AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পোস্তা বিপর্যয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই পুরস্কার শোকেসে! স্ট্র্যান্ড রোডে অনিরুদ্ধর ছোট্ট ভুল

স্ট্র্যান্ড রোডের আগুনের (Strand Road Fire) খবরটা পাওয়ার পর একেবারে উচ্চ পদস্থ দমকল কর্মীদের কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়েছেন। কিন্তু একটু অসতর্কতায় ঝলসে গিয়েছে তাঁর শরীর।

পোস্তা বিপর্যয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই পুরস্কার শোকেসে! স্ট্র্যান্ড রোডে অনিরুদ্ধর ছোট্ট ভুল
নিহত দমকল কর্মী অনিরুদ্ধ
| Updated on: Mar 09, 2021 | 4:44 PM
Share

কলকাতা: সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা। কিন্তু ছিল সরকারি চাকরি করার। বাবার অমতেই দমকল দফতরে চাকরি শুরু করেন বছর আঠাশের অনিরুদ্ধ জানা ওরফে রাজীব। চাকরি করছেন, তাও সাত বছর হয়ে গিয়েছে। তরুণ, হাসিখুশি ছেলেটা অফিসের ‘স্যার’দের নজরে পড়ে গিয়েছিলেন। সব বিপদেই যে ঝাঁপিয়ে পড়তেন তিনি। স্ট্র্যান্ড রোডের আগুনের (Strand Road Fire) খবরটা পাওয়ার পর একেবারে উচ্চ পদস্থ দমকল কর্মীদের কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়েছেন। কিন্তু একটু অসতর্কতায় ঝলসে গিয়েছে তাঁর শরীর। লিফটের বাইরে পড়েছিল তাঁর ঝলসানো দেহ।

অনিরুদ্ধের ধাপা মাঠপুকুরের বাড়িতে এখন প্রতিবেশীদের ভিড়। খাটের এক কোণে বসে রয়েছেন অনিরুদ্ধের বাবা। ঝাপসা চোখ। নির্বাক বৃষ্টি। ঠিক এক বছর আগে মাকে হারিয়েছেন অনিরুদ্ধ। বোনের বিয়ে দিয়েছেন নিজের হাতে। ঘরের ভিতরে এখনও সেই ছাপ স্পষ্ট।

পাড়ার ছেলেটা বরাবরই যে কোনও বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তা অজানা ছিল না প্রতিবেশীদের। বছর কয়েক আগে শহরের বুকে যখন ভেঙে পড়েছিল পোস্তা উড়ালপুল, তখনও নিজের জীবনকে বাজি রেখে বাঁচিয়েছেন কত মানুষের প্রাণ। ছোট্ট ঘরের দেওয়াল আলমারিতে রাখা স্মারকটিতে সেই প্রমাণ এখনও জ্বলজ্বল করছে।

অনিরুদ্ধ এবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁর প্রিয় শহরের এক বিপর্যয়ে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া প্রয়াস চালিয়েছেন। কিন্তু আজ নিয়তির কাছে হেরেছে ডাকাবুকো ছেলেটা। ঝলসে গিয়েছে তাঁর শরীর। বাড়ির এক ঘরে রাখা শোকেসের মাথায় রাখা রয়েছে অনিরুদ্ধর ছবি। চোখ দুটো যেন জ্বলজ্বল করছে, মুখে অমলিন হাসি।

আরও পড়ুন: নিষ্ঠুর নিয়তিরই হাতছানি! বাড়ির পথে রওনা দিয়েও ফের অগ্নিকুণ্ডের পথে ছুটলেন সুদীপ

ছবিটার দিকে ফিরেও তাকাতে চাইছেন না অনিরুদ্ধর বাবা। চোখ থেকে জল বেরোচ্ছে না তাঁর। ঘর ভর্তি লোক ভাষা খুঁজছে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার। অনিরুদ্ধর বাবাকে প্রশ্ন করা যায়নি কিছুই। হঠাৎই তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘রোজ বলতিস তাড়াতাড়ি ফিরব। আর দেরি করতিস। আর তো সেটাও বলতে পারব না। চলে গেলি, অনেক দূর চলে গেলি তুই…’

অনিরুদ্ধর সহকর্মীরা বলছেন, হয়তো অনিরুদ্ধও লিফটে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। আর সেখানেই লেলিহান শিখা গ্রাস করে তাঁকে। লিফটের সামনে থেকেই উদ্ধার হয় অনিরুদ্ধর দেহ। ভয়াবহ ওই পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে হয়তো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিলেন অনিরুদ্ধ!