Kolkata Metro: কলকাতা মেট্রোয় সমস্ত করিডোরে চালু হবে সিবিটিসি সিগনালিং ব্যবস্থা

Kolkata Metro: এখন জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড এবং কবি সুভাষ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোর করিডোরে এই উন্নত সিগনালিং ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। কলকাতা মেট্রোর কর্তাদের মতে, এই অত্যাধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা অত্যন্ত নিরাপদ। এটি ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থাকে আরও নমনীয় করে তুলবে বলেই মত তাঁদের।

Kolkata Metro: কলকাতা মেট্রোয় সমস্ত করিডোরে চালু হবে সিবিটিসি সিগনালিং ব্যবস্থা
কলকাতা মেট্রোImage Credit source: Facebook
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 22, 2024 | 5:32 PM

কলকাতা: মহানগর কলকাতার একপ্রকার লাইফ লাইন হল কলকাতা মেট্রো পরিষেবা। ব্যস্ত শহরের যানজট এড়িয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে শহরবাসীর প্রথম পছন্দ মেট্রোই। যাত্রী নিরাপত্তাকে ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যকে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে কলকাতা মেট্রো। আর এবার সেই লক্ষ্যেই সিগনালিং ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। স্পেন, ডেনমার্ক-সহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলির মতো কলকাতা মেট্রোতেও চালু হতে চলেছে কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল (সিবিটিসি) সিগনালিং ব্যবস্থা।

এখন জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড এবং কবি সুভাষ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রোর করিডোরে এই উন্নত সিগনালিং ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। যার জন্য খরচ হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। কলকাতা মেট্রোর কর্তাদের মতে, এই অত্যাধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা অত্যন্ত নিরাপদ। এটি ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থাকে আরও নমনীয় করে তুলবে বলেই মত তাঁদের। স্পেন, ডেনমার্কের মতো দেশগুলিতে এই সিগনালিং ব্যবস্থার ফলে মোটরম্যান ছাড়াই মেট্রো চালানো সম্ভব হচ্ছে। দিল্লি মেট্রোও মোটরম্যান-বিহীন মেট্রো পরিষেবা চালু করেছে।

কলকাতা মেট্রোতে সিবিটিসি সিগনালিং ব্যবস্থায় অটোমেটিক ট্রেন অপারেশনস (এটিও) মোডে (অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থায়) ট্রেন চালানোর সময় মোটরম্যানদের কোনও ভূমিকা থাকে না। তাঁরা কেবল বোতাম টিপে দরজা বন্ধ ও স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার কাজটি করেন। ভারতের অন্যান্য মেট্রোতে এই কাজ যাঁরা করেন তাঁদের ট্রেন অপারেটর বলে।

কলকাতা মেট্রো নতুন করিডোরগুলি ছাড়াও পুরোনো নর্থ-সাউথ করিডোরেও এই সি বি টি সি ব্যবস্থা বসানো হচ্ছে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এই কাজে অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এই সিগনাল বসানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে কলকাতা মেট্রোর পুরো নেটওয়ার্ক সিবিটিসি সিগন্যালিং ব্যবস্থার এটিও মোডে পরিচালিত হবে, সেরকমই টার্গেট নেওয়া হয়েছে। মেট্রো কর্তাদের মতে, এই বিষয়টি মেট্রো যাত্রীদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে। এর ফলে প্রয়োজন হলে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে।

এই অত্যাধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা চালু হলে মোটরম্যানদের প্রয়োজনীতা কার্যত ফুরিয়ে যাবে বলেই মত একাংশের। সেক্ষেত্রে ট্রেন পরিচালন সংক্রান্ত ৯৯.৯৯% কাজ এটিও মোডেই নিরাপদে সম্পন্ন হবে। তখন এই ব্যবস্থা মসৃণভাবে চালু রাখার জন্য কলকাতা মেট্রো ট্রেন অপারেটরদের নিয়োগ করতে পারে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। এছাড়া পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সঙ্গে যুক্ত মেট্রো কর্মীরাই ট্রেন অপারেটরের এই কাজ সহজে করে দেবেন।

