শীতলকুচির প্রশ্নে মোদী-শাহের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে দিলীপ-সায়ন্তনরা?
বিজেপি সূত্রে খবর, গোটা বিষয়টির উপরেই কড়া নজর রাখা হয়েছে। তবে এখনও কোনও পদক্ষেপ করার কথা ভাবা হয়নি দীন দয়াল উপধ্যায় মার্গ থেকে।
কলকাতা: চতুর্থ দফার ভোট শেষ হওয়ার পর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল একটিই নাম। শীতলকুচি। কোচবিহারের শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে চতুর্থ দফার ভোটের দিন আত্মরক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারান চারজন ভোটার। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর উঠেছে চরমে। কেননা, একদিকে যখন তৃণমূলের পক্ষ থেকে একে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে, ঠিক সেই সময় মুরলীধর সেন লেনের কয়েকজন নেতা এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বরাবর বিষয়টি নিয়ে সংযত মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু, বঙ্গ বিজেপি নেতাদের ‘বেফাঁস’ মন্তব্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দিচ্ছে না।
শীতলকুচি ঘটনার পর থেকেই গলার সুর তুঙ্গে উঠেছে গেরুয়া শিবিরের। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা যায়, “এরপর যদি কেউ বাড়াবাড়ি করে তবে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচির মতো ঘটনা ঘটবে।” রাজ্য বিজেপির আরেক নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, “পরবর্তী চার দফা নির্বাচনে আরও ১৬ টি শীতলকুচি হবে।” একধাপ উপরে উঠে রাহুল সিনহা বলেছেন, “চারজনকে গুলি না মেরে আটজনকে মারা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর।”
একের পর এক এহেন অকাঙ্খিত মন্তব্যের জেরে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন এই তিন নেতা। রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব কেন রাজ্য নেতাদের এই বাচনভঙ্গির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না? বিজেপি সূত্রে খবর, গোটা বিষয়টির উপরেই কড়া নজর রাখা হয়েছে। তবে এখনও কোনও পদক্ষেপ করার কথা ভাবা হয়নি দীন দয়াল উপধ্যায় মার্গ থেকে।
এখানেই উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শীতলকুচি নিয়ে মন্তব্য রাখার সময় বরাবর সংযমী এবং নিয়ন্ত্রিত ভাষার পরিচয় দিয়েছেন। দু’জনেই এই ঘটনার নেপথ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উস্কানিকে’ দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে দুঃখপ্রকাশও করেছেন। পাশাপাশি মোদী প্রশ্ন তুলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন শান্তিপূর্ণ ভোটের আহ্বান জানাচ্ছেন না? কেনই বা তিনি হিংসার প্রতিবাদ বা নিন্দা করছেন না?”
একই সুর ধরা পড়েছে অমিত শাহের গলাতেও। তিনি বলেছেন, “শীতলকুচির ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যেভাবে এই ঘটনার রাজনীতিকরণ হচ্ছে তা আরও দুঃখজনক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্ররোচনা দিয়ে গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।” এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন অমিত শাহ।
আরও পড়ুন: কলকাতাতেও কার্পেট বম্বিং বিজেপির, শহরজুড়ে ৬ হাজারের বেশি সভা করবেন শাহ
ঠিক এখানেই প্রথম সারির বঙ্গ বিজেপি নেতাদের একাংশের মন্তব্য কিছুটা হতবাক করেছে রাজনৈতিক মহলকে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বারংবার ঘটনার নিন্দা করে রাজনৈতিকভাবে শাসকদলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন, তখন এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে বলে বা আরও বেশি মানুষকে গুলি মারা উচিত ছিল বলে বঙ্গ বিজেপি নেতারা কি কেন্দ্রীয় নেতাদেরকেই বেকায়দায় ফেলছেন না? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আরও বড় যে প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিচ্ছে তা হল, একই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্যের মধ্যে এতটা ফারাক কেন? যেখানে ভোট দিতে গিয়ে চারজন ভোটার প্রাণ হারিয়েছেন, সেখানে বঙ্গ বিজেপির এই তিন নেতার কাছে থেকে কি আরেকটু সংবেদনশীলতা আশা করতে পারেন না সাধারণ মানুষ?
আরও পড়ুন: তৃণমূলের গুন্ডাদের পাতাল থেকে খুঁজে এনে জেলে ভরব, শাহি হুঙ্কার হেমতাবাদে