গোত্তা খাচ্ছে বুলটিদের স্বপ্নের উড়ান! ‘ঝুপড়ি ঘরে অনলাইন ক্লাস অত সোজা না’

বুলটি একা নয়, দুই ভাইয়েরও পড়াশোনা বন্ধ। অনলাইন ক্লাসের (Online Class) কথা বলতেই মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিন সন্তানের মা পার্বতী সর্দার।

গোত্তা খাচ্ছে বুলটিদের স্বপ্নের উড়ান! 'ঝুপড়ি ঘরে অনলাইন ক্লাস অত সোজা না'
নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Jun 18, 2021 | 12:24 AM

কলকাতা: কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন। অনেক মতামত। কিন্তু কোভিডে শিক্ষাক্ষেত্রের ক্ষতি কি শুধুই ক্লাসরুমে হয়েছে? না! দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া অনেক সময়ই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যাদের অনলাইনে লেখাপড়া করার সুযোগ নেই, নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, এই কার্যত তালাবন্দি পরিস্থিতিতে তারা কী ভাবে তৈরি করবে স্বপ্নের ভবিষ্যৎ! সল্টলেকের এক বাড়িতে তিন পড়ুয়ার বাস। করোনার ধাক্কায় বন্ধ তিনজনেরই লেখাপড়া।

অভাব অনটনের মধ্যেই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে সল্টলেকের ঝুপড়ির সর্দার পরিবারের তিন ছেলে মেয়ে। কিন্তু কোভিড সেই স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দিচ্ছে। স্বপ্নের উড়ান গোত্তা খেয়ে রানওয়েতেই। বুলটি সর্দার, রাজু সর্দার, শম্ভু সর্দার। একজন ক্লাস নাইনের পড়ুয়া, বাকি দু’জন ক্লাস ফাইভ ও সিক্স। বুলটির আগামী বছর মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ায় পড়াশোনাও বন্ধ।

ঘরে থাকলে পড়াশোনা এমনিতেও করা হয় না। ঘরের নানা কাজ। রান্না থেকে মায়ের হাতে হাতে সংসারের সবটাই করতে হয়। আর অনলাইনে ক্লাস করা এই পরিবারের ছেলে মেয়ের কাছে বিলাসিতা। তার থেকে বরং বইখাতা কুলুঙ্গিতেই ভাল থাকে। বুলটি এখন ঘরকন্যাই সামলায়। বুলটির কথায়, “এই বছর টেনে উঠতাম। তা পরীক্ষা দিইনি, তাই নাইনেই রয়েছি। করোনার জন্য তো স্কুলে যাওয়াও বন্ধ। এমনি দিদিমণি ফোনে ক্লাস করাত। কিন্তু মায়ের ফোন তো ঘরে থাকে না। সারাদিন কাজে থাকত। ওই জন্য আর পড়াশোনা করা হল না।”

বুলটি একা নয়, দুই ভাইয়েরও পড়াশোনা বন্ধ। অনলাইন ক্লাসের কথা বলতেই মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিন সন্তানের মা পার্বতী সর্দার। পার্বতীর স্পষ্ট কথা, “ওদের পড়াতে চাই। কিন্তু আমি তো কাজ করি দিনভর। স্বামী নেশা করে। ভেবেছিলাম বাচ্চাগুলো লেখাপড়া করবে। ভাল থাকবে। লকডাউনের জন্য বাচ্চাগুলো ঘোরে, খেলে বেড়ায়।” প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার লড়াই। সেই লড়াই আরও কঠিন করে তুলেছে এই করোনা। একটাই মোবাইল, তা পার্বতীর কাছে থাকে। এদিক ওদিক সারাদিন কাজের জন্য ঘোরেন। জানালেন, “অনলাইনে আমার পক্ষে পড়ানো সম্ভব ছিল না। তাই পড়াইনি।”

আরও পড়ুন: গঙ্গায় ভেসে এল তিন তিনটি কঙ্কালসার দেহ! আতঙ্ক-উদ্বেগে সামশেরগঞ্জের মানুষ

দু’ চোখে স্বপ্ন তো দেখাই যায়। পার্বতী প্রতি মুহূর্ত লড়াই করেও সেই স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিলেন তিন সন্তানের চোখে। কিন্তু অতিমারির অভিশাপ সে স্বপ্নালু চোখে আপাতত অনিশ্চয়তার কালো রেখা টেনে দিয়েছে। তবু ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন সল্টলেকের পার্বতী, স্বপ্ন দেখছে গোটা ভারতবর্ষের পার্বতী।