Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Kalbaishakhi Storm: ‘চরিত্র’হীন চৈত্র, কালবৈশাখীকে লুকিয়ে রেখে কেন ‘অশোভন’ প্রকৃতি?

Kalbaishakhi Storm: এবার ‘উন্মত্ততা’ কি দেখাবে কালবৈশাখী?

Kalbaishakhi Storm: ‘চরিত্র’হীন চৈত্র, কালবৈশাখীকে লুকিয়ে রেখে কেন ‘অশোভন’ প্রকৃতি?
কালবৈশাখী কবে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 15, 2022 | 1:39 PM

কমলেশ চৌধুরী:  মধ্যদিনের রক্ত নয়ন অন্ধ করিল কে! ধরণীর ’পরে বিরাট ছায়ার ছত্র ধরিল কে!

ছন্দ মিলিয়ে কালবৈশাখীর কথা লিখেছিলেন কবি মোহিতলাল মজুমদার। এ বার প্রকৃতি ছন্দহীন। উধাও চৈত্রের চেনা ঝড়। নিখোঁজ কালবৈশাখী। সে দিক থেকে দেখলে চৈত্র এ বার ‘চরিত্র’হীন!

গ্রীষ্ম এলে গরম পড়ে। শুরু হয় অস্বস্তির অধ্যায়। অস্বস্তি থেকে সাময়িক মুক্তি দিতেই প্রকৃতির দাওয়াই, ঝড়-বৃষ্টি। যত নিয়মিত ঝড়-বৃষ্টি হবে, তত অস্বস্তিতে লাগাম। বৃষ্টি প্রয়োজন চাষেও। অথচ, এ বার মার্চের শুরু থেকে মাঝ এপ্রিল– বৃষ্টি-বঞ্চিত দক্ষিণবঙ্গের বিরাট তল্লাট। একটানা ৪৫ দিন বৃষ্টি-হীন কলকাতা। ফুরফুরে হাওয়া আছে, কিন্তু বিকেলে ধুলো ওড়ানো ঝড় নেই। নেই বৃষ্টির পর মাটি ভেজা গন্ধও। পড়ে শুধুই অস্বস্তি। রোদের তেজ, সঙ্গে আর্দ্রতার অত্যাচার!

কালবৈশাখীকে লুকিয়ে রেখে কেন এমন ‘অশোভন’ কাজ প্রকৃতির?

উত্তর চাইছে আমজনতা। উত্তর খুঁজছে হাওয়া অফিস। ব্যাখ্যা হিসেবে যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতেও সেই ‘উত্তর’-এর হাত! কেন? মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘এই যে দিনভর ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে, সেটা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আমাদের রাজ্যে ঢুকছে। আর দখিনা-পশ্চিমী বাতাস ঢোকা মানে সেটা সোজা উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে চলে যাবে। সেখানে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে মেঘ তৈরি হবে, বৃষ্টি নামাবে। এ বারও তাই হচ্ছে।’

অর্থাত্‍, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়েই উত্তরের পথে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি পাচ্ছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার বা আলিপুরদুয়ার। এ যেন উত্তরের বৃষ্টি ‘চুরি’!

দক্ষিণের মন্দ কপালের এটাই একমাত্র কারণ নয়। চৈত্র-বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টির জন্য প্রয়োজন বজ্রগর্ভ মেঘ। যার সৃষ্টি হয় মূলত ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকায়। তার জন্য দুটো শর্তপূরণ প্রয়োজন। এক, মালভূমির মাটি তেতে উঠতে হবে। সৃষ্টি হবে ‘হিট লো’ মানে নিম্নচাপ। দুই, বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা-পুবালি বাতাস পৌঁছতে হবে সেই তল্লাটে। তবেই জলীয় বাষ্প বোঝাই গরম হাওয়া উঠে যাবে নির্দিষ্ট উচ্চতায়। বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারিত হবে। আর বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের বাতাসের ধাক্কায় সেই মেঘ ধীরে ধীরে সরে আসবে কলকাতা ও লাগোয়া উপকূলের দিকে। ঝড় উঠবে, বৃষ্টি নামবে। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘এ বার হিট লো তৈরি হয়নি। দখিনা-পুবালি বাতাস না হওয়ায় জলীয় বাষ্পও মালভূমি এলাকায় পৌঁছয়নি। ফলে কালবৈশাখীর মেঘেরও দেখা মেলেনি।’ অর্থাত্‍, আসল সমীকরণ হাওয়া অভিমুখেই।

