‘নিয়ম মেনে বদলির তালিকা তৈরি করে পাঠাতাম নবান্নে, ফিরত চলে আসত’, কীসের ইঙ্গিত একদা স্বাস্থ্য অধিকর্তার?
Kolkata: আত্মঘাতী চিকিত্সক অবন্তিকার ফেসবুক পোষ্ট কি সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ?
কলকাতা: রাজ্য সরকারের বদলি নীতির প্রতিবাদে গায়ে অ্যালকোহল ঢেলে আত্মঘাতী হয়েছেন এক মহিলা চিকিত্সক। আর তা নিয়েই রাজ্য জুড়ে নয়া বিতর্কের সূত্রপাত। নেপথ্যে উঠে আসছে রাজ্য সরকারের বদলি নীতিতে স্বজন পোষণের অভিযোগ। চিকিত্সকদের অভিযোগ, এক শ্রেণির চিকিত্সক দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কর্মরত রয়েছেন। অপর শ্রেণির চিকিত্সকরা পড়ে থাকছেন জেলাতেই। বছরের পর বছর। জেলায় দীর্ঘদিন কাজ করার পর আবারও জেলাতেই বদলি হচ্ছেন তাঁরা। যেমনটা হয়েছে চিকিত্সক অবন্তিকা ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রেও।
এর নেপথ্যে উঠে আসছে অর্থোপেডিকের এক বেসরকারি চিকিত্সকের নাম। তাঁর বিরুদ্ধে ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ, সেই ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর নাম উত্তরবঙ্গ লবি। এই উত্তরবঙ্গ লবিতেই থাকলেই নাকি মিলবে বিশেষ সুযোগ। আত্মঘাতী চিকিত্সক অবন্তিকার ফেসবুক পোষ্ট কি সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ?
এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “আমাকে খুব অল্প সময়ের জন্যই এই পদে রাখা হয়েছিল। সে সময় আমি বদলি নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলাম। সুষ্ঠুভাবে নিয়ম মেনে বদলির একটি তালিকাও তৈরি করেছিলাম। যাঁরা বহু দিন ধরে বাড়ি থেকে অনেক দূরে জেলা-গ্রামে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের বাড়ির কাছে আনার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তালিকা তৈরি করার পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে নবান্নে গিয়ে বারবার ঘুরে এসেছে। সেই তালিকা কার্যকর করা হয়নি।”
প্রদীপবাবু উত্তরবঙ্গ লবি প্রসঙ্গে বলেন, “এটা একটা অদৃশ্য ব্যাপার। এই জিনিসটা কে করছেন, কেন করছেন, কোনও কারণ তো লেখা হত না। অজানা কারণেই নবান্নে গিয়ে ফিরত চলে আসত।”
বাম আমলে জোন ভিত্তিক একটা বদলি নীতি ছিল। সকলকে চাকরি জীবনের এককাল জেলা বা গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়ার নিয়ম ছিল। পাঁচ বছর জেলায় পরিষেবা দেওয়ার পরে তাঁদের বাড়ির কাছে সুবিধামতো পোস্টিং দেওয়া হত। সন্তান বা পারিবারিক সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে যাতে বাড়ির দূরে যেতে না হয়, সেই বিষয়টিও অগ্রাধিকার পেত। কিন্তু এখন কার্যত কোনও বদলি নীতি মানা হচ্ছে না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি।
চিকিত্সক নেতা উত্পল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবন্তিকার পরিবারের পাশে আমরা আছি। চিকিত্সক ও শিক্ষক চিকিত্সকরা বদলির সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের মানসিক অবস্থা কোন জায়গায় পৌঁছাচ্ছে, তার একটা খারাপ উদাহরণ আমরা দেখলাম। বিগত ১০ বছর ধরে বদলির নীতি নিয়ে ভুগছেন চিকিত্সকরা। বদলিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। চিকিত্সকদের বাড়ি থেকে বহু দূরে কাজ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে, সেটা কিন্তু বেছে বেছে কয়েকজন চিকিত্সকের ক্ষেত্রে। সকলের ক্ষেত্রে নয়। অবন্তিকার বাচ্চাটি অসুস্থ। অবন্তিকা হাসিখুশি মেয়ে ছিলেন।”
স্বাস্থ্য দফতরের বদলি নীতিকে কাঠগড়ায় তুলে আত্মঘাতী সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক। হাসপাতালের বেডে চিকিত্সক অবন্তিকা ভট্টাচার্যের দু’সপ্তাহের লড়াই শেষ হয় সোমবার। গত ১৬ অগস্ট বেহালার বাড়িতে গায়ে অ্যালকোহল ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে নেন চিকিৎসক অবন্তিকা ভট্টাচার্য। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ফেসবুক পোস্টের পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরে ফোন করে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন অবন্তিকা। দু’সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পরে সোমবার এসএসকেএমে মৃত্যু হয় বছর চল্লিশের চিকিৎসকের। দীর্ঘদিন মেদিনীপুরে কর্মরত থাকার পর তাঁকে কোনও পদোন্নতি ছাড়াই ডায়মন্ডহারবারে বদলি করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে শোরগোল রাজ্য চিকিত্সক মহলে। আরও পড়ুন: EXCLUSIVE: ‘শান্তি কীসে পাব?’ ফেসবুকে পোস্টের পরই গায়ে অ্যালকোহল ঢেলে আগুন ধরালেন চিকিত্সক! কাঠগড়ায় রাজ্য সরকার