Mamata Banerjee: ‘দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে’ পথপ্রদর্শক বাংলাই, তৃণমূল মুখপত্রের উৎসব সংখ্যাতেও ‘কোণ ঠাসা’ কংগ্রেস
Leader Mamata Banerjee: গত কয়েকদিনে একাধিক বার তৃণমূলের মুখপত্রে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি ঘাসফুলই, কংগ্রেস নয়।
কলকাতা: পা বাংলাতে হলেও একুশের বিধানসভা ভোটে ‘ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রি’র পর এখন তৃণমূলের পাখির চোখ দিল্লি। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমেও এবার উঠে এল সে কথাই। মহালয়ায় প্রকাশি হয়েছে তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলার উৎসব সংখ্যা। সেখানে দলের দুই শীর্ষ নেতার লেখায় উঠে এসেছে ‘দিল্লি চলো’র আহ্বানই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন ‘দিল্লির ডাক’ শিরোনামে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘দেশ বাঁচানোর লড়াই, পথ দেখাবে বাংলা’।
‘দিল্লির ডাক’ প্রতিবেদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ান, দিল্লির দরবারে বিকল্প জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তৃণমূল ভাবছে না। কিন্তু কংগ্রেসকে বাস্তবটা অনুভব করতে হবে। সে লেখাতেই উঠে এসেছে, সময়ের যাত্রা পথে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠেছে তৃণমূলই। গোটা দেশেই সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে ‘দেশ বাঁচানোর লড়াই, পথ দেখাবে বাংলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, বাংলাই দিল্লি লড়াইয়ে পথ প্রদর্শক।
এতদিন জাগো বাংলার বিভিন্ন প্রবন্ধে নিয়মিত ভাবে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছিল। এবার তৃণমূল নেত্রীর লেখাতেও সেই এক সুর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূলের মুখপত্রের শারদ সংখ্যায় ঘাসফুল ও হাতের তরজা এক নয়া মাত্রা পেয়েছে। বুধবারই আবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, তৃণমূলকে উত্তর প্রদেশের লখিমপুর যেতে দেওয়া হলেও তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে আবার পাল্টা ফোঁস করে তৃণমূলও।
বুধবারই সাংবাদিক সম্মেলন করে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, “লখিমপুরে শুধু আমাদের আটকানো হচ্ছে। বাকি দলগুলিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ভুলটা কী? দু’টো রাজনৈতিক দল তো গেল। তৃণমূল ও ভীম আর্মিকে যেতে দেওয়া হল।” এদিকে এদিনই আবার জাগো বাংলার উৎসব সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লখিমপুরে যাঁরা মারা গিয়েছেন খুব অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস একমাত্র দল, যাদের নেতারা নিহতদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছতে পেরেছে। অন্য কেউ পারেনি। কারণ, আমাদের দলের প্রতিনিধিরা ১২ ঘণ্টা ধরে এ পথ ও পথ করে লুকিয়ে লুকিয়ে পৌঁছয়। দোলা বলছে, ও পঞ্জাবী সেজেছিল। এ ভাবে গিয়েছে। তবে ওরা যে গিয়ে পৌঁছতে পেরেছে এটা কিন্তু বড় ব্যাপার।”
অর্থাৎ লখিমপুরে যেতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বা রাহুল গান্ধীরা যখন উত্তর প্রদেশ পুলিশের বাধার কাছে নতি শিকার করতে বাধ্য হয়েছে, সে সময় বাংলার দল তৃণমূল সফল ভাবে বুদ্ধি ও কৌশল খাটিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে — বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কয়েকদিন ধরে একাধিক বার তৃণমূলের মুখপত্রে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি ঘাসফুলই, কংগ্রেস নয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর জাগো বাংলার সংখ্যায় লেখা হয়েছিল, ‘কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আমরা কখনওই বিজেপি বিরোধী বিকল্প বলছি না। কিন্তু রাহুল গান্ধী এখনও নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে পারেননি। দেশের বিকল্প মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা বিকল্প হিসাবে জননেত্রীর মুখ সামনে রেখেই গোটা দেশে প্রচার শুরু করব।’
তৃণমূলের এই অবস্থান নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া ছিল, এ ভাবে তৃণমূল মুখপত্রে যা লিখছে তাতে জোট সম্পর্কে বিজেপির কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। যদিও তৃণমূলের অবস্থান খুবই স্পষ্ট, ‘২০১৪ সাল, ২০১৯ সাল বার বার সুযোগ পেয়েও রাহুল গান্ধী এখনও সেই জায়গাটা প্রমাণ করতে পারেননি। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলে একটা আলাদা ছাপ তৈরি করেছেন।’ একুশের ফল এবং ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মমতার জয়কে সামনে রেখেই দিল্লিতে শক্তি বাড়াতে চাইছে তৃণমূল।