এখানে উল্লেখ্য, কলকাতা মেট্রোতে অন্যান্য রেলের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যোগ্য মোটরম্যানদের মেট্রো চালানোর কাজে নিযুক্ত করা হয়। মেট্রো রেলের প্রয়োজন অনুযায়ী পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে থেকে মোটরম্যানদের ডেপুটেশনে নেওয়া হয় । বর্তমানে কলকাতা মেট্রোয় ৩১ জন মোটরম্যান ৬ মাস ধরে প্রশিক্ষণরত। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের আরও ১৬ জন মোটরম্যান ট্রেন চালানোর জন্য মেট্রো রেলে আসছেন। এছাড়া বিলাসপুর ডিভিশনের ১০ জন মোটরম্যান মেট্রোতে আসতে চলেছেন।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় রেলে ৮-১০ বছর বিভিন্ন স্তরে কাজ করার পরেই মোটরম্যানরা যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ব পান। এই পদে নব-নিযুক্তরা লোকো ড্রাইভারের সহযোগী হিসাবে কিছু বছর কাজ করার পর সান্টারের (যাঁরা ডিপো থেকে খালি রেক স্টেশনে নিয়ে আসেন) পদে উন্নীত হন। এই সান্টার পদে কিছু দিন কাজ করার পর এরা মালগাড়ী চালানোর দায়িত্ব পান। এরপর অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অধীনে (শুরুর দিকে) এরা যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ব পান। এক্ষেত্রে ডেপুটেশনে আসা মোটরম্যানদের পাশাপাশি মেট্রো কর্তৃপক্ষও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সান্টার পদে নিযুক্ত করে থাকেন। এর জন্য কাজের অভিজ্ঞতা, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফল এবং ডাক্তারি ফিট সার্টিফিকেট সব থেকে বেশি গুরুত্ব পায়।

মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শ্রী কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ‘কিছু কিছু সংবাদপত্রে দাবি করা হয়েছে যে এই সান্টাররা মেট্রোতে যাত্রীবাহী ট্রেন চালান যা ভিত্তিহীন, অসত্য ও প্ররোচনামূলক। তিনি আরও বলেছেন যে মেট্রো রেলে সান্টাররা কখনই যাত্রীবাহী ট্রেন চালান না , তারা কেবল খালি রেককে ইয়ার্ড থেকে স্টেশনে নিয়ে আসেন। এই সান্টার পদে বেশ কিছু বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জনের পর নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে এদের মোটরম্যান পদে উন্নীত করা হয়। এর আগে অবশ্য এরা ডাক্তারি পরীক্ষায় ফিট কিনা তা দেখে নেওয়া হয় এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অধীনে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ হলেই তবে এরা যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দায়িত্ত্ব পান। শুধু সান্টার পদে অভিজ্ঞতা থাকলেই হয় না ডাক্তারি পরীক্ষাতে তাদের অবশ্যই ফিট হতে হয় তবেই তারা মোটরম্যান পদে উন্নীত হন।’

কৌশিক মিত্র আরও জানিয়েছেন, বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর সিবিটিসি-হীন কোনও সেকশনে ট্রেন চালানোর জন্য কোনও কন্ডাক্টিং মোটরম্যানকে সরানো হয়নি। বরং ট্রেনি হিসাবে অতিরিক্ত মেট্রোকর্মী নিযুক্ত করা হয়েছে। অরেঞ্জ লাইনের কবি সুভাষ থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেশন পর্যন্ত অংশে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত কিছু মেট্রোকর্মীকে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা লাভ ও দক্ষতা অর্জনের জন্য কন্ডাক্টিং মোটরম্যানদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সান্টার পদে পদ্দোন্নতির জন্য নেওয়া পরীক্ষায় এরা অনায়াসে উত্তীর্ণ হতে পারবেন। পরবর্তীকালে প্রয়োজন হলে সমস্ত কারিগরী দক্ষতা ও মানসিক সক্ষমতা যাচাই করার পরই এদের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর কাজে নিযুক্ত করা হতে পারে।