ থেকে শব্দ ফোটে না শম্পার। গলা যেন বন্ধ হয়ে আসে। ভিতরটা উথালপাথাল হয়ে যায়। বেরোয় শুধু চোখের জল।
মালদার পাকুয়াহাটে বাড়ি শম্পার। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। স্বামীর একটি ছোট দোকান রয়েছে। সেই আয় দিয়েই সংসার চলে। তাই চাকরিটা ভীষণভাবে দরকার শম্পার। কিন্তু তা এখনও মেলেনি। হকের চাকরির দাবিতে তাই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আন্দোলনে সামিল শম্পাও। মালদার বাড়ি ছেড়ে এখন তাঁর ঠিকানা বারুইপুরের একটি মেসবাড়ি। ছোট্ট সন্তানকে দেখভাল করেন স্বামীই। চার মাস অন্তর হয়ত একবার বাড়ি যেতে পারেন শম্পা। কখনও হয়ত আরও বেশি সময়ের অপেক্ষা। বারুইপুরে অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে মেসবাড়িতে তিনি থাকছেন, সেখানে মেসবাড়িতে সকলের জন্য নিজে হাতে রান্না করেন তিনি। সেই থাকেই আন্দোলনকারীদের সকলের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন শম্পাদি।
হকের চাকরির দাবিতে আন্দোলনে সামিল রাসমণি পাত্রও। রাসমনিরও পরিবার আছে, পরিজন আছে। সব ছেড়ে তিনিও গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। তাঁর মুখ থেকেও আগুন ঝরছে। শাসক-বিরোধী কাউকে রেয়াত না করে, তাঁর দাবি, পুজোর আগেই বিজ্ঞপ্তি চাই।