Na Bollei Noy: বিরোধী দল ‘মুড’ নির্ভর হলে, মানুষের ভরসা থাকবে তো? যে কথা ‘না বললেই নয়’

পরিষদীয় রাজনীতিতে মুড একটা বিষয়। কাল বিধায়কদের যা মুড ছিল, আজ তা না-ও থাকতে পারে।

Na Bollei Noy: বিরোধী দল ‘মুড’ নির্ভর হলে, মানুষের ভরসা থাকবে তো? যে কথা ‘না বললেই নয়’
না বললেই নয়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 16, 2022 | 4:34 PM

কলকাতা: সরকারি চাকরি চুরি হয়েছে। সে জন্যই তো, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে SSC-র প্রাক্তন আধিকারিক বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। তারপরেও কি সতর্ক হননি মন্ত্রী-সান্ত্রী-আমলারা? বিরোধীদের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে মনে হচ্ছে ফের বিড়ম্বনায় পড়তে পারে শাসক। কী অভিযোগ, করছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি? তাদের দাবি, এই যে প্রথমে কলকাতা এবং পরে খড়গপুর থেকে কারিগরি শিক্ষায় উত্তীর্ণদের বেসরকারি চাকরি বিলি করা হল, সেই সব চাকরি না কি ভুয়ো!

এইসব কথা শুনে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারেন। ভাবতে পারেন, শুধু শিক্ষা দফতর নয়, কারিগরি শিক্ষা দফতরও হয়তো আগামী দিনে তদন্তকারীদের স্ক্যানারে আসতে পারে। বিপদে পড়লে তো মানুষ বন্ধু খোঁজে। পার্থবাবুও হয়তো মনে মনে তাই চাইছেন। সেজন্যই হয়তো আজ আদালতে বলেছেন, তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ঠিকই। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাহলে নিয়ন্ত্রণ কার হাতে ছিল? শিক্ষামন্ত্রীর থেকেও বড় আর কে আছেন, যিনি শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন? তদন্তকারীরা কি তাঁকে খুঁজে বের করতে পারবেন? CBI তো আজ আদালতে বলেছে, এসএসসি দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই মাস্টারমাইন্ড।

পার্থবাবুর কপাল, তৃণমূল বলে দিয়েছে, একজন চুরি করলে, গোটা দল তার দায় নেবে না। আবার তদন্তকারীরাও বলছে, যত দোষ নন্দ ঘোষ, থুড়ি যতো দোষ সব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের। পার্থবাবু আর কী করেন! আদালতের নির্দেশ জেল থেকে আজ আবার তাঁকে সিবিআই হেফাজতে যেতে হয়েছে। এর আগে ইডি-র জেরা সামলেছেন, এবার জেরা করবে সিবিআই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিশ্চয়ই মানিয়ে নিতে পারবেন। TV9 বাংলার স্টুডিওতে, আমার সঙ্গে কথাবার্তা অনুষ্ঠানে অনেক দিন আগেই তো তিনি বলছিলেন, তিনি তালগাছের মতো একা। তালগাছের মতো একা থাকা যখন তাঁর অভ্যেস তখন, কী বা জেল, কীই বা সিবিআই হেফাজত! পার্থবাবু নিশ্চয়ই একটু মানিয়ে নেবেন।

ঠিক যেমন, এতো গুলো দিন মানিয়ে নিচ্ছেন এসএসসি বা প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। চারদিকে যখন পুজো পুজো গন্ধ, তখনও তাঁদের বসে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। ওদিকে, পুজোর আগে চাকরি পাচ্ছেন ভেবে, পলিটেকনিক পাশ যেসব ছেলেমেয়ে খুশি হয়েছিলেন, বিরোধীদের অভিযোগ তাঁরা যদি সত্যিই ভুয়ো কাগজপত্র পান। তাঁদেরও তো সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে মানিয়ে নিতে হবে। এই অ্যাডজাস্টমেন্টটাই তো সাধারণ মানুষ চিরকাল করে করে অভ্য়স্ত।

পরিষদীয় রাজনীতিতে মুড একটা বিষয়। কাল বিধায়কদের যা মুড ছিল, আজ তা না-ও থাকতে পারে। বিধানসভায় আজ একথা বলেছেন বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ শর্মা। হয়েছেটা কী একটু বুঝিয়ে বলি। নবান্ন অভিযানে, তাঁদের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশি অত্যাচার হয়েছে, মিছিল শুরুর আগেই অন্যায়ভাবে বিরোধী দলনেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযোগে বিজেপির পরিষদীয় দল আজ শুধুমাত্র প্রস্তাব পাঠ করেই রণে ভঙ্গ দিয়েছে। বিধানসভায় প্রস্তাব পাঠের পর, তা নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হওয়ার কথা নিয়মমতো। কিন্তু, আলোচনার দাবি করেইনি বিজেপি? কেন? ওই বিজেপি বিধায়ক বলেছেন তাঁদের আজ আর আলোচনার মুড ছিল না। মুড না থাকলে কী আর নেতাদের কিছু করতে ইচ্ছে করে? অথচ নবান্ন অভিযানে পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে আজই বিজেপির যুব মোর্চা খেলনা বন্দুক হাতে লালবাজার অভিযানে নেমেছিল। একেবারে রাস্তায় শুয়ে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ওই যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, গত পরশু বলেছিলেন না, তিনি আক্রান্ত পুলিশকর্তার জায়গায় থাকলে মাথায় গুলি করতেন! সেই থেকে তো বিজেপি পাল্টা গোলাগুলি চালু রেখেছে। মুখে মুখে কত গরমগরম কথা যে বিজেপির নেতারা বলছেন, তার ইয়ত্তা নেই। অথচ, বিধানসভায় যেখানে শাসক পক্ষের সামনে তর্ক করার সুযোগ সেখানেই কথা বলতে মুড নেই বিজেপি বিধায়কদের। রাস্তায় লম্ফঝম্প করার থেকে আইনসভায় আলোচনায় অংশ নিলে সরকারপক্ষকে কি একটু বেশি চাপে রাখা যেত না? সূত্রের খবর, আজ বিধানসভায় হাতে গোনা বিজেপি বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। লোকবল কম ছিল, তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে গলার জোরে এঁটে উঠতে পারবেন না বুঝেই কি বিষ্ণুপদ শর্মাদের মুড অফ হয়ে গিয়েছিল?

রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল যদি এমন মুডের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে, তাহলে তাঁদের কী করে ভরসা করবেন মানুষ? না কি নেতারা দলমত নির্বিশেষে বুঝে গেছেন, মানুষ আর তাঁদের ভরসা-টরসা করেন না? ভোটের সময় ভোট দিতে হয় বলে দেন? এসব নিয়েই আজ কথা বলব। যে কথাগুলো না বললেই নয়।

টিভি নাইন বাংলায়, না বললেই নয়, দেখবেন। রাত ৮.৫৭ থেকে।