আপডেট: কথা বললে বুঝতে পারছেন, নাড়ছেন হাত-পা, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক বুদ্ধদেবের

নলের মাধ্যমে বুদ্ধবাবুকে খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে। সে খাবারও তিনি খেয়েছেন। তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি। উল্লেখ্য, ভেন্টিলেটর থেকে বার করার প্রথম ধাপ হল ঘুমের ওষুধ বন্ধ করা। আজ সকালে তা করা হয়েছে

আপডেট: কথা বললে বুঝতে পারছেন, নাড়ছেন হাত-পা, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক বুদ্ধদেবের
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Dec 11, 2020 | 12:07 PM

কলকাতা: বৃহস্পতিবার চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ অর্থাৎ শুক্রবার আরও এক ধাপ শারীরিক অবস্থার উন্নতি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সকালে চিকিৎসকদের ডাকে চোখ খোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। ভেন্টিলেটর থেকে বার করার জন্য তাঁকে যে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল, তা বন্ধ করা হয়েছে। তবে, এখনও যে তিনি বিপন্মুক্ত নন, সে কথা হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। রাতে নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। অক্সিজেনের মাত্রাও ঠিক রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এ দিন সিসিইউ চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা বলেন, “পরবর্তী ধাপে কৃত্রিম উপায়ে নলের মাধ্যমে যে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানো হচ্ছিল তা থেকে রোগীকে বার করা হবে। সচল হয়েছে রোগীর স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া। রোগী সাড়াও দিচ্ছেন ভাল। কথা বললে সবটাই বুঝতে পারছেন, হাত-পা নাড়ছেন। গ্লাসগো কোমা স্কেল অনুযায়ী বুদ্ধবাবুর সচেতনতার মাত্রা ১০ এর উপরে রয়েছে, যা যথেষ্ট ভাল। এটা উনি ধরে রাখতে পারলে ওঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিয়ে আমরা আশাবাদী।”

চিকিৎসকদের মতে, এই পর্বে প্রথম ছ’ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ২৪ ঘণ্টা পেরোলে আশ্বস্ত হওয়া যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। চিকিৎসায় সাড়া দিলেও এখন‌ই বিপন্মুক্ত বলা ঠিক হবে না বলে জানান তাঁরা।

নলের মাধ্যমে বুদ্ধবাবুকে খাওয়ানোর চেষ্টা চলছে। সে খাবারও তিনি খেয়েছেন। তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি। উল্লেখ্য, ভেন্টিলেটর থেকে বার করার প্রথম ধাপ হল ঘুমের ওষুধ বন্ধ করা। আজ সকালে তা করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে ভেন্টিলেটরের মাত্রা কমিয়ে দেখা হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন কিনা!

শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে হাসপাতাল সূত্রে:

* ভেন্টিলেশনেই আছেন। এখনও অবস্থা সঙ্কটজনক। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৬ শতাংশ। রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, প্রস্রাবের পরিমাণ ভাল। * রক্তের রিপোর্ট ভাল। হিমোগ্লোবিন ৯.৭% (থাকার কথা ১৩+), শ্বেতকণিকার সংখ্যা ৮১০০ (থাকার কথা ৪০০০-১১০০০), ইউরিয়া-৪০ (থাকার কথা ৫০ এর নীচে), ক্রিয়েটিনিন-১.১১ (থাকার কথা ১ এর নীচে), সোডিয়াম-১৩৪ ( থাকার কথা ১৩০-১৪৫), পটাশিয়াম ৪.৩ (থাকার কথা ৩.৫-৪.৫), সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (এক ধরনের প্রদাহ সূচক)-৯.২ (থাকার কথা ১০ এর নীচে)। * এবিজি বা ব্লাড গ্যাস অ্যানালিসিস রিপোর্টও সন্তোষজনক। গত দুপুর ১টার রিপোর্ট অনুযায়ী *রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের (পিসিও২) মাত্রা ৫১ (থাকার কথা ৩৮-৪২)। রক্তে অক্সিজেনের (পিও২) মাত্রা ৭১ (থাকার কথা ৭৫-১০০)। * দেওয়া হচ্ছে অ্য়ান্টিবায়োটিক্স স্টেরয়ডস। * উনি মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে থাকবেন। ধীরে ধীরে ভেন্টিলেটর থেকে বের করার পরিকল্পনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলের বুলেটিনে উডল্যান্ডস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন তিনি। বুদ্ধবাবুর ফুসফুস স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করলে পরিস্থিতির আরও দ্রুত উন্নতি হবে। ভেন্টিলেটর থেকে তাঁকে বাইপ্যাপে ফেরানো যাবে। শুক্রবারই পরীক্ষামূলকভাবে বিষয়টি দেখার পরিকল্পনা রয়েছে চিকিৎসকদের। সকালেই ঘুমের ওষুধের মাত্রা কমানো হতে পারে, ভেন্টিলেটর মোডও কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবারই বাড়ানো হয় বুদ্ধবাবুর চিকিৎসার জন্য তৈরি হওয়া মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য সংখ্যা। আগে পাঁচজন চিকিৎসক ছিলেন। এদিন আরও দু’জন সেখানে যুক্ত হলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাঁদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ বুদ্ধবাবুকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করে আনা। যেহেতু তিনি একজন সিওপিডির রোগী, তাই কাজটা যে খুব একটা সহজ হবে না তাও মানছেন চিকিৎসকরা।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে বুধবারই উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। বৃহস্পতিবার সকালে বসে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক। কার্ডিওলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, পালমনোলজিস্ট অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট সৌতিক পাণ্ডা, অ্যানাস্থেটিস্ট আশীষ পাত্র, ফিজিশিয়ন কৌশিক চক্রবর্তী ছিলেন বৈঠকে। বুধবার থেকে এই পাঁচ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন চিফ অপারেটিং অফিসার চিকিৎসক মালতী পুরকাইত, চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু, ডিরেক্টর নার্সিং আলো সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, ফুয়াদ হালিম।