ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা: ‘সাংবিধানিক জয়’ বলছেন দিলীপ-শমীকরা, NHRC’র রিপোর্ট নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন কুণালদের

Post Poll Violence: প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে এই মামলার তদন্তের দাবি তুলে আসছিলেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা।

ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা: 'সাংবিধানিক জয়' বলছেন দিলীপ-শমীকরা, NHRC'র রিপোর্ট নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন কুণালদের
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 19, 2021 | 3:46 PM

কলকাতা: বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। বৃহস্পতিবারই এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তিন সদস্যর সিটও গঠিত হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশে ‘স্বস্তি’ বিজেপির অন্দরে। প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে এই মামলার তদন্তের দাবি তুলে আসছিলেন দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারীরা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, এই নির্দেশে সংবিধানের জয় হয়েছে। তবে তৃণমূল যে এই নির্দেশ নিয়ে পরবর্তী কোনও পদক্ষেপ করতে চলেছে তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন সৌগত রায়, কুণাল ঘোষরা। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তো পক্ষপাত দুষ্ট। আইনত কী করা যায় তা শীর্ষ নেতৃত্ব দেখছে।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম, হিংসা হচ্ছে। এনএইচআরসি-র রিপোর্টে কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই, সেটা আদালতের রায়েই প্রমাণিত হল। এবার নির্যাতিত, নিগৃহীতরা বিচার পাবেন।” অন্যদিকে শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “ফল ঘোষণার পর থেকেই, তখনও নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা তৃণমূল পায়নি, অত্যাচার শুরু হয়েছে। তালিবানি কায়দায় অত্যাচার চলছে। বাম আমলের ৩৪ বছরের অত্যাচারকে ভুলিয়ে দিল তৃণমূলের এবারের অত্যাচার। আমাদের আট জন কর্মীকে ভোটের ফল প্রকাশ হতেই খুন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৫১ জন বিজেপি কর্মী খুন হয়েছে।”

শমীকের দাবি, তৃণমূলের অত্যাচারে বিজেপি কর্মীরা পর্যুদস্ত। কাউকে মাথা কামিয়ে, কাউকে আবার মুচলেকা দিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে। এখনও তাঁদের বহু কর্মী ঘরছাড়া। শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “সংবিধানের জয় হয়েছে আজকে। যেসব মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে, তারা আজ বিচার পেল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট আংশিক রিপোর্ট। অত্যাচারের পরিধি আরও ভয়াবহ। রাজ্যে বিজেপি কর্মী বা বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানুষজনকে যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, সেখানে এমন নির্দেশকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এই নির্দেশে কোনও রাজনীতি নেই। প্রত্যেকটি অত্যাচারিত মানুষ যাতে বিচার পান এখন আমাদের সেটাই দেখার।”

টুইটারে হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক হিংসার ল্যাবেরটরি হয়ে গিয়েছে বাংলা। আজকের নির্দেশ ঐতিহাসিক। এ রাজ্য যে মানবাধিকার সংরক্ষণে কতটা অক্ষম তা এদিনের রায়ে স্পষ্ট। আমরা আইন ব্যবস্থার উপর সবসময় ভরসা রেখে এসেছি। সংবিধান ও গণতন্ত্রের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী স্তম্ভ এই আইন ব্যবস্থা।’ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও। গণতন্ত্রে হিংসা-মারামারির অধিকার কারও নেই, বলেন অনুরাগ।

তবে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে। সেখানে বার বার যদি সিবিআই চলে আসে, সেটা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে। কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়ে তদন্ত নিয়ে আগেই তো আমরা আমাদের আপত্তি জানিয়েছি। এখন রাজ্য সরকার এটা বিচার বিবেচনা করবে। দরকার মনে করলে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে অ্যাপিলে যাবে। বিজেপি রাজনৈতিক খেলায় হেরে গিয়ে। জনগণের কোর্টে হেরে হাইকোর্টে যাচ্ছে। কী করার আছে!”

অন্যদিকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “আমাদের দল গোটা বিষয়টা খতিয়ে দেখছে। যথাযথ সময়ে পদক্ষেপ করবে। এনএইচআরসি’র রিপোর্ট তো চূড়ান্ত ভাবে রাজনৈতিক। বিরোধিতা করার জায়গা অবশ্যই আছে। এখন বিজেপির নেতারা যা বলছেন, তাঁরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন এনএইচআরসি দিয়ে। ভোটের আগে কারা বলেছিলেন অনাথ করে দেব? লাশ ফেলে দেব? ৬ ইঞ্চি কমিয়ে দেব? কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়ে চিত্রনাট্য সাজিয়েছে। আসলে বিজেপি নিজেদের শাখা সংগঠনকে ব্যবহার করেছে। এনএইচআরসির রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

কুণাল ঘোষের কথায়, “ভোটের সময় কী হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করুন। কেন রাজ্য তার দায় নেবে? আদি বনাম তৎকাল বিজেপির লড়াই হয়েছে। কমিশন যোগ্য পুলিশ অফিসারদের সরিয়ে দিয়েছে। মাদ্রাজ হাইকোর্ট বলছে খাঁচা বন্দি তোতা আর কলকাতা হাইকোর্ট বলছে তদন্তের কথা। এক একটা হাইকোর্টের এক এক রকম মূল্যায়ণ।”

তবে কলকাতা হাইকোর্টের রায় নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “ডিজির রিপোর্ট দেখেই তো বোঝা যায় রাজ্যের হালটা কী। আদালত নির্দেশ দিয়েছে সিবিআইয়ের পাশাপাশি সিটও তদন্ত করবে। সিট চলবে আদালতের পর্যবেক্ষণে। আমরা চাই সিবিআইকেও আদালতের পর্যবেক্ষণে চলতে হবে। সিবিআইয়ের প্রতিও মানুষের বিশ্বাস ক্রমশ কমছে।” আরও পড়ুন: এবার ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র তদন্তে সিবিআই, মামলার প্রেক্ষাপট থেকে অগ্রগতি দেখে নিন ঝলকে