Bangladeshi: বাংলাদেশির কত রূপ: ভারতে বিয়ে, ধোঁকা, পরকীয়া, ভুয়ো ভোটার কার্ড…
Bangladeshi: দুই দেশের সীমানা ভাগ করেছে তিস্তা নদীর প্রবাহিত জল। ফলে একটা সময় সেই পথ দিয়েই বাংলাদেশিরা সহজেই ভারতে প্রবেশ করতে পারত। এখন সেখানে প্রবেশে বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তা। কিন্তু কয়েক বছর পূর্বে সেই কড়াকড়ি না থাকায় অনেক বাংলাদেশি সেই পথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে দিব্যি বসবাস করছে বলে অভিযোগ।

মেখলিগঞ্জ: অবৈধভাবে ভারতে এসে বহাল তবিয়তে বসবাস বাংলাদেশি যুবকের। পরিচয় পাল্টে বানিয়েছে আধার ও ভোটার কার্ড। স্থানীয় এক বিশেষভাবে সক্ষম মহিলাকে বিয়ে করে চম্পটও দেয়। ওই বাংলাদেশি যুবকের নাম বাদশা আলম। মেখলিগঞ্জের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
মেখলিগঞ্জের কুচলিবাড়ি পঞ্চায়েত এলাকার নদীর ওপারের গ্রাম ফকতের চর। সেই চরেই ভারতীয় শেষ গ্রাম। ওপারে বাংলাদেশের ডিমলা থানা এলাকার কলনি গ্রাম। দুই দেশের সীমানা ভাগ করেছে তিস্তা নদীর প্রবাহিত জল। ফলে একটা সময় সেই পথ দিয়েই বাংলাদেশিরা সহজেই ভারতে প্রবেশ করতে পারত। এখন সেখানে প্রবেশে বিএসএফের কঠোর নিরাপত্তা। কিন্তু কয়েক বছর পূর্বে সেই কড়াকড়ি না থাকায় অনেক বাংলাদেশি সেই পথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে দিব্যি বসবাস করছে বলে অভিযোগ। এমন ভাবেই চর থেকে বাদশা আলম নামে ওই তরুণ এসে ঠাঁই নেয় ১০৮ ছোট কুচলিবাড়ি গ্রামে। বাপ-মা হারা পরিজনহীন বাদশা বাড়িতে বাড়িতে কাজ শুরু করে। কখনও এর বাড়িতে, আবার কখনও ওর বাড়িতে। নিজের বলতে কেউ না থাকায় এইভাবেই দিন গুজরান করত সে। মাঝে বেশ কয়েকটা দিন কেটে যেতেই সেই গ্রামেরই এক মূক ও বধির যুবতীকে নিয়ে চম্পট দেয় সেই যুবক।
কোথায় গেল? নির্দিষ্ট কোনও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় অনেক খোঁজখুঁজির পরও মেয়ের কোনও খোঁজ পায়নি যুবতীর বাবা আব্দুল হাবিব। কিন্তু তিন বছর পর এক সন্তান কোলে এবং এক সন্তান গর্ভে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসে ওই যুবতী। সঙ্গে বাদশা। শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিঃস্বার্থভাবে ছেলেটি বিয়ে করেছে ভেবে বুক জুড়ায় আব্দুলের। বাড়ির পাশেই একটি নতুন বাড়ি তৈরি করে দেয় মেয়ে-জামাইয়ের জন্য। সেখানেই সংসার জীবন শুরু করে বাদশা। অনুমানিক বছর দুয়েক আগে সেখানে থেকে একদিন আচমকাই তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ও ছোট মেয়েকে নিয়ে বেপাত্তা হয় সে। অপরিচিত এক ব্যক্তির দ্বারা ছোট মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিলেও ছেলের কোনও খোঁজ পায়নি শারীরিক প্রতিবন্ধী মা। মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে না পারলেও, এখনও ইশারায় ছেলেকে খোঁজার দাবি জানিয়ে কান্নায় চোখের জল ফেলে সন্তানহারা সেই মা।
এই খবরটিও পড়ুন




গত শনিবারে মেখলিগঞ্জ ব্লকের নিজতরফ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চোর সন্দেহে এক যুবককে গণপিটুনি দেয় গ্রামিবাসীরা। সেই যুবককে দেখেই তাকে সনাক্ত করতে পারে বাদশা আলমের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। কিন্তু লিখিত কোনও অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই যুবকের আসল পরিচয় সামনে আসে। বাদশা আলম যে বাংলাদেশি, তা স্বীকারও করে নিয়েছেন তার শাশুড়ি নার্গিস বিবি। তিনি জানান, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম যে সে ভারতীয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি যে সে বাংলাদেশি। এবং আমার নাতিকেও সে বাংলাদেশে রেখে এসেছে। আমরা আমার নাতিকে ফেরত চাই।”
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক ইতিমধ্যেই ভারতীয় পরিচয় পত্র (ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড) তৈরি করে ফেলেছে। পিতার পরিচয়ে উল্লেখ রয়েছে মহম্মদ আলাউদ্দিনের নাম। কে এই আলাউদ্দিন? জানা গেছে, আলাউদ্দিন সেই গ্রামেরেই বাসিন্দা। কয়েক বছর পূর্বে বাড়ি থেকে তাঁর ভোটার কার্ড হারিয়ে গিয়েছিল। এই নিয়ে সেই ব্যক্তি সেই সময়েই ভোটার কার্ড নিখোঁজের অভিযোগ থানায় জানিয়েছিলেন। পরিবর্তিতে নতুনভাবে ভোটার কার্ডও পেয়েছেন আলাউদ্দিন। কিন্তু তাঁরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জানতে পারেন, তাঁর পরিবারের সঙ্গে জড়িত হয়ে রয়েছে বাদশা আলমের নাম। সঙ্গে সঙ্গে বাদশা আলমের কাছ থেকে ভোটার কার্ডটি ছিনিয়ে নেয়। এবং স্থানীয় বিএলও অফিসারকে সেই ভোট বাতিলের আবেদন জানায়। সেই মতো সেই ভোটার কার্ডটি বাতিল হলেও ফের একেই পরিচয়ে আবার নতুন একটি ভোটার কার্ড বানিয়েছে বাদশা আলম। যা তার কাছে থেকে পাওয়া গিয়েছে। আলাউদ্দিন জানান, “আমার হারিয়ে যাওয়া ভোটার কার্ডটি ব্যবহার করেই হয়তো সে সমস্ত নথিপত্র তৈরি করেছে। আমি এ নিয়ে দ্রুত আইনের দ্বারস্থ হব। এবং পুলিশ প্রশসনের কাছেও আবেদন জানাব বিষয়টি দেখার। কারণ বাদশা আলম আমার ছেলে নয়। সে একজন বাংলাদেশি।”
যদিও সেদিনের ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে বাদশা আলম। দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে মেখলিগঞ্জের পানিশালা এলাকায় সে ঘাঁটি জমায়। এবং নিজতরফ এলাকার এক বিবাহিত মহিলার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায়। সেই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই গণপিটুনি খেয়ে ফের আরও একবার বেপাত্তা সেই বাদশা। এদিকে বাদশার খোঁজ নিয়ে নাতিকে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বাদশার শাশুড়ি। অপর দিকে বাদশাকে গ্রেফাতার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাদশার পরিচয়পত্রে উল্লেখিত ‘বাবা’-র। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাদশার খোঁজ কি পাবে পুলিশ? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।