অভিমুখ ঘোরানো সম্ভব কী ভাবে? আবহবিদদের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকার উপর ঘূর্ণাবর্তের প্রয়োজন। আর দরকার বাংলা উপকূল লাগোয়া সাগরে উচ্চচাপ বলয়। জলীয় বাষ্পকে ঠেলে ঢোকাবে উচ্চচাপ বলয়। সেই জলীয় বাষ্প নিজের দিকে টেনে নেবে ঘূর্ণাবর্ত। নির্দিষ্ট উচ্চতায় তুলে দিয়ে ‘মই’-এর কাজটাও সেরে দেবে। নিম্নচাপ অক্ষরেখা থাকলেও কাজটা হয়। কিন্তু প্রকৃতি এ বার এতটাই ‘অশোভন’, ঘূর্ণাবর্ত, অক্ষরেখা– কারও দেখা নেই।

আবহবিদরা খুঁজে দেখছেন, ২০১৩ সালেও হুবহু এমনই হয়েছিল। উত্তর-পূর্বের ‘সাত বোনের’ হাতে ‘অপহৃত’ হয়েছিল কালবৈশাখী। অপেক্ষাই সার হয়েছিল ‘দিদির রাজ্যের’। তেরোর সেই গেরো এ বারও!

লাভের লাভ বলতে সমুদ্র থেকে আসা ফুরফুরে হাওয়ার সৌজন্যে তাপে চৈত্রের ‘ছাড়’। দেশ যখন ৪৫-৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আঁচে জ্বলছে, তখন তাপপ্রবাহ থেকে মুক্ত বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এপ্রিলের দু’সপ্তাহ পার, একদিনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে ওঠেনি। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে এতো গরম লাগছে কেন? সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘জলীয় বাষ্প রয়েছে, অথচ, বৃষ্টি হচ্ছে না। এই অতিরিক্ত আর্দ্রতাই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

চৈত্র শেষ, বৈশাখ শুরু। এ বার কি হাওয়া ঘুরবে?

চৈত্রের শেষ দিনে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছে প্রকৃতি। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। শিলাবৃষ্টিও হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশচন্দ্র দাস বলছেন, ‘দক্ষিণবঙ্গ যে ভাবে শুকনো থাকছিল, এ বার সেই ছবিটা বদলাবে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে বিভিন্ন জেলায়। রবিবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস। কলকাতাতেও ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।’

বৈশাখের দিনশেষে গোধূলিতে রুদ্রবেশে…

রবি ঠাকুর যেমন লিখেছিলেন, তেমন ভাবেই ‘উন্মত্ততা’ কি দেখাবে কালবৈশাখী?

ঝড়-বৃষ্টি: কী হওয়ার কথা … (কলকাতা)

মার্চ গড়ে ৪ দিন ঝড়বৃষ্টি, ১ দিন কালবৈশাখী

এপ্রিল গড়ে ৭ দিন ঝড়বৃষ্টি, ২ দিন কালবৈশাখী

মে গড়ে ১০ দিন ঝড়বৃষ্টি, ৩ দিন কালবৈশাখী

জুন গড়ে ১২ দিন ঝড়বৃষ্টি, ১ দিন কালবৈশাখী

বৃষ্টি: উত্তরবঙ্গ বনাম দক্ষিণবঙ্গ … (১ মার্চ-১৪ এপ্রিল)

উত্তরবঙ্গ: ১১৭% বেশি বৃষ্টি

কোচবিহার: ৪৫৪% বেশি বৃষ্টি

জলপাইগুড়ি: ২০৪% বেশি বৃষ্টি

মালদহ: ১৮% বেশি বৃষ্টি

দক্ষিণবঙ্গ: ৯৮% বেশি

কলকাতা: বৃষ্টি হয়নি

দক্ষিণবঙ্গের আরও ১০ জেলা: বৃষ্টি হয়নি

আরও পড়ুন: ভাঙল একের পর এক বাড়ি, ঝরল রক্ত, হল প্রাণহানিও! নববর্ষের সকালে ১০ মিনিটে তছনছ কোচবিহার