Mamata-IPAC : মমতাকে টুইটারে ফলো করতে শুরু করল আইপ্যাক! বিতর্ক ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা? উঠছে প্রশ্ন
Mamata - Prashant Kishor: টুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলো করেছে না আইপ্যাক। শুধু আইপ্যাকই নয় ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ফলোয়ার তালিকাতেও নেই তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলো করছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা।
কলকাতা : তৃণমূল ( Trinamool Congress) এবং আইপ্যাকের (IPAC) মধ্যে সম্পর্কে ফাটল না ধরলেও একটি চিড় যে ধরেছে, এমন জল্পনা শুরু হয়েছে বিগত কয়েকদিন ধরে। এবার সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিল টুইটার ‘বিচ্ছেদ’। টুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলো করছিল না আইপ্যাক। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূল – আইপ্যাক দূরত্বের জল্পনাকে নতুন করে উস্কে দেয় মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) ফলো করছে ভোট কুশলী সংস্থা। কিছুদিন ধরেই তৃণমূল এবং আইপ্যাকের সম্পর্ক ঘিরে এক তুমুল জল্পনা তৈরি হয়েছে। শহরের রাজনীতির অলিন্দে এমনটাও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, পিকের সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছেদের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। পরে অবশ্য সেই বিতর্কে ধাপাচাপা দিতে মমতাকে ফলো করতে শুরু করে আইপ্য়াক।
এই পরিস্থিতিতে আইপ্যাকের তরফে এ ধরনের একটি পদক্ষেপ অর্থাৎ, মমতাকে ফলো না করা অথচ তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেককে ফলো করা ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনীতির কারবারিদের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এবার কি তাহলে আইপ্যাক – তৃণমূল সম্পর্কে ইতি পড়তে চলেছে?
যদিও ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাকের তরফে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্র মারফত এমনটাও জানা গিয়েছে এতদিন ধরে আইপ্যাক যে গতি নিয়ে তৃণমূলের বিভিন্ন কাজ যে গতি নিয়ে করে আসছিল, বিগত কয়েকদিনে সেই গতি কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। এই সবের মধ্যেই আইপ্যাকের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলো করা হলেও, দলের সুপ্রিমো মমতাকে সেই তালিকায় না রাখায় বিগত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা জল্পনায় নতুন করে ঘৃতাহুতি পড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
যদিও এই বিতর্কের মুখে পড়ে টুইটারে মমতাকে ফের ফলো করতে শুরু করে আইপ্যাক। শুক্রবার সকালেও আইপ্যাকের তরফে ৭৬ জনকে ফলো করা হচ্ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৭। বিতর্ক সৃষ্টি হতেই কি তাহলে নতুন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলো করছে টুইটারে? সেই প্রশ্নও কিন্তু রাজনৈতিক মহলে উঠতে শুরু করেছে। যদিও আইপ্যাক সূত্রে খবর, তারা এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলো করতেন না। ফলে আনফলো করার বিষয়টিও আসে না। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, সমস্ত বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতেই আইপ্যাকের তরফে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের অন্দরমহলেও একাংশ আইপ্যাককে ঘিরে এই অস্বস্তি নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছে। বর্তমানের এই অস্থির পরিস্থিতির থেকে আগামী দিনে আইপ্যাক এবং তৃণমূলের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে এগিয়ে যাবে নাকি ফের আগের মতো সুসম্পর্ক ফিরবে, তা নিয়ে তাঁরাও এখনও পর্যন্ত কিছু বলতে পারছেন না।
এই বিষয় নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “তৃণমূলের মধ্যে কে কোন দিকে আছেন, কার সঙ্গে কার কী সম্পর্ক, কে কাকে ফলো করছেন – এতে মানুষের কিছু আসে যায় না। আমাদেরও কোনও আগ্রহ নেই। তৃণমূলের মধ্যে আমরা-ওরা যে প্রবণতা বাড়ছে, সেটা না বোঝারও কোনও কারণ নেই। আমরা সবাই সেটা বুঝতে পারছি। তৃণমূল একটি দল ছিল, সেখান থেকে এখন পিসি, ভাইপো, পিকে, আইপ্যাক সব মিলিয়ে একটি কোম্পানি হয়ে গিয়েছে। কোম্পানির শেয়ার হোল্ডিংয়ের গণ্ডগোল। কে কাকে ফলো করবেন, কে কাকে করবেন না – তাঁদের ব্যাপার। ভাইপোর অনুমোদন নিয়ে কেউ একটি কথা বলছেন তো দলনেত্রীর অনুমোদন নিয়ে অন্যজন অন্য কথা বলছেন। তাতে মানুষের কী এল গেল!”
সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সবথেকে বড় ফলোয়ার ছিলেন মুকুল রায়। মুকুল রায় আনফলো হয়ে গেলেন, মানে আলাদা হয়ে গেলেন। মুকুল রায় তির্যক কথা বললেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন, বিজেপি নেতা হলেন। সেই মুকুল রায় আবার কিন্তু তৃণমূল হয়ে গেলেন। এখানে আমরা ওরার লড়াই চলছে।”
এই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা ঋজু ঘোষাল বলেন, “আইপ্যাকের সমস্যার কথা যখন প্রথম প্রকাশ্যে আসে – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ‘পাওয়ার স্ট্রাগল’ চলছে, তা যখন প্রথম প্রকাশ্যে আসে – তখন তাদের দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, যে এনেছে আইপ্যাককে, সে বুঝবে। ফলে দল তখনই আইপ্যাক এবং আইপ্যাকের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে সম্পর্ক তা থেকে দূরত্ব তৈরি করার একটা প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। মুশকিল হল, তৃণমূলের অভ্যন্তরে মমতা ও অভিষেকের লড়াই বিচারধারা বা আদর্শের নয়, ওটা হল পাওয়ার স্ট্রাগলে জলের উপরে কে কতটা থাকবে, সেই নিয়ে লড়াই।”
বিষয়টি নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “উনিই তো এর আগে রাজ্যপালকে আনফলো করেছিলেন। এবার পিকে। যিনি ডেকে নিয়ে এসেছিলেন টাকা দিয়ে, এখন তো খাল কেটে কুমির নিয়ে এসেছিলেন – এমন মনে হচ্ছে। সেই পিকে এখন আর তাঁর সঙ্গে নেই, ভাইপোর সঙ্গে আছেন। তাই ভাইপো এখন কীভাবে পার্টি দখল করবে, তার প্ল্যান করছে। তাই দুটি তালিকা এসেছে। এই লড়াইটা চলবে, যতক্ষণ না পার্টি পুরোপুরি এক তরফা হয়ে যাচ্ছে।”
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা