Lalan Sheikh Death: হেফাজতে মৃত্যু হলে তদন্তের নিয়ম ঠিক কী? কোন পথে বগটুইয়ের লালনকাণ্ড?
Lalan Sheikh Death: মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলে, যে আধিকারিকদের হেফাজতে ওই ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে মামলা শুরু হবে।
সিজার মণ্ডল: ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, যে কোনও মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত না হলে, তাঁকে অপরাধী বলা যায় না। আর প্রত্যেক অভিযুক্তেরই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এছাড়া হেফাজতে থাকলে, অভিযুক্তকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা আছে আইনে। তাই, সোমবার রামপুরহাট সিবিআই-এর অস্থায়ী ক্যাম্পে লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। হেফাজতে মৃত্যু হলে কী আইন আছে? পরবর্তী ধাপগুলোই বা কী হয়?
হেফাজত বলতে কী বোঝায়?
হেফাজত দুই ধরনের হয়। যে সংস্থা তদন্ত করছে, তারা নিজেদের কাছে রেখে জেরা করতে চাইতে পারে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে হয় পুলিশ হেফাজত। কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে থাকলেও, আইনি ভাষায় তা পুলিশ হেফাজত বলেই উল্লেখ করা হয়। অপরটি হল জুডিশিয়াল কাস্টডি বা জেল হেফাজত। আসলে আইন অনুযায়ী জেলের অভিভাবক আদালত।
বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা যেতে পারে
হেফাজতে মৃত্যু বা কোনও গুরুতর আঘাত, কোনওটাই কাম্য নয়। যাঁকে ‘অভিযুক্ত’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাঁর বাঁচার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাই হেফাজতে এমন কোনও ঘটনা ঘটলে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭৬ (১) নম্বর ধারা অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোটা ঘটনার তদন্ত করতে পারেন। যাকে বলা হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত। লালন শেখের মৃত্যুতে সেই বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠেছে ইতিমধ্যেই। সে ক্ষেত্রে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে যেমন বিচারবিভাগীয় তদন্ত হতে পারে, আবার কোনও কর্মরত বিচারপতিও (সিটিং জজ) তদন্ত করতে পারেন।
দিনের আলোয় পরিবারের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত
এই ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত করা অত্যন্ত জরুরি। কোনও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত করাতে হয়, পরিবারের লোকজনকেও সেখানেও উপস্থিত থাকতে হয়। রাতে নয়, কেবলমাত্র দিনেরবেলায় ময়নাতদন্ত করা হয় এ ক্ষেত্রে। আর পুরো ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করা হয় যা সাধারণ ক্ষেত্রে হয় না। ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে যাতে কেউ কোনও প্রভাব খাটাতে না পারেন, কোনও সন্দেহ যাতে না থাকে, তাই সবরকমের সাবধানতা নেওয়া হয়।
হেফাজতে বিশেয শৌচালয়
নিয়ম হল, কাউকে হেফাজতে রাখা হলে শৌচালয়ের নীচের দিকে ও ওপরের দিকে দরজায় বেশ কিছুটা ফাঁকা রাখতে হবে। অর্থাৎ অভিযুক্ত শৌচালয়ে গেলে যেন তাঁর পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ও মাথা থেকে বুক পর্যন্ত দেখা যায়। লালন শেখের মৃত্যুর ক্ষেত্রে সিবিআই দাবি করেছে, শৌচালয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন লালন। অস্থায়ী ক্যাম্পে শৌচালয়ের ক্ষেত্রে কি নিয়ম মানা হয়েছিল? উঠছে সেই প্রশ্নও।
আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলে হতে পারে মামলা
লালন শেখের মতো ঘটনায় ময়নাতদন্ত অত্যন্ত জরুরি। শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন আছে কি না (ইতিমধ্যেই তেমন অভিযোগ জানিয়েছেন লালনের স্ত্রী), তা উঠে আসবে ময়নাতদন্তে। আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলে, যে আধিকারিকদের হেফাজতে ওই ব্যক্তি ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে মামলা শুরু হবে।
খুনের অভিযোগ উঠলে ৩০২ ধারায় বা মারধরের চিহ্ন থাকলে ৩০৪ ধারাতেও মামলা হতে পারে। কোনও অভিযোগ না উঠলেও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা রুজু করতে পারে পুলিশ।
এছাড়া, রীতি অনুযায়ী, এই ধরনের অভিযোগ সামনে এলে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা (এক্ষেত্রে সিবিআই)। সংশ্লিষ্ট মামলার অফিসারদের আপাতত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেই তদন্ত করা হয়। এই তদন্তের সঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কোনও সম্পর্ক নেই।