কবিগুরুর সঙ্গে গুজরাট-যোগ স্থাপনে এত উৎসাহী কেন প্রধানমন্ত্রী? প্রশ্ন ব্রাত্যর
প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পংক্তি উল্লেখ করে বলেন, "ধর্মের নামে হয় নরবলি-বুদ্ধির বলি, বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।"
কলকাতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো বিশ্বকবি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন তাঁর সঙ্গে গুজরাট-যোগ স্থাপন করতেই বেশি উত্সাহী? বিশ্বভারতীর ১০০ বছর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভার্চুয়াল বক্তৃতার সমালোচনায় সরব তৃণমূল।
মোদীর ভার্চুয়াল বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন ব্রাত্য বসু ও ডেরেক ও’ব্রায়েন। যদিও এদিন সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন ব্রাত্য বসুই। প্রথমে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির অগ্রগতির কয়েকটি তথ্য প্রকাশ্যে আনেন তিনি। এরপরই চলে যান বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “আজ নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ শুনে আমি বিস্মিত। ওই বিস্ময় নিরসন করতেই আপনাদের কাছে এসেছি। ওঁর উচ্চারণগত অনেক ভুল ছিল। কিন্ত আমি তা ধরব না, কারণ আমিও অনেকসময় গুজরাটি শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে ভুল করতে পারি। তবে আমি অবাক হলাম প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর যাঁকে তিনি আগাগোড়া বলে গেলেন বড়দা বলে।”
প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রীর নামও ভুল উচ্চারণ করেছেন বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে ধরিয়ে দেন ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, “ওঁর স্ত্রীর নাম বললেন জ্ঞানম্বিনী, আসলে তাঁর নাম জ্ঞানদানন্দিনী।” জ্ঞানদানন্দিনীর সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী ভুল তথ্য দেন বলে অভিযোগ করেন। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বললেন, জ্ঞানদানন্দিনীদেবী গুজরাটি মহিলাদের কাছ থেকে শাড়ি পরার ভিন্ন ধরন শিখেছিলেন। এটা সত্য কিন্তু অর্ধসত্য। কারণ জ্ঞানদানন্দিনীদেবী গুজরাটিদের পাশাপাশি পারসি মহিলাদের থেকেও শাড়ি পরার ধরন শিখেছিলেন।” এরপরই তাঁর কটাক্ষ, “প্রধানমন্ত্রী তো পারসি মহিলাদের নাম নেবেন না।”
ব্রাত্যর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী এত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বললেন, কিন্তু, তাঁর মুখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শোনা যায়নি। তুকারাম, কবিরের নাম নিলেন। কিন্তু ব্রাত্য বললেন, প্রধানমন্ত্রী জানেন কি, তুকারাম, কবির ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মুখ।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বভারতী অবিচ্ছিন্ন ভারতের ঐতিহ্য, মোদীর ভাষণে বারবার উঠে এল সে কথাই
প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পংক্তি উল্লেখ করে বলেন, “ধর্মের নামে হয় নরবলি-বুদ্ধির বলি, বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।” উল্লেখ্য, এদিন প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, “ক্ষুধিত পাষাণের একটা অংশ গুজরাতে থাকাকালীন লেখা।” এই বিষয়টিকে কটাক্ষ করেই ব্রাত্য বলেন, “আমরা তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলার কবি বলে মনে করি না, আমরা তাঁকে বিশ্বকবি বলি। তবে ওঁ কেন রবিঠাকুরের সঙ্গে গুজরাট-যোগ করতে এত উত্সাহী?”
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, যত সময় এগোচ্ছে মহর্ষিদের নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তত বাড়ছে। তাতে অবশ্য বিরক্ত বিশেষজ্ঞদেরই একাংশ।