ডাকাত কালীর গল্প: স্বয়ং সারদাকে পাকড়াও করে নিয়ে যান নীল-ভুলু ডাকাত, তারপর দেখলেন …
সুউচ্চ এই কালী মূর্তির হাতপা বাঁধা থাকে শেকল দিয়ে। নীচের বেদিটি অসুর মুণ্ডু দিয়ে তৈরি। উগ্রচণ্ডা রূপে দেবী সেই আসনে আসীন স্বামী সহ। স্থানীয়দের কথায় এই দেবীর উচ্চতা ২৪ ফুট। চেতলা অঞ্চলের দারোয়ান পাড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরের নাম ডাকাত কালী মন্দির।
ডাকাত এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত কালী নিয়ে সারা বাংলায় গল্পের অভাব নেই। শক্তির আরাধ্যা এবং ডাকাতদের নৃশংসতা কোথাও গিয়ে যেন মিলেমিশে যায় নানা গল্পগাছা এবং লোককাহিনিতে। প্রচীন বাংলায় ডাকাতের অভাব ছিল না কোনও কালেই, এমনকী খাস কলকাতাতেও চলে ফিরে বেড়াত ডাকাতরা। আর সেসব ডাকাতরাও পুজো করতেন কালীর। শক্তির পুজারী ডাকাত আর শক্তির দেবী কালী তাই কোথাও গিয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
নীলু ভুলু নামে তারকেশ্বর অঞ্চলের দুই ডাকাতের সঙ্গেও রয়েছে কলকাতার এক কালী মন্দিরের যোগ। চেতলা বাজার অঞ্চলের চেতলা রোডে অবস্থিত এই কালীর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে মা সারদা এবং নীলু ভুলু ডাকাতের নাম। সুউচ্চ এই কালী মূর্তির হাতপা বাঁধা থাকে শেকল দিয়ে। নীচের বেদিটি অসুর মুণ্ডু দিয়ে তৈরি। উগ্রচণ্ডা রূপে দেবী সেই আসনে আসীন স্বামী সহ। স্থানীয়দের কথায় এই দেবীর উচ্চতা ২৪ ফুট। চেতলা অঞ্চলের দারোয়ান পাড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরের নাম ডাকাত কালী মন্দির। ঠিকানা ১৯ নম্বর চেতলা হাট রোড। এই মন্দির কবে কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার কোনও লিখিত বা সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে যেহেতু মন্দিরটির নাম ডাকাত কালী মন্দির তাই অনুমান করা হয় এটি কোনও ডাকাতেরই প্রতিষ্ঠা করা।
ইতিহাস অনুযায়ী প্রাচীন কলকাতা ছিল জলা জঙ্গলে পরিপূর্ণ। আর সুন্দরবনের বিস্তৃত অঞ্চল বলে এখানে ছিল বাঘ এবং ডাকাতদের সহাবস্থান। স্থানীয় মানুষজনের কথায় জানা যায় এখানে নাকি এক সময় চলে ফিরে বেড়াতেন মা কালী। পুরোনো দিনে অনেক মানুষই নাকি মাকে শিবের বুক থেকে নেমে মন্দিরে হেঁটে চলে বেড়াতে দেখেছেন মাকে। তাই বলা হয় মা কালী যাতে মন্দির ছেড়ে পালাতে না পারেন তাই সেইসময়ের ডাকাতরা মাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। আজও তাই মায়ের হাত পা শৃঙ্খলাবদ্ধ। তবে বর্তমানের মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে বছর পঞ্চাশেক আগে, কিন্তু রীতিনীতি সেই পুরাতনই রাখা হয়েছে।
এই মন্দির নিয়ে আরেকটি জনশ্রুতিও পাওয়া যায়। আর তা হল একবার তারকেশ্বর যাওয়ার পথে মা সারদাকে নীলু ও ভুলু নামের দুই ডাকাত ধরে নিয়ে তাদের আখড়ায় বেঁধে রাখে। পরে দেখেন মা সারদার জায়গায় বসে স্বয়ং কালী। এরপর তাঁরা মা সারদাকে ছেড়ে দেয়। তবে ইতিহাস, জনশ্রুতি যাই হোক না কেনও, আজও চেতলা অঞ্চলের এই কালীকে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেই পুজো করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: এই ৩ গ্রামে হয়না কোনও কালীপুজো, জানুন ডাকাত কালীর ইতিহাস