Kalyan Banerjee: বুদ্ধবাবুর ‘নন্দনসঙ্গী’ থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিয়ে! কল্যাণের ‘কুকথার সিরিজে’ কে নেই?
Kalyan Banerjee: বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কুমন্তব্য করা থেকে মঙ্গলবার সংসদে বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করা। এক দশকে নানা বিতর্কে থেকেছেন 'অনুত্তাপ' কল্যাণ।
কলকাতা: অশ্লীল কথা, কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করার অভিযোগে এর আগেও শিরোনামে এসেছেন শ্রীরামপুরের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও লোকসভায়, কখনও আবার আইনজীবীর পোশাকে, কখনও আবার নিতান্তই কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। কুকথায় বাণ ছুটেছে তাঁর। বারবার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে, বিতর্ক দানা বেঁধেছে, রাজনৈতিক শোরগোল পড়েছে। যদিও এ সব বিষয়ে ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কুমন্তব্য করা থেকে মঙ্গলবার সংসদে বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করা। এক দশকে নানা বিতর্কে থেকেছেন ‘অনুত্তাপ’ কল্যাণ।
বুদ্ধদেবকে নিয়ে কল্যাণের সবচেয়ে চর্চিত-বিতর্কিত মন্তব্য
এক যুগ আগের কথা! দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পর তখন সবেমাত্র ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা এসেছে শাসকদল। সে সময়ে বাংলার মানুষ রাজনৈতিক উত্তাপে ফুটছেন। কোনও এক সন্ধ্যায় দলীয় কর্মসূচিতে কর্মীদের মধ্যে উত্তাপ আরও বাড়াতে, সদ্য বিরোধী আসনে যাওয়া প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন কল্যাণ। আর তা করতে গিয়েই শালীনতার সীমা ছাড়ানোর অভিযোগ ওঠে।
কল্যাণ বলেছিলেন, “আপনি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সন্ধ্যার পর কে কে নন্দনে আপনার সঙ্গে দেখা করতে যেত এবং কেন করতে যেত তার তদন্ত হওয়া দরকার আগে। আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন করেন? আরে বাংলার মানুষ আপনার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করে।” কল্যাণের এই বক্তব্য ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়। বিভিন্ন মহলে নিন্দারও ঝড় উঠেছিল।
আবার কল্যাণের অনুতাপও
এর রাজনীতিতে অনেক জল গড়িয়েছে। এত বছর পেরিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে বুদ্ধবাবু যখন বেসরকারি হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে শুয়ে শারীরিক কষ্টে ভুগছেন, তখন মানসিক কষ্টে ভুগেছেন কল্যাণ। অনুতপ্ত হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘সেদিন সেকথা না বললেই পারতাম।’
‘দেখতে যেমন…’
কেবল সিপিএম নেতৃত্বকেই নয়, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান যুযুধান প্রতিপক্ষ বিজেপি নেতৃত্বকেও একাধিক কুরুচিকর ভাষায় বিঁধেছিলেন তিনি। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর রূপ-চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে ছাড়েননি তিনি। শ্রীরামপুরের একটি দলীয় সভা থেকে কল্যাণ বলেছিলেন, “সায়ন্তন বসু দেখতেও যেমন, কাজেও তেমন।” সেসময়ে বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য
কেবল বিরোধী নেতৃত্বের উদ্দেশে নয়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সময়ে দলের নেতৃত্বকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশে প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক ‘থাপ্পড়’ মারার কথা বলেছেন। কল্যাণের বিরুদ্ধে সেসময়ে দিল্লি ও কলকাতায় এফআইআর-ও দায়ের হয়। যদিও সে সময়ে কল্যাণের বক্তব্য ছিল, “আমি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়েছি। ফলে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।”
শুধু তাই নয়, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর বিয়ে করা-না করা নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে জনসভা গরম করার অভিযোগও রয়েছে কল্যাণের বিরুদ্ধে।
‘হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া’
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের এক সম্মেলন থেকে কল্যাণের ‘বিরোধীদের হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ মন্তব্য ঘিরেও ব্যাপক শোরগোল পড়ে।
এর আগেও একাধিক বার কল্যাণের অভব্য আচরণের সাক্ষী থেকেছে লোকসভা। ইউপিএ আমলে প্রবীণ সাংসদদের দিকে মারমুখী ভঙ্গিতে ছুটে যেতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকি এনডিএ জমানাতেও তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা ধরা পড়ে।
জগদীপ ধনখড়কে অঙ্গভঙ্গি করে নকল
আরও একবার কল্যাণের বিকৃত অঙ্গভঙ্গির সাক্ষী থাকল সংসদ চত্বর। মঙ্গলবার সাসপেন্ড হওয়া সাংদরা সংসদের বাইরে গান্ধীমূর্তির কাছে ধর্না দিচ্ছিলেন। সেসময়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের নকল করে দেখান তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অঙ্গভঙ্গির ভিডিয়ো করেন রাহুল গান্ধী। ঘটনাকে অত্যন্ত ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেন জগদীপ ধনখড়।
যদিও এক্ষেত্রেও নিরুত্তাপ কল্যাণ। তিনি বলেন, “ওঁ (জগদীপ ধনখড়) নির্দিষ্ট করে কারও নাম করেননি। তাহলে প্রতিক্রিয়া দেব কেন? ওঁ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, আমি তাঁকে সম্মান করি। কিন্তু, ওই খানে কী হয়েছে, না হয়েছে, তা নিয়ে ওঁ কিছু বলেননি। এগুলে ‘ভেগ’ কথাবার্তা।” তাঁর আরও বক্তব্য, বিতর্ক তো সব কিছুতেই হয়। তাঁর কথায়, বিতর্ক আসলে সংবাদমাধ্যমই তৈরি করে।