রাজ সংঘাতের মাঝেই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের সূচনা! রাজ্যপালের পদক্ষেপ নিয়ে কি প্রস্তুত শাসকদল?

বিধানসভা (West Bengal Assembly) শুরু হওয়ার ঠিক এক দিন আগেই তৃণমূল তথা শাসকদল রাজ্যপালের (Governor Jagdeep Dhankhar) দিকে আক্রমণ শানিয়েছে, তাতে তিক্ততার যে ধারাবাহিক পর্বটা আরও বেশি মাত্রা পেয়েছে। এদিন বহিঃপ্রকাশ হতেই পারে বিধানসভার অলিন্দে।

রাজ সংঘাতের মাঝেই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের সূচনা! রাজ্যপালের পদক্ষেপ নিয়ে কি প্রস্তুত শাসকদল?
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jul 02, 2021 | 9:37 AM

কলকাতা: গোটা রাজ্যের নজর আজ বিধানসভায় (West Bengal Assembly)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) তৃতীয় বার সরকার গঠনের পর প্রথম বিধানসভা অধিবেশন আর তাতে ভাষণ রাখতে আসছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Governor Jagdeep Dhankhar)। সরকার-রাজ্যপাল চরম বাগবিতণ্ডার মধ্যেই আজ বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন। আর রাজ সংঘাতে নজর গোটা রাজ্যের।

আরও ভেঙে বলতে গেলে, সরকার-শাসকদল-বিধানসভার অধ্যক্ষের সঙ্গে সংঘাতের আবহে আজ বাজেট অধিবেশনের সূচনা করবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজনৈতিক প্রশাসনিক মহলের কৌতুহল, তিক্ততার রেশ কি বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে থাকবে? অলিন্দেও কি তা টের পাওয়া যাবে? কারণ বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা এর অনেকটাই নির্ভর করছে, আজকে রাজ্যপালের ভূমিকার ওপর।

বিশ্লেষকদের ধারণা, বিধানসভা শুরু হওয়ার ঠিক এক দিন আগেই তৃণমূল তথা শাসকদল রাজ্যপালের দিকে আক্রমণ শানিয়েছে, তাতে তিক্ততার যে ধারাবাহিক পর্বটা আরও বেশি মাত্রা পেয়েছে। এদিন বহিঃপ্রকাশ হতেই পারে বিধানসভার অলিন্দে।

রাজ্যপাল প্রসঙ্গে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “রাজ্যপাল একজন দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ। আমি দুঃখিত এটা বলতে। কেন কেন্দ্রীয় সরকার ওঁকে রাজ্যপাল হিসাবে মনোনীত করেছিল? ” গত ২৮ তারিখ নবান্নে এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বৃহস্পতিবারই দু’টি ছবি প্রকাশ করে তৃণমূল নেতা তথা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের আবহে এই দুটি ছবি তোলপাড় ফেলে দেয়। তৃণমূল সাংসদ দাবি করেন, দেবাঞ্জনের দেহরক্ষী অরবিন্দ বৈদ্যের সঙ্গে বহু দিন ধরেই ধনখড়ের যোগাযোগ ছিল। তিনি প্রথম যে ছবিটি সামনে আনেন, তাতে অরবিন্দকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে দেবাঞ্জনের পিছনে। ঠিক তার পরের ছবিতেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যপালের পরিবারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অরবিন্দ। অর্থাৎ দেবাঞ্জন কাণ্ডে রাজ্যপাল যোগসূত্র উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল। বিতর্ক দানা বাঁধে। উল্লেখ্য, অরবিন্দকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে এসটিএফ।

এদিকে, ভোট পরবর্তী ইস্যু নিয়ে রাজ্যসরকার-রাজ্যপাল সংঘাতের মাঝেই বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দ্বৈরথ শুরু হয়েছে জগদীপ ধনখড়ের। তা অন্য রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে। রাজ্যপালের নামে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে নালিশ করেছিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে পাল্টা স্পিকারকে বিঁধেছিলেন রাজ্যপালও। জল গড়ায় বেশ কিছু দূর। আর এই সব জটিলতার মাঝেই শুরু হচ্ছে বিধানসভার সপ্তদশ অধিবেশন।

আরও পড়ুন: সংঘাতের আবহে রাজভবনে ব্রাত্য, রাজ্যপালের সঙ্গে কী কথা হল শিক্ষামন্ত্রীর?

প্রথা হচ্ছে, সরকার তথা মন্ত্রিসভা যে ভাষণ লিখে দেয়, তা পাঠ করেন রাজ্যপাল। আর তা দিয়েই শুরু হয় বিধানসভার অধিবেশন। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যপাল যদি সেটা পাঠ করেন, সরকারের কোনও বিরুদ্ধাচরণ না করেন, তাহলে সংঘাতের কোনও প্রশ্ন থাকে না। আর যদি তা না হয় সংঘাত অনিবার্য।

কেন এমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছে?

ঠিক এরকমই একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ২০২০ সালের বাজেট অধিবেশনে। প্রারম্ভিক ভাষণ, যা রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদিত হয়ে রাজ্যপালের কাছে যায়, প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, রাজ্যপালের তা পড়ার কথা, তিনি কি আদৌ তা করবেন? ঠিক এই আশঙ্কা গত বছরও বাজেট অধিবেশনে হয়েছিল। কিন্তু সেবার রাজ্যপাল তা করেননি। মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণই তিনি পাঠ করেন। এর আগে দেখা গিয়েছিল, কেরলের রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণ তিনি পাঠ করেননি। এবার আবার সেই আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কারণ উত্তরবঙ্গ ভাগ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা উল্লেখ থাকতে পারে মন্ত্রিসভার ভাষণে। পাশাপাশি কোনও একটি রাজনৈতিক দল যে হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেছিল, তাও উল্লেখ থাকতে পারে। রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ‘বুলি’ই কি সেক্ষেত্রে পাঠ করবেন না সহমত হবেন না? সেদিকেই নজর বাংলার। শুক্রবারের এই অধিবেশন নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে।