Kalyani Durga Pujo 2023: ‘চল্ নাম, একটাও ছেলে যেন না দেখি’, কল্যাণীতে ঠাকুর দেখে ‘লেডিসে’ ওঠা? জব্দ করতে একাই একশো মহিলা

Kalyani Durga Pujo 2023: দমদমে ট্রেন ঢুকল। কামরায় থাকা ৮০ শতাংশ পুরুষ চুপচাপ নেমে গেল। কয়েকজন তখন রয়েছেন। মহিলার আবার চিৎকার... 'কী রে?' তখন মুখ খোলে ছেলেগুলোর সঙ্গে থাকা কয়েকজন মেয়ে। তাঁরা বলেন, "দাদা হয় আমার.. আমি দাদার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম..."

Kalyani Durga Pujo 2023: 'চল্ নাম, একটাও ছেলে যেন না দেখি', কল্যাণীতে ঠাকুর দেখে 'লেডিসে' ওঠা? জব্দ করতে একাই একশো মহিলা
কল্যাণীতে ঠাকুর দেখে লেডিস কামরায় ভিড়! (প্রতীকী চিত্র)Image Credit source: AFP
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 25, 2023 | 4:47 PM

কলকাতা:  দিনটা নবমীর ভোর সাড়ে পাঁচটা। ভিড়ে ঠাসা নৈহাটি লোকালের মহিলা কামরা। নাহ, এই ভিড় নিত্য যাত্রীদের নয়। নয় মহিলাদেরও। কল্যাণীতে ঠাকুর দর্শনের পর ক্লান্ত পুরুষের ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরা। সেখানে তিল ধারণের জায়গা নেই। বাঁদুরঝোলা ভিড়। ট্রেনের সিট থেকে শুরু করে দরজার সামনে-সর্বত্র পুরুষ। স্বাভাবিকভাবেই নিত্য যাত্রী মহিলাদের অর্ধেকে ভোরের ট্রেনে উঠতেই পারেননি অনেকে। নৈহাটি ছাড়িয়ে প্রত্যেক স্টেশন দাঁড়িয়ে ট্রেন পৌঁছেছিল বেলঘরিয়া স্টেশনে। এক সালোয়াজ কামিজ পরা মহিলা উঠলেন। তিনি নিত্য অফিস যান। ভারী গলা। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত পুরুষ যাত্রীরা তখন সঙ্গে থাকা মহিলাদের সঙ্গে কামরা নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে।

আচমকাই সেই ছন্দে পতন। মহিলার গম্ভীর গলা। ‘আরে এই কামরায় এত ছেলে কোথা থেকে এল?’  কেউ উত্তর দেননি। সে সময়ে কোনও ছেলের কাছে তার জবাবও অবশ্য ছিল না। গাম্ভীর্যপূর্ণ গলায় আবারও মহিলার প্রশ্ন, “আরে এত ছেলে কেন? নাম সবটা…” ছেলেগুলো তখন একে অপরের চোখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। ছেলে বলা হচ্ছে, একটা গোটা লেডিস কামরা যত সংখ্যক পুরুষ ছিলেন, তাঁদের কারোরই বয়স দৃশ্যত তিরিশের উর্ধ্বে নয়। ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ বলে উঠলেন, রাতে ট্রেনে পাইনি। ভোরে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে ওঠার জায়গা পাইনি। মহিলা বললেন, “জেনারেল কম্পার্টমেন্টে উঠতে পারোনি তো কী? পরের ট্রেনে আসবে, এভাবে মহিলাদের কামরায় উঠলে, মহিলারা কোথায় যাবেন?”

ভোরের ট্রেনে এমনিতেই নিত্য যাত্রীর সংখ্যা তখন হাতেগোনা। ওই যে বলা হল, গোটা কামরাই তখন পুরুষদের দখলে, আর তাঁদের সঙ্গে থাকা বান্ধবীদের! মহিলা একাই বললেন, “সব ক’টা ছেলে নেমে যাবি, পরের স্টেশনে” (ট্রেন তখন বেলঘরিয়া ছেড়ে এগিয়েছে দমদমের উদ্দেশে) মহিলার পরিচয় তখনও জানা যায়নি। কোনও পুরুষ তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টাও করছেন না। দৃশ্যত ভয় পেয়েছেন প্রত্যেকে। কারণ এমনিতেই তো মহিলা কামরায় ওঠা মানে মোটা টাকার জরিমানা। আর তা না হলে জেলেও যেতে হতে পারে। মহিলা একাই আঙুল উঁচিয়ে বলতে লাগলেন, “প্রত্যেকে নামবি দমদমে, কামরা ফাঁকা করবি… একটাও ছেলে যেন না দেখি।”

দমদমে ট্রেন ঢুকল। কামরায় থাকা ৮০ শতাংশ পুরুষ চুপচাপ নেমে গেল। কয়েকজন তখন রয়েছেন। মহিলার আবার চিৎকার… ‘কী রে?’ তখন মুখ খোলেন ছেলেগুলোর সঙ্গে থাকা কয়েকজন মেয়ে। তাঁরা বলেন, “দাদা হয় আমার.. আমি দাদার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম…” মহিলার তৎক্ষণাৎ জবাব, ‘দাদার সঙ্গে তাহলে তুমিও নেমে যাও…’ দাদা নামলেন, বোনটি চুপচাপ দাঁড়িয়েই রইল লেডিস কামরায়।

দমদম ছেড়ে ট্রেন এগোচ্ছে। পাঁচ-দশ মিনিট আগেই যেখানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না, সেই কামরায় হাতে গোনা কুড়ি-পঁচিশটা মেয়ে।

এবারের পুজোয় কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে কল্যাণী! বিগ বাজেটের পুজোকে বলে বলে গোল দিয়েছে কল্যাণীর আইটিআই মোড়ের পুজো। আর সেই পুজোর জেল্লা হাতে গরম প্রমাণ পেয়েছে লোকাল ট্রেন। রাতভর ঠাকুর দেখে প্ল্যাটফর্মে মধ্যরাত থেকে বসে থেকেছে মানুষ। ভোরের রানাঘাট লোকাল. কিন্তু নৈহাটি লোকাল ধরছেন। ট্রেন ধরছেন বললে ভুল, কার্যত পুজোর ক’টা দিন ট্রেন দখলেই চলে গিয়েছিল দর্শনার্থীদের। তবে কর্মসূত্রে অনেককেই পুজোর দিনে কলকাতায় আসতে হয়েছে। যাঁরা ট্রেনের নিত্যযাত্রীদের তাঁদের সমস্যা দেখার লোকই ছিল না ট্রেনে। এ ক’দিনে চোখে পড়েনি কোনও আরপিএফকে। মহিলা কামরা যেভাবে পুরুষের দখলে গিয়েছে, তাতেও রেল পুলিশকে কোনও পদক্ষেপই করতে দেখা যায়নি। ওই মহিলার আদৌ রেল পুলিশ কিনা, তার প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু তিনিই যা ভূমিকা নিলেন, তা প্রশংসনীয়।