ডাকাত কালীর গল্প: স্বপ্নাদেশ পাওয়া রঘু ডাকাতের কালীকে গান শুনিয়েছিলেন স্বয়ং রাম প্রসাদও

উত্তর কলকাতার কাশীপুর রোড এবং খগেন চ্যাটার্জি রোড ছিল তৎকালীন ভাগীরথী নদীর তীরে এক জঙ্গলময় এলাকা। আর এই জঙ্গলে ভরা এলাকাই ছিল রঘু ডাকাতের ডেরা। এই রঘু ডাকাতের হাতেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন চিত্তশ্বরী সর্বমঙ্গলা কালী। বলা হয় রঘু ডাকাত কখনই রক্তবস্ত্র পরে মায়ের পুজো করতেন না

ডাকাত কালীর গল্প: স্বপ্নাদেশ পাওয়া রঘু ডাকাতের কালীকে গান শুনিয়েছিলেন স্বয়ং রাম প্রসাদও
ডাকাত কালী (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 04, 2021 | 9:03 AM

কালো রঙ, টকটকে লাল জিভ, গলায় মুণ্ডুর মালা, শক্তির দেবী কালী রূপ দেখলেই মাথায় চলে আসে রোমহর্ষ করা সব কাহিনী। আর নানা সাধকদের পাশাপাশি সেসব কাহিনীতে জড়িয়ে গিয়েছে বাংলার সব নামকরা নৃশংস ডাকাতদের নামও। শক্তির আরাধ্যা কালী আর এই সব ডাকাতরা ডাকাতিতে যাওয়ার আগে মা কালীর পুজো করত। আর সেসব থেকেই জন্ম নিয়েছে নানা গল্পের। এই সব ডাকাতরা প্রতিষ্ঠা করেছেন নানা কালী মন্দিরের। তেমনই এক একজন হলেন রঘু ডাকাত। তবে বাংলার নানান ইতিহাসে অনেক জায়গাতেই রঘু ডাকাতের নাম এবং তার প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের কথা পাওয়া যায়। বর্ধমান হোক বা হুগলী, অথবা মুর্শিদাবাদ, এরকম নানা জেলাতেই পাওয়া যায় রঘু ডাকাত এবং তার প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের। তবে আমাদের রঘু ডাকাত খাস কলকাতার।

উত্তর কলকাতার কাশীপুর রোড এবং খগেন চ্যাটার্জি রোড ছিল তৎকালীন ভাগীরথী নদীর তীরে এক জঙ্গলময় এলাকা। আর এই জঙ্গলে ভরা এলাকাই ছিল রঘু ডাকাতের ডেরা। এই রঘু ডাকাতের হাতেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন চিত্তশ্বরী সর্বমঙ্গলা কালী। বলা হয় রঘু ডাকাত কখনই রক্তবস্ত্র পরে মায়ের পুজো করতেন না, বরং তিনি মায়ের পুজো করতেন পট্টবস্ত্র পরে। কারণ রঘু ডাকাত ছিলেন পরম বৈষ্ণব, তবে তিনি শাক্ত মতেই করতেন মা কালীর পুজো। প্রথম জীবনে তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন রঘুবাবু নামে, কিন্তু পরে ডাকাতের জীবন বেছে নেওয়ায় তার নাম হয়ে যায় রঘু ডাকাত।

তবে রঘু ডাকাত কখনই গরীবদের লুঠপাট করতেন না, বরং তাদের তিনি সাহায্য করতেন অর্থ দিয়ে। কীভাবে এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করলেন রঘু ডাকাত? কথিত আছে একদিন সন্ধেবেলা রঘু ডাকাত ভাগীরথী নদীর উত্তর দিকে (বর্তমানে এই মন্দিরের উত্তর দিকে যে পুকুরটি আছে, সেটাই সেই সময় ভাগীরথী নদীর অংশ ছিল) ঘুরছিলেন। সেই সময় একটি জলা অংশে তিনি এক জায়গায় দুটি পাথরের মূর্তি দেখতে পান। একটি মহাদেবের মূর্তি আরেকটি অজানা কোনও দেবীর মূর্তি। তবে দেবীর মূর্তি দুটিতে তিনি সেভাবে গুরুত্ব না দিয়ে ডেরায় ফিরে আসেন। এরপর রাতে তাকে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী। স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানান, রঘু যেন ডাকাতির জীবন ছেড়ে দিয়ে সাবধান হয়ে সাধারণ জীবনযাপন করেন। মা শক্তিরূপিণী মহাদেব সহ জলাশয়ে পড়ে আছেন, রঘু যেন তাঁদের প্রতিষ্ঠা করে শেষ জীবনে শক্তির দেবীর মহিমা প্রচার করেন।

এরপরই রঘু এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বৈষ্ণব হয়েও শাক্ত মতে তিনি মায়ের পুজো করতেন। এবং ধীরে ধীরে ডাকাতির পথ থেকেও সরে আসেন। রঘু ডাকাতের মৃত্যুর পর এই মন্দিরের দায়িত্ব আসে রামশরণ সিমলাই নামে এক ব্রাহ্মণের হাতে। শোনা যায় তিনিও স্বপ্নাদেশ পেয়ে বর্তমান কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি রোডে নতুন করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে রঘু ডাকাতের কালীকে প্রতিষ্ঠা করেন। শোনা যায় স্বয়ং সাধক রামপ্রসাদ কলকাতা থেকে নৌকাযোগে হালিশহর যাওয়ার পথে ভাগীরথীর বক্ষ থেকেই মাকে গান শুনিয়েছিলেন, ‘মা তারিণী শঙ্কর বৈরাগী’। বর্তমানে কাশীপুরের খগেন চ্যাটার্জি রোডের এই মন্দিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়, পাশাপাশি জাগ্রত দেবী বলেও সুনাম আছে এই মন্দিরের।

আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: কালী হয়েও তিনি শ্বেতশুভ্রা, কুলটির এই দেবী রামকৃষ্ণের স্বপ্নে এসেছিলেন…