Lalon Sheikh Death: ‘কোন সংস্থা নিরপেক্ষ? আপনার কী মনে হয়?’ লালন মৃত্যুমামলায় মানবাধিকার কমিশনকে প্রশ্ন হাইকোর্টের

Lalon Sheikh Death: গোটা বিষয়টি শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

Lalon Sheikh Death: 'কোন সংস্থা নিরপেক্ষ? আপনার কী মনে হয়?' লালন মৃত্যুমামলায় মানবাধিকার কমিশনকে প্রশ্ন হাইকোর্টের
হাইকোর্টে লালন মৃত্যু মামলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 19, 2022 | 2:11 PM

কলকাতা: বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের রহস্যমৃত্যুতে মানবাধিকার কমিশনের করা মামলার শুনানি শেষ। রায়দান আপাতত স্থগিত। সোমবার জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। তবে রায়দান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

লালনের শেখের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বাঁধার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত শুরু করে। এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে হাই কোর্টে সওয়াল করেন আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী।

জনস্বার্থ মামলকারীর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, মূলত দু’টি আবেদন করা হয়েছিল। প্রথমত, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে জনস্বার্থ মামলাটি যাতে গ্রহণ করে হাই কোর্ট।

দ্বিতীয়ত, রাজ্য তদন্তের পক্ষে উপযুক্ত সংস্থা নয়। সিবিআইকে দিয়েই তদন্ত করানো হোক। সেই তদন্তের উপর নজরদারি করুক হাই কোর্ট। তদন্তের গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখা হোক।

আসলে রামপুরহাটে সিবিআই-এর অস্থায়ী ক্যাম্পে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআই- পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্বামীকে খুন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি। তিনি সিআইডি তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। আর এখন এই তদন্ত নিয়ে সিবিআই এবং সিআইডি দুই সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।

লালনের মৃত্যুর সঙ্গে বগটুই গণহত্যা জড়িত। ওই ঘটনায় হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। এদিকে, লালনের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত করছে সিআইডি। দুটি পারস্পরিকভাবে যুক্ত।

এদিনের শুনানির সময়ে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব জনস্বার্থী মামলাকারীকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কি সমান্তরাল তদন্ত চাইছেন?” তখন আইনজীবী সব্যসাচী বলেন, “কোনও কমিশন বা কমিটি গঠন করে ঘটনাটির অনুসন্ধান করা হোক।”

প্রধান বিচারপতি ফের প্রশ্ন করেন, “আপনি কি অনুসন্ধান চাইছেন? তদন্ত তো চলছে। কী চাইছেন স্পষ্ট করে বলুন।” ফের জনস্বার্থ মামলাকারী বলেন, “এই ঘটনাটির অনুসন্ধান করার পর কোনও নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করা হোক।” রাজ্যের হাতে যাতে কোনওভাবেই তদন্ত ভার না দেওয়া হয়, তার জন্য সওয়াল করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি তখন মামলাকারীর উদ্দেশে বলেন, “কোন সংস্থা নিরপেক্ষ? আপনার কী মনে হয়?” উত্তরে সব্যসাচী বলেন, “অনুসন্ধান কমিশন আইন অনুসারে কোনও বিচারপতির নজিরদারিতে সিবিআই তদন্ত করুক।”

এরপর রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নতুন করে বিচারপতি নিয়োগ করে ফের তদন্ত করার প্রয়োজনীয়তা নেই। হাই কোর্ট সিআইডির হাতেই তদন্ত ভার রেখেছে। সিবিআই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না জানিয়েছে আদালত। সেই মতো তদন্ত চলছে।”

এরপর কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী বলেন, “তদন্তের নামে আমাদের অফিসারদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশ এফআইআর করার পিছনে নির্দিষ্ট কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। তাঁরা আমাদের অফিসারদের নিজেদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছে।”

সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী আরও বলেন, “মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই ঘটনাটি সিবিআই নিজেই খতিয়ে দেখছে। শুধুমাত্র লালনের স্ত্রীর দাবির প্রেক্ষিতে সিবিআই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হল। বারবার সিবিআইয়ের সম্মানহানি করতে উঠে পড়ে লেগেছে রাজ্য।”

কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী আরও জানান, ১০ জন ডিআইজি এবং ২০ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অফিসার তদন্ত করছে। তাঁদের হয়তো চেনেন না। কিন্তু যাঁরা নির্দিষ্ট একটি তদন্ত করছে। সেই সব অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে।

তিনি আদালতে উল্লেখ করেন, মৃত্যুর আগে লালনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানানো হয়েছে, তিনি মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।

কেন্দ্রের তরফে সওয়াল, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে রাজ্য পুলিশ ব্যর্থ। গরু পাচার কত বড় দুর্নীতি তার তদন্ত চলছে। সিবিআই একটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকারী সংস্থা। এখন সিবিআই অফিসারদের সেই কাজে বাধা দেওয়ার কাজ চলছে।

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মহেশকুমার মিত্তলের নেতৃত্বে একটি কমিটি এই ঘটনাটি হাতে নিয়েছে। এদিনের গোটা বিষয়টি শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।