Partha-Arpita: আঁখো হি আঁখো মে ইশারা হো গ্যায়া…ভরা এজলাসে ‘প্রেমালাপ’ অপার

Partha-Arpita: চলতে থাকে সওয়াল-জবাব, মন দিয়ে শুনছিলেন বিচারক। কিন্তু সে সব ভ্রূক্ষেপ কই! একে অপরের সঙ্গে ইশারায় মেতে গেলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর বান্ধবী।

Partha-Arpita: আঁখো হি আঁখো মে ইশারা হো গ্যায়া…ভরা এজলাসে 'প্রেমালাপ' অপার
অলংকরণ-অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 14, 2023 | 7:44 PM

কলকাতা: রাত বাড়লে লং ড্রাইভ, শুনশান ধাবায় মুখোমুখি বসার দিন আজ অতীত। একসঙ্গে পছন্দের মেনু বেছে নেওয়াও হয় না আর। গারদে বসে রাত-গোনা আর ‘কোর্টের ডেট’ এলেই মুখ দেখানো। এভাবেই কেটেছে ৮ টা মাস। একটা আস্ত বসন্তও হয়ত এভাবেই কেটে যেত! কিন্তু জেলের অন্দরে আচমকা বসন্তের বাতাস। ফাল্গুনের শেষ লগ্নে আবার দেখা হল দুজনের। না, সামনা-সামনি নয়, ভার্চুয়াল মাধ্যমের পর্দাতেই একে অপরের চোখে চোখ রাখলেন তাঁরা। বিশেষ সিবিআই আদালতের ঘণ্টা দুয়েকের শুনানি বলে দিল ভাটা পড়েনি ‘অপা’র বন্ধুত্বে। কোর্টরুমে যখন যুক্তিতে শান দিচ্ছেন আইনজীবীরা, সওয়াল-জবাবে বাড়ছে উত্তাপ, তখন একে অপরেই মগ্ন রইলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee)।

গ্রেফতারির দীর্ঘ ৮ মাস পর দেখা দুজনের। রেস্তোরাঁর বদলে হোক না ‘গুগল মিট’, দুজনের চোখ-মুখ থেকে খুশির ঝলক যেন সরছেই না! ৪৪ ইঞ্চি স্ক্রিনে একদিকে দেখা যাচ্ছে আদালত কক্ষের অন্দর, অপর দিকে দুটি পৃথক উইন্ডোতে পার্থ ও অর্পিতা। চলতে থাকে সওয়াল-জবাব, মন দিয়ে শুনছিলেন বিচারক। কিন্তু সে সব ভ্রূক্ষেপ কই! একে অপরের সঙ্গে ইশারায় মেতে গেলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর বান্ধবী। কুশল বিনিময় থেকে খুনসুটি, চলল আরও অনেক কিছু। ‘অপা’র কীর্তি দেখল ভরা কোর্টরুম। আদালত সূত্রে খবর, পার্থরা নিজেদের দেখতে পাচ্ছিলেন ঠিকই, তবে তাঁরা হয়ত জানতেন না যে তাঁদেরও দেখা যাচ্ছে।

নিয়োগ দুর্নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এক পক্ষে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আর প্রতিপক্ষে কেউ বিধায়ক, কেই প্রাক্তন মন্ত্রী। টানটান পরিস্থিতিতেই দুপুর ২ টো ৩০ মিনিট নাগাদ কোর্টরুমের ৪৪ ইঞ্চি এলইডি (LED) স্ক্রিনে ভেসে উঠল পার্থ ও অর্পিতার মুখ।

শুরুতেই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসি। শরীর ঠিক আছে তো? একে অপরের খোঁজ নিলেন ইশারায়। তারপর ২ টো ৫৪ নাগাদ পার্থ ইশারা করে জানতে চান অর্পিতা খেয়েছেন কি না। পার্থর কাছেও এ কথা জানতে চান বান্ধবী।

কোর্টরুমের কথা শোনা যাচ্ছে কি? এই নিয়েও দুজনের ইশারায় কথোপথন চলে। দুজনেই ইশারায় বোঝান, তাঁরা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না। সওয়াল-জবাব যখন শোনা যাচ্ছে না, তখন খুনসুটিতে মন দেন বছর ৭০-এর পার্থ। অর্পিতার দিকে তাকিয়ে জিভ বের করে বিশেষ ভঙ্গি করতে দেখা গেল, দেখলেন কোর্টরুমে উপস্থিত সবাই। হেসে ফেললেন অর্পিতা। শুনানি চলাকালীন পার্থ নিজের বুকে হাত রেখে অর্পিতাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন বুকে কোনও সমস্যা রয়েছে তাঁর।

এতদিন পর দেখা, কেমন লাগছে? শুনতে তো ইচ্ছা করেই! ঘড়িতে তখন ৩টে ৮ মিনিট। শুনানি চলছে পুরোদমে। নিজের পরণের নীল রঙের ফতুয়া হাত দিয়ে দেখান পার্থ। অর্পিতাও মাথা নেড়ে বোঝান ফতুয়াটি ভাল। অর্পিতার পরণে ছিল হলুদ রঙের কুর্তি। হাসি যেন থামছিলই না তাঁদের।

মিনিট সাতেক পর হঠাৎই পার্থর স্ক্রিন অন্ধকার। ভুরু কুঁচকে যায় অর্পিতার। উদ্বিগ্ন দেখায় তাঁকে। কিছু সময়ের মধ্যেই পার্থ স্ক্রিনে ফিরলে মেলে স্বস্তি। কী হয়েছিল? অর্পিতা কারণ জানতে চাইলে পার্থ ইশারায় বোঝান, তিনি চা খাচ্ছিলেন। গোটা শুনানি পর্বে অর্পিতা একাধিকবার স্ক্রিনের সামনের দিকে এগিয়ে এসে কিছু দেখার চেষ্টা করছিলেন।

মাঝে মাঝে নিজের চুলের গোছা সামনের দিকে নিয়ে আসছিলেন অর্পিতা, একবার পিঠের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন। তা দেখে পার্থর ঠোঁটে আবার হাসি। উল্টোদিকে অর্পিতার চোখেও প্রশংসার ঝলক। ফ্রেঞ্চ কাট দাড়িতে বেশ মানিয়েছে!

ঘড়িতে তখন ৩ টে ৩০। অর্পিতাকে নিজের ঠোঁটের দুদিকে আঙুল রেখে কিছু ইশারায় কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। তার ঠিক মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আদালতে কথা বলতে শুরু করেন মানিক ভট্টাচার্য। তখন তাঁরা দুজনে কোর্টের দিকে মন দেন। বিচারকের সামনে নিজেদের বক্তব্য শেষ করার পর শুনানি যখন শেষ হচ্ছে তখন পার্থ অর্পিতাকে লক্ষ্য করে ‘থাম্বস আপ’ দেখান। আবার কবে দেখা হবে কে জানে!

২২ জুলাই, ২০২২-এর সন্ধ্যায় যখন ডায়মন্ড সিটি সাউথের ফ্ল্যাট থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার পাহাড়ের ছবি সামনে আসতে শুরু করেছে, তখনও রাজ্যের বহু মানুষের কাছেই প্রশ্ন ছিল অর্পিতা কে? সেই উত্তর মিলতে না মিলতেই পরের দিন সকালে গ্রেফতার হয়ে যান তিনি। তারপর তদন্তের হাত ধরে ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে ‘অপা’র কাহিনি। দীর্ঘ ছন্দপতনের পর আবার আজ যেন তারই ঝলক দেখল আদালত।