রাজ্যপালের ভাষণ ছাড়াই আজ বাজেট পড়বেন মমতা

মমতার বাজেট পড়া নিয়ে ইতিমধ্যেই কটাক্ষের সুর বিরোধীদের গলায়।

রাজ্যপালের ভাষণ ছাড়াই আজ বাজেট পড়বেন মমতা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Feb 05, 2021 | 2:09 PM

কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুক্রবার ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেট পেশ হতে চলেছে বাংলায়। একইসঙ্গে এবারের বাজেটে জোড়া ছকভাঙা ছবি দেখবে রাজ্য। বাজেট বক্তৃতা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, অসুস্থতার জন্য বিধানসভায় আসতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

অন্যদিকে রাজ্যপালের ভাষণ ছাড়াই এবার বাজেট অধিবেশন হচ্ছে। যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। একইসঙ্গে তাদের অভিযোগ, গত ১০ বছরে বিরোধীদের কোনও বক্তব্য শোনা হয়নি। প্রতি মুহূর্তে সমস্ত অভিযোগ খর্ব করা হয়েছে। সে কারণে তারা এবারের বাজেট বয়কটেরও ডাক দিয়েছে। অর্থাৎ এবার বাজেট পর্বে বিরোধী বলতে উপস্থিত থাকবেন শুধু বিজেপির বিধায়করা।

যদিও রাজ্যপালের বাজেট বক্তব্য না রাখাকে সংবিধান-সঙ্গত বলেই দাবি তৃণমূলের। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্য বিধানসভার কার্যপ্রণালী মেনে নতুন করে বাজেট পেশ করা হলে সেক্ষেত্রে এই নিয়ম চলে। রাজ্যপাল আমাদের শ্রদ্ধেয়। অধ্যক্ষ তাঁকে লিখিতভাবে আইনগত দিক ব্যাখ্যা করেছেন। তারপরও কেন এই বিতর্ক হচ্ছে বুঝতে পারছি না।”

বিধানসভা ভোটের আগে এই ভোট অন অ্যাকাউন্টে নজর সকলের। আগেই অনলাইনে ক্লাস করতে ট্যাবের টাকা দেওয়া, সমব্যথী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজ সাথী, রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সূত্রের খবর, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ বাজেটে এই ধরনের আরও জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতর সম্পর্কিত কোনও প্রকল্প থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল।

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের শরীর ভাল নেই। তাই তিনি বাজেট পড়তে পারবেন না। সূত্রের খবর, সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজেট পড়তে পারেন। অমিতবাবু তাঁর বাড়ি থেকে জুম বা গুগল মিটের মাধ্যমে বাজেটে অংশ নেবেন বলে খবর। তার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। আর এসব কারণে সংবাদমাধ্যমের জন্য আলাদা করে বড় স্ক্রিনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা ভোটের আগে শেষ বাজেট পড়তে চলেছেন।

আরও পড়ুন: বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনে গ্রেফতার ‘শার্প শুটার’ অনীশ

মমতার বাজেট পড়া নিয়ে ইতিমধ্যেই কটাক্ষের সুর বিরোধীদের গলায়। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, “অন্য কোনও মন্ত্রী পড়লে তিনি কি এমন কিছু বলে দেবেন যাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে সরকারকে। তাই কি এমন সিদ্ধান্ত।” আবার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, “শুনলাম অর্থমন্ত্রী অসুস্থতার জন্য বাজেট পড়বেন না। অথচ কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বাজেট পড়ে কল্পতরু হবেন বলেই কি সবটা নিজে পড়বেন।” রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, ভোটমুখী বাজেটে প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করলে তার প্রভাব আমজনতার উপর অনেক বেশি পড়বে। সে কারণেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত।

এবার মুখ্যমন্ত্রী যাতে বাজেট পড়তে পারেন, তার জন্য রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। রাজ্যপাল তাতে সম্মতিও দেন। যদিও এক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়াই বিষয়টি মান্যতা পেতে পারত। কারণ, কে বাজেট পড়বেন, তা বিধানসভার অধ্যক্ষের এক্তিয়ারভুক্ত। তাঁর অনুমোদনই যথেষ্ট।

মূলত পূর্ণাঙ্গ বাজেটে সরকার তার সারা বছরের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। কিন্তু এবার ভোট অন অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ আগামী তিন মাসের খরচের অনুমোদন উঠে আসবে শুক্রবারের বাজেটে। কেন আগামী তিন মাস? কারণ, এরইমধ্যে বিধানসভা ভোট হতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কোনও খাতে কতটা অনুমোদন হবে।

শুক্রবার বিকেলে চারটেয় বাজেট বক্তৃতা হওয়ার কথা। তার আগে বিজনেস অ্যাডভাইজারি কমিটির বৈঠক রয়েছে। বেলা ৩টেয় রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। শনিবার বাজেটের উপর আলোচনা হতে পারে। সোমবার অ্যাপ্রোপিয়েশন বিল পাশ হওয়ার কথা। সেখানে অবশ্য বাম ও কংগ্রেস থাকবে বলে খবর।