সাদামাঠা চেহারা, সদা হাস্য মুখ, পালিয়ে বিয়ে! বোমারু মিজানের গা-হিম করা গল্প

একদিন তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ত্রিশাল এলাকায় পুলিশের ভ্যানের ওপর হামলা হয়। সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসে কওসর।

সাদামাঠা চেহারা, সদা হাস্য মুখ, পালিয়ে বিয়ে! বোমারু মিজানের গা-হিম করা গল্প
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 10, 2021 | 7:30 PM

কলকাতা: সালটা ২০১৪, দুর্গাপুজোর অষ্টমী ছিল সেদিন। গোটা রাজ্য গা ভাসিয়েছিল উৎসবে। কিন্তু সেই দুপুরেই বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রাম খাগড়াগড়ের ছোট্ট এক চালার বাড়ির বিস্ফোরণ নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বাংলাকে (Khagragarh Blast)। ঘটনায় সেদিন মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। সাকিল আমহেদ ও শোভন মণ্ডলের। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যা যা উদ্ধার করেছিল, তাতে জল গড়ায় অনেক দূর।

গোটা ঘটনার মাস্টারমাইন্ড এই কওসর (JMB Leader Kausar)। চেহারা নিতান্তই সাদামাঠা। চোখে নিস্পৃহতা। স্বল্পভাষী। কিন্তু মাঝবয়সীর এই ব্যক্তির জঙ্গি ষড়যন্ত্রের নানান দিকের কথা জানতে পেরে চোখ কপালে ওঠে দুঁদে গোয়েন্দাদের। বাংলাদেশি নাগরিক কওসর জেএমবি-র সূচনা পর্ব থেকেই ওই সংগঠনের নেতা। আসল নাম জইদুল ইসলাম। বোমা বানানোর দক্ষতার জন্য সে পরিচিত বোমারু মিজান নামেও।

২০০৫ সালে বাংলাদেশে একাধিক বিস্ফোরণে জড়িত ছিল সে। তাকে সেসময় গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলে ছিল কওসর। একদিন তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ত্রিশাল এলাকায় পুলিশের ভ্যানের ওপর হামলা হয়। সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসে কওসর।

সীমানা পেরিয়ে চলে আসে মুর্শিদাবাদে। বীরভূমে বিয়ে করে। এরপর বর্ধমানের বাবুরবাগের কাছে থাকতে শুরু করে। এখানেই মূলত কওসর নাম নেয় সে। পড়শিদের কাছে তার পরিচিত ছিল মাস্টারমশাই হিসাবেই। একটি মাদ্রাসায় পড়াত সে। কিন্তু আদতে সেই মাদ্রাসার আড়ালেই চলত জঙ্গি প্রশিক্ষণ। জঙ্গি সংগঠনের শাখা খুলতে শুরু করে কওসর। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাতেই তার সঙ্গে থাকত আরও দুই জেএমবি নেতা সোহেল মাহফুজ ও সাকিল গাজি। মালদা, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানে জাল বিছিয়ে ফেলে কওসর। শাখা ছড়ায় ঝাড়খণ্ডেও।

২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে বেঙ্গালুরু থেকে কওসরকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। এরপর জেরায় কওসর নিজেই জানায়, বিস্ফোরণের পর শ্রমিক সেজে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে ছিল। কওসর কখনও কলের মিস্ত্রি, কখনও গাড়ির মিস্ত্রি, কখনও ফেরিওয়ালা সেজে থাকত। সে সব জায়গায় বাঙালি শ্রমিকদের এলাকাতেই লুকিয়ে থাকত সে।

আরও পড়ুন: খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের সাজা ঘোষণা, কওসরের ২৯ বছর জেল

কওসর ছিল নব্য জেএমবি অর্থাৎ ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শে বিশ্বাসী। কওসর ছক ছিল আরও গহিন। কওসর চেয়েছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেশে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তাকে কাজে লাগাতে। তদন্তকারী মনে করছেন, কওসর ধরা না পড়লে, হয়তো বড়সড় নাশকতার ঘটনা ঘটে যেতে পারত ভারতে